টি-টোয়েন্টিতে ওয়ানডের ব্যাটিং

naim sheikh
৫০ বলে ৪৭ রান করেন নাঈম শেখ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

একজন ওপেনার পাওয়ার প্লেতে মারতে পারেননি একটিও বাউন্ডারি। প্রথম বাউন্ডারি মারতে পারেন ইনিংসের দশম ওভারে গিয়ে। ইনিংসের প্রায় অর্ধেক বল খেলেও করতে পারেননি ফিফটি। ১২০ বলের খেলা টি-টোয়েন্টি। সেখানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিনজন মিলে বল খেলছেন ৯৪টি। তাতে তারা তুলতে পেরেছেন ৮৯ রান! বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে বোঝা দায় খেলা কি টি-টোয়েন্টি না ওয়ানডে!

আরও একবার টি-টোয়েন্টি খেলার ধরনেই গোলমাল করে বাংলাদেশ। সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে পুরো ইনিংসে বাংলাদেশ ডট বলই খেলছে ৫৮টি। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক বলই ডট! অথচ আগের দুই ম্যাচের থেকে এদিনই পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ ছিল দুর্বল। অভিষিক্ত শাহনাওয়াজ দাহানি, লেগ স্পিনার উসমান কাদিররা আলগা বল দিয়েছেন অনেক।

হ্যাঁ, মিরপুরের উইকেটে বিস্ফোরক ব্যাটিং খুব সহজ নয়। তবে বছরের এই সময়টায় দুপুরের দিকেই মিরপুরের উইকেট ব্যাট করার জন্য থাকে বেশি সহায়ক। সময় বাড়তে উইকেটের মন্থরতায় সুবিধা পেতে থাকেন বোলাররা। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি যখন সুবিধা, টস জিতে তখন ব্যাট করার সুযোগ মিলেছে তিন ম্যাচেই।

কিন্তু সে সুবিধাটা কাজে লাগল কোথায়? শেষ টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে রান এসেছে ৩২। এর ২০ রানই আবার এসেছে তিনে নামা শামীম পাটোয়ারীর ব্যাটে। ওপেনার নাঈম শেখ পাওয়ার প্লেতে মারতে পারেননি একটিও বাউন্ডারি!

একজন ওপেনার হয়েও তিনি প্রথম বাউন্ডারি পান দশম ওভারে গিয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নেতিবাচক অ্যাপ্রোচ নিয়ে নেমে তিনি খেলে ফেলেছেন ৩২ ম্যাচ। কিন্তু তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট কেবলই ১০৫.০২! আজকাল ওয়ানডেতেও অনেক ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১০০ ছাড়িয়ে যায়। আর শেষ ম্যাচে তো তিনি রান করেন ৯৪ স্ট্রাইক রেটে

পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ করে ১২৪ রান। তাতে সর্বোচ্চ ৪৭ নাঈমের। কিন্তু এইটুকু পরিসংখ্যান করতে পারে বিভ্রান্ত। এই ৪৭ রান করতে যে ইনিংসের ৫০টি বল খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।

লেগ স্পিনার উসমানের আলগা বল কাজে লাগিয়ে দশম ওভারে গিয়ে নাঈম পান প্রথম বাউন্ডারির দেখা। পরে মারেন আরও ২ ছক্কা। তবু ইনিংসের কোনো পর্যায়েই তার স্ট্রাইক রেট একশো পার হয়নি। ৫০ বলের মধ্যে ২২টি ডট খেলেছেন। পুরো দলের ৫৮ ডট বলের অধিকাংশই তার খেলা।

তিনে নামা শামীম চেষ্টা চালিয়েছেন দ্রুত রানের। আউট না হলে হয়ত পুষিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল। একই কথা খাটে আফিফ হোসেনের বেলাতেও। মন্থর শুরুটা পুষিয়ে দেওয়ার খানিক আগে বিদায় তার।

যিনি পুরোটা সময় ক্রিজে ছিলেন, সেই নাঈম পুষিয়ে দেওয়ার ধারেকাছেও যেতে পারেননি। ১৯তম ওভারে আউট হয়েছেন ফিফটি ছোঁয়ার আগেই। নাঈম অবশ্য ভালো উইকেটেও খেলেন একই ঘরানার ক্রিকেট। সবশেষ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছিল আদর্শ ব্যাটিং উইকেট। সেখানে ৫২ বল খেলেও তার রান ৬২। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার চারিথা আসালাঙ্কা ৪৯ বলেই করেছিলেন ৮০ রান। চলতি বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে  ১৬ ওভারে ১৭১ রান তাড়া করে এক পর্যায়ে সৌম্য সরকারের ঝড়ে জেতার অবস্থায় চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সৌম্যের (২৭ বলে ৫১) বিপরীতে ধীর গতির ব্যাটিংয়ে দলকে ডোবান নাঈম। ফ্ল্যাট উইকেটে ৩৫ বল খেলে তিনি করতে পারেন কেবল ৩৮ রান। ওই ম্যাচ আর জেতা হয়নি বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের শেষ টি-টোয়েন্টিতে বেলা গড়াতে উইকেটের আচরণ বদলেছে। সন্ধ্যার দিকে বল স্কিড করেছে। অনায়াসে জেতার অবস্থা থেকে নাটকীয়ভাবে হোঁচট খেয়ে পাকিস্তান পড়ে বিপদে। দারুণ সুযোগ পেয়েও অবশ্য শেষ বলে গিয়ে আর জেতা হয়নি বাংলাদেশের।

কিন্তু টস জেতার সুবিধা নিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজের কোনোটিতেই বাংলাদেশ তুলতে পারেনি জুতসই পুঁজি। তাতে অর্ধেক শেষ হতেই ম্যাচের গতিপথও ঠিক হয়ে যায়।

বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের পর অনেক অদল বদল এনেও এই সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা বিশাল কিছু ছিল না। তবে প্রাপ্তির ঝুলিতে মিলেছে আরও কম। বিশেষ করে, টি-টোয়েন্টি নিয়ে চিন্তাধারাতেই দেখা গেছে বড় গলদ।

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

8h ago