গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাক পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র ও সুশাসনের কথা বলে বিভিন্ন দেশকে নানা ইস্যুতে চাপে রাখতে চাওয়াই আমেরিকার রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, তাই গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাক পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
আজ শুক্রবার সকালে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন কার্গো স্টেশন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় আগামী গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ ডাক পাবে কি না তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'আমেরিকা বিভিন্ন দেশকে কখনো গণতন্ত্রের কথা বলে, কখনো সুশাসনের কথা বলে, কখনো সন্ত্রাসবাদের কথা বলে চাপে রাখতে চায়, সেটাই তাদের রাজনীতি। তাই গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাক পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।'
তিনি বলেন, 'এসব নিয়ে চিন্তা না করে নিজেরা কীভাবে ভালো করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। যদি আমাদের দুর্বলতা থাকে, সেটা আমরা দূর করার চেষ্টা করব।'
ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আগামীতে নির্বাচনে একটি লোকও যাতে মারা না যায়, সে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।'
এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে, উন্নতি করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এখান থেকে বিভিন্ন দেশে সরাসরি ফ্লাইট যাবে। তখন ভারতের লোকজনও এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।'
সাংবাদিকরা সিলেটের সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন। যাতে ভারতের নাগরিকরা এ চেকপোস্ট দিয়ে সহজেই সিলেটের সীমান্তবর্তী সাদাপাথরসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, '(ভোলাগঞ্জে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের বিষয়ে) আমি ঠিক জানি না। আমরা এই (ওসমানী) বিমানবন্দর অনেক বড় করছি। উদ্দেশ্য যে শুধু সিলেটের লোকজন বিদেশে যাবেন, সেটা নয়। (ভারতের) সেভেন সিস্টার্সের লোকেরা, করিমগঞ্জ ও শিলংয়ের লোকেরা এখানে এসে এটা ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে ৮টি বোর্ডিং ব্রিজ হবে। তখন এখান থেকে সরাসরি ফ্লাইট যাবে। এখন শুধুমাত্র লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে সরাসরি ফ্লাইট যায়, যা কোভিডের কারণে বন্ধ ছিল, এখন আবার শুরু হবে। (কাজ শেষ হলে) এখান থেকে বিভিন্ন দেশে সরাসরি ফ্লাইট যাবে। তখন আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের লোকেরা এখানে এসে বিদেশে যাবেন।'
কার্গো টার্মিনাল ঘুরে দেখার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'কার্গো টার্মিনালের কাজ মোটামুটি শেষের দিকে, মূল মেশিনটা বসে গেছে। এটা (মেশিন) ডিটেকশন (শনাক্ত) করবে যে কার্গোতে কী মালামাল আছে। এটার সবচেয়ে সুবিধা হলো, একসঙ্গে অনেক কার্গো দিতে পারবেন। কিন্তু কার্গোতে কী আছে, তা প্রত্যেকটা আপনি ডিটেকশন করতে পারবেন। আমাদের দেশে এ ধরনের অনেকগুলো কার্গো কেনা হয়েছে। আরও ৬টি ঢাকার জন্য কেনা হয়েছে। শুধুমাত্র আমাদের সিলেটেরটা ইনস্টল (বসানো) হয়েছে। সুতরাং এটা একটা ভালো খবর।'
ড. মোমেন বলেন, 'বর্তমানে সিলেট থেকে যারা কার্গো পাঠান, তারা প্রথমে ঢাকায় নেন। সেখানে নিয়ে (মেশিনে চেক করে) তারপর কার্গো বিদেশে পাঠান। এতে অনেক খরচ বাড়ে। এখান (সিলেট) থেকে কার্গো বিদেশে গেলে পাঠানোর খরচ (শিপমেন্ট খরচ) কমে আসবে।'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'আমাদের যথেষ্ট সম্পদ আছে। বিভিন্ন রকমের শাকসবজি আছে। এই সিলেটে আনারসসহ অনেক কিছুই হয়, যার বিদেশে মার্কেট ভালো। এজন্য আগামীতে আমরা এদিকে বেশ নজর দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিছু কার্গো ফ্রেইট (মালামাল বহনকারী বিমান) কিনবেন। আমাদের কার্গো ফ্লাইট নাই। আমরা এখন সাধারণ বিমানের মাধ্যমে পাঠাই। আগামীতে যদি কার্গো ফ্লাইট হয়, তাহলে আমরা অনেক বেশি মালামাল বিদেশে পাঠাতে পারব। সেজন্য নতুন কার্গো ফ্রেইট কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।'
ওসমানী বিমানবন্দর থেকে কার্গো পাঠাতে নিরাপত্তার দিকে যেন নজর রাখা হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে ১০০ টনের বেশি মালামাল রাখা যাবে বলেও জানান তিনি।
এসময় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, ওসমানী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Comments