সেই তালগোল পাকানোই তো রয়ে গেল সব

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের নানান সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে কিছু সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজনও। পাকিস্তানের বিপক্ষে টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব দিয়ে তাকে করা হয় টিম ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু এই সিরিজেও দেখা গেল অদ্ভুতুড়ে সব সিদ্ধান্ত, নেতিবাচক অ্যাপ্রোচ। যার আসলে যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

সাইফকে নিয়ে নীরিক্ষা 

টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণাতেই প্রথমে আসে চমক। ঘরোয়া ক্রিকেটেও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে খুব বেশি আলোচনায় থাকেন না সাইফ হাসান। তাকে হুট করে নিয়ে আসা হয় টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। 

তরুণ এই ওপেনারের টেকনিক এমনিতেই প্রশ্নবিদ্ধ, তার ব্যাটিং ঘরানার সঙ্গেও টি-টোয়েন্টি ঠিক জুতসই না। সিরিজের আগে সুজন জানিয়েছিলেন, নতুন করে ডাকা তরুণদের দেওয়া হবে পর্যাপ্ত সুযোগ। কিন্তু সাইফের বেলায় দুই ম্যাচ পরই ধৈর্য্যচ্যুতি হয় তাদের। 

প্রথম ম্যাচে ৮ বলে ১ রান করে স্লিপে ক্যাচ দেন সাইফ। পরের ম্যাচে প্রথম বলেই ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তৃতীয় ম্যাচের আগেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে টেস্ট দলের অনুশীলনে

মাঝরাতে ডেকেও পারভেজ হোসেন ইমনকে না খেলানো

লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবালরা না থাকলে টি-টোয়েন্টি ওপেনিংয়ে যে নামটি আসবে প্রথমেই সেই পারভেজ হোসেন ইমন শুরুতে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে বিস্ময়করভাবে ছিলেন উপেক্ষিত। কিন্তু সাইফকে নিয়ে নীরিক্ষা চালানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচের দিন রাতেই শেষ ম্যাচের জন্য ডাকা হয় ইমনকে। 

মাঝরাতে তড়িঘড়ি করে এই ওপেনারের সঙ্গে দলে নেওয়া হয় পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিকেও। অনুমান করা যাচ্ছিল নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে হয়ত বাজিয়ে দেখা হবে তাদের। সাইফের নীরিক্ষার ভুল থেকে বেরিয়ে হয়ত নতুন চিন্তায় শুরু হবে হাঁটা। 

কিন্তু সোমবার শেষ ম্যাচের একাদশে দেখা গেল আরেক বিস্ময়। জরুরি তলবে কেবল এক ম্যাচের জন্য দলে এলেও একাদশে ঠাঁই হয়নি ইমনের। তার বদলে রাখা হয় শামীম পাটোয়ারিকে। ইমনকে খেলানো না হলে এক ম্যাচের জন্য মাঝরাতে দলে যুক্ত করা হলো কেন? শুধু মাত্র এক ম্যাচের জন্য ১৬ জনের স্কোয়াডের কি অর্থ বহন করে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ দুই ম্যাচ তো আবার বাংলাদেশ খেলে ফেলল ১৩ জনের দল নিয়েই!

খেলায় নেই টি-টোয়েন্টি মেজাজ, টি-টোয়েন্টির চাহিদা না মিটলেও নাঈমেই ভরসা

নতুন দিন শুরু করতে হলে চিন্তাও হতে হবে নতুন। পুরনো ধ্যান ধারনা ঝেড়ে ফেলে নিতে হবে সতেজ চিন্তা, আনতে হবে সাহস। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং দেখলে পাওয়া যাবে বিপরীত চিত্র। এখানে সবাই ধরে খেলতেই পছন্দ করেন। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কি বার্তা দেওয়া হয় সেই প্রশ্ন এখন জোরালো হওয়ার সময় এসেছে। টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লে যেখানে দ্রুত রান আনার সবচেয়ে আদর্শ সময়, সেখানে বাংলাদেশের ওপেনাররা থাকেন কুঁকড়ে। মাত্র ১০৫ স্ট্রাইকরেটের নাঈম শেখকেই বিবেচনা করা হচ্ছে মূল ওপেনার হিসেবে। এই সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে তার সঙ্গী নামানো হয় সাইফকে। দুজনের খেলার ধরণের একদম বিপরীত টি-টোয়েন্টি সংস্করণ। 

শেষ ম্যাচে নাঈম ৪৭ রান করলেও খেলেছেন ৫০ বল। একজন ওপেনার হয়েও তিনি পাওয়ার প্লেতে কোন বাউন্ডারিই মারতে পারেননি। প্রথম বাউন্ডারি মারেন দশম ওভারে। রয়েসয়ে খেলা, উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার সঙ্গে টি-টোয়েন্টির সম্পর্ক কি এটা টিম ম্যানেজমেন্ট না বুঝলে বুঝবে আসলে কে? শেষ ম্যাচে নাঈমকে বসিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে পারভেজ ইমনকে খেলিয়ে নতুন কোন বার্তা দেওয়া যেত। দেখানো যেত সাহস। যেটা এই দলের সবচেয়ে প্রয়োজন। কিন্তু সতর্ক পথে টিম ম্যানেজমেন্ট হাঁটছে অন্য দশকে। ফল না আসার পাশাপাশি এই দলের খেলা মানুষের কাছে হয়ে গেছে বিরক্তিকর উপকরণ। নেতিবাচক এই অ্যাপ্রোচ বদলের চিন্তা আসবে তো টিম ম্যানেজমেন্ট থেকেই। খেলার ধরণ ঠিক করে খেলোয়াড় বাছাই নাকি খেলোয়াড় বেছে নিয়ে ধরণ ঠিক করা- এই হিসেব নিকেশের ধারেকাছেও ঘুরছে না তাদের চিন্তা।  

ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বি কেন বারবার উপেক্ষিত

২০১৯ সালে ইয়াসির প্রথম ডাক পান জাতীয় দলে। এরপরে দলে এসে টেস্ট অভিষেক হয়েছে তিনজনের, ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে ছয়জনের। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছে দশজনের। কিন্তু এতদিন ধরে তিন সংস্করণের বিভিন্ন স্কোয়াডে থেকেও এতগুলো ম্যাচের একটিতেও সুযোগ মেলেনি ইয়াসিরের।

এই ডানহাতি তরুণ ব্যাটারের নিজেকে নিয়েই তো সংশয় তৈরি হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে এতগুলো ম্যাচের একটিতেও কি ইয়াসিরকে সুযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি আসেনি? পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুশফিকুর রহিমের ব্যাকআপ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল তাকে। কিন্তু বেঞ্চ গরম করেই সময় কেটেছে তার। নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে ইয়াসিরকে কেন সুযোগ দেওয়া গেল না? আর কবে তাকে খেলানো হবে?

তাসকিনকে নিয়ে অহেতুক ঝুঁকি, বিপদে টেস্ট দল!

চলতি বছর সব সংস্করণেই বাংলাদেশের মূল বোলার তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের ঝাঁজ বাংলাদেশকে দেখিয়েছে আশা। একজন পেসার দারুণ করলে তাকে চোটমুক্ত রেখে ম্যানেজ করে খেলানো হচ্ছে যেকোনো টিম ম্যানেজমেন্টের প্রাথমিক কাজ। কোন ম্যাচ তাসকিনের খেলা উচিত, কোন ম্যাচে দরকার বিশ্রাম এসব ঠিক করার কাজ তাদের। কিন্তু সেটা হলো কই?

সিরিজ হেরে যাওয়ার পর শেষ ম্যাচে কি বিশ্রাম দেওয়া যেত না তাসকিনকে? সামনেই পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র। টেস্টে তাসকিনই বাংলাদেশের মূল বোলিং অস্ত্র। অথচ নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচ খেলতে গিয়ে তার হাতে লাগল চারটি সেলাই। 

প্রথম টেস্টে ছিটকে গেলেন তো বটেই তার দ্বিতীয় টেস্টে খেলার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এতে করে টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনার ঘাটতিই বের হয়ে আসল। 

মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম চোটের কারণে ছিটকে যাওয়াতে তাসকিনকে খেলাতে হয়েছে এই যুক্তিও ধোপে টেকে না। কারণ স্কোয়াডে তো ছিলেন কামরুলও। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভাল পারফর্ম করেছেন তিনি। তাকে অনায়াসে খেলিয়ে তাসকিনকে বিশ্রাম দেওয়া যেত। টেস্টের জন্য ফিট ও সতেজ রাখা যেত। উলটো তাসকিনকে ফেলে দেওয়া হলো চোটে!

সিদ্ধান্ত আর কাজে বিস্তর গোলমাল পাওয়া গেলেও কথাবার্তায় কিন্তু মেলে ভিন্ন ছবি। প্রতি সিরিজের আগেই চলে নানান স্বপ্নের ফানুস উড়ানো। এই সিরিজের আগেও সুজনের কন্ঠে বেরিয়েছে তা। তবে ঘুরেফিরে সিরিজ শেষে আবিষ্কার হয় বাস্তবতার সঙ্গে বিশাল ফারাক। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

US starts war with Iran bombing key nuclear sites

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

1h ago