সংস্কৃতিবান্ধব নয় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

ছবি: দীপন নন্দী

রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের লোহারপুল এলাকায় গেলেই দৃষ্টি পড়তে বাধ্য সুদৃশ্য একটি ভবনের দিকে। ভবনের গায়ে লেখা—জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

ছবি: দীপন নন্দী

পুরান ঢাকার বিশাল সংখ্যক নাগরিকের সংস্কৃতিচর্চার জন্যে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠার সাড়ে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সংস্কৃতিবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি মঞ্চটি। ফলে মাসের বেশিরভাগ সময় ফাঁকা পড়ে থাকে এর ৪০০ আসনের মিলনায়তন।

২০০৮ সালের ২২ মার্চ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে যাত্রা শুরু হয় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের। তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ৯ দিনের নাট্যোৎসবের আয়োজন করে। এরপরও আরও কয়েকটি নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো সংগঠনের ক্ষেত্রে প্রতি বেলার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। অন্যান্য সংগঠনের জন্যে শুক্রবার ছাড়া অন্যদিনের ভাড়া সর্বসাকুল্যে প্রতি বেলা ৮ হাজার টাকা এবং শুক্রবার প্রতি বেলা ভাড়া ১২ হাজার টাকা।

তবে এর সঙ্গে অন্যান্য চার্জ থাকায় ভাড়া প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা বেড়ে যায়।

ঝাঁকজমকভাবে যাত্রা শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্ণ হতে থাকে জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মূল ধারার নাট্যদলগুলো পুরান ঢাকার এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নাট্য মঞ্চায়নে আগ্রহী হয়নি।

সংস্কৃতিকর্মীদের বক্তব্য, সংস্কৃতিচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা আগ্রহী নন। সে সঙ্গে কেন্দ্রের মিলনায়তনের উচ্চ ভাড়াও সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করেন তারা।

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত আগস্টে একটি, সেপ্টেম্বরে ৫টি ও অক্টোবরে ৭টি নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাট্যদলগুলো পুরান ঢাকার।

গত সোমবার সকালে জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো ভিড় নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একজন দ্য ডেইলি স্টারকে জানালেন, কাউন্সিলর সাহেব আসেন নাই বলে এখনও লোক আসে নাই।

তার কথায় আরও জানা গেল, কেন্দ্রের নিচতলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদ উল্লাহ মিনুর কার্যালয়।

কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আজাদ মিলনায়তন দেখতে সাহায্য করলেন। তার সঙ্গে কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় উঠতেই নজরে পড়ে বিশাল প্যাসেজ। তালা খুলে দিতেই নজরে আসে ৪০০ আসনের মিলনায়তন। দর্শকসারিতে থাকা চেয়ারগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সে সঙ্গে মিলনায়তন নিয়মিত ব্যবহার না করায় সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।

সেখানে নিয়মিত অনুষ্ঠান হয় না বলে জানান আজাদ। একই তথ্য জানান কেন্দ্রের পাশে থাকা এক দোকানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, 'এখানে তো ভালো নাটক হয় না। শুক্র ও শনিবার মাঝে মধ্যে নাটক হয়। কিন্তু, সেগুলো ভালো লাগে না। আর কাউন্সিলরের কার্যালয় হওয়ায় সারাদিনই এখানে রাজনৈতিক লোকজনের ভিড় লেগে থাকে।'

জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মরত একজন বলেন, 'এখানে ভাড়া অনেক। শুরুর দিকে ৫ হাজার টাকা নেওয়া হলেও, এখন নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকার বেশি। সে সঙ্গে এখানকার মিলনায়তনের ১৮টি এসির মধ্যে ১৪টিই নষ্ট। আলো, শব্দ প্রক্ষেপণ ব্যবস্থার অবস্থাও ভালো নয়। বসার চেয়ারের অবস্থাও খারাপ।'

এখানে নাট্য মঞ্চায়ন না করার বিষয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুরুতে ভাড়া কম ছিল। পরে হঠাৎ করে সিটি করপোরেশন ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এটা আমাদের অনেক দলের নাগালের বাইরে। পাশাপাশি এখানকার পরিবেশ নাটকের উপযোগী নয়। এসি নষ্ট, মেকআপ রুম নষ্ট, বসার সিটের অবস্থাও খারাপ। সুস্থ পরিবেশ না হলে নাটক মঞ্চায়ন করা সম্ভব না।'

এ বিষয়ে জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক অমরেশ মণ্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাটক হোক না হোক, প্রতি মাসে আমাদের অনেক খরচ হয়। অন্যান্য মঞ্চ থেকে এখানে ভাড়াও বেশি। সে কারণে নাট্যদলগুলো এখানে অনুষ্ঠান করতে আগ্রহী হয় না।'

এসি নষ্টের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা এগুলো ঠিক করার জন্যে সিটি করপোরেশনকে বলেছি। আশা করছি, দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Multinational executives urge govt to ensure licensing, tax consistency

Yunus urged the executives to collaborate with the government to promote Bangladesh to potential investors and ensure business opportunities expanded in the country.

25m ago