১৫ বছরেও চালু হয়নি সেগুনবাগিচা কমিউনিটি সেন্টার

ছবি: দীপন নন্দী

সেগুনবাগিচা মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স। ৫ তলা ভবনটির প্রথম ২ তলায় কাঁচাবাজার, তৃতীয় তলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স ভবনটি মাল্টিপারপাস কাজে ব্যবহৃত হলেও, যে কারণে এটি নির্মিত হয়েছিল সেই কমিউনিটি সেন্টারটি আজও চালু হয়নি।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৫ বছর ধরে অব্যবহৃত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন দ্বিতল এই কমিউনিটি সেন্টারটি।

গত ৩ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তিউন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রকৌশল বিভাগ এটি সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে কমিউনিটি সেন্টারটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।'

এরপর পুরো একটি সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো কাজই শুরু হয়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে সেগুনবাগিচা কমিউনিটি সেন্টারের বিষয়ে বলা হয়েছে, গ্যাস সংযোগ না থাকায় চালু করা যাচ্ছে না। তবে ভেতরের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ।

দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় বেশিরভাগ ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে, টয়লেট ও বেসিনে ময়লা জমে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ভেতরের পুরো পরিবেশ ভীষণ নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে সেগুনবাগিচার মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সের নিচে দাঁড়াতেই কানে ভেসে এলো কাঁচাবাজারের দোকানিদের হাঁকডাক। কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করতেই নাকে এলো দুর্গন্ধ। নজরে পড়ে ভাঙা লিফটের দরজা। যদিও সেখানে নেই কোনো লিফট, শুধুমাত্র দরজা লাগিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। এটি পেরিয়ে ওপরে উঠলে তৃতীয় তলায় স্থানীয় ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়। ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় কমিউনিটি সেন্টার।

সরকার ঘোষিত গণটিকা কার্যক্রমের স্থান হওয়ায় চতুর্থ তলাটি বেশ পরিপাটি। তবে পঞ্চম তলার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। অবহেলা অযত্নে ভেঙে পড়েছে কনের বসার স্টেজ। নানা জায়গায় উঠে গেছে টাইলস।

গত বছর মেয়র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের থাকার স্থান হওয়ায় সেখানে কিছুটা সংস্কার করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে এটি কমপ্লেক্সের দায়িত্বে থাকা ২ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর থাকার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

২০০৬ সালে সেগুনবাগিচা মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সেখানে নেই গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুতের লাইন। পার্শ্ববর্তী কাঁচাবাজারের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এখানে এখনও লাগেনি লিফট। তবে লিফটের দরজা ঠিকই আছে। সেখানে পড়েছে মরিচা। এর চেয়েও অবাক করা বিষয় হলো, এই ১৫ বছরেও সেখানে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান হয়নি।

১৫ বছরেও কমিউনিটি সেন্টারটি চালু না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারাও এর বিষয়ে কিছুই জানেন না। স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান এম. সালাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই ভবনে তো কাঁচাবাজার আর কাউন্সিলরের কার্যালয় বলেই জানি। সেখানে যে কোনো কমিউনিটি সেন্টার আছে তা জানা ছিল না। আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'সেগুনবাগিচা এলাকায় অনেক মানুষের বসবাস। এখানকার বাসিন্দারা ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করে বাইরে কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করেন। যদি এলাকায় ভালো পরিবেশের কমিউনিটি সেন্টার থাকে, তাহলে তারা কম খরচে অনুষ্ঠান করতে পারবেন।'

সেগুনবাগিচা কমিউনিটি সেন্টারের অতিরিক্ত কেয়ারটেকার সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০০৬ সালে কমিউনিটি সেন্টারটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। যদিও কোনো অনুষ্ঠান এখানে হয়নি। কারণ, লিফট নাই, এসি নাই, এমনকি গ্যাস সংযোগও নাই। যার কারণে এখানে কেউ ভাড়া নিতে আসেন না।'

২০১৫ সাল থেকে এখানকার কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ রতন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। এটি চালু করতে আমি বহুবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে শুনেছি, দ্রুতই এর সংস্কার কাজ শুরু হবে।'

'এই কমিউনিটি সেন্টারটি চালু করতে না পারায় আমি এখানে নতুন একটি কমিউনিটি সেন্টার তৈরিরও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম। অর্থও ছাড় হয়েছিল। কিন্তু জায়গা না পাওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US starts war with Iran bombing key nuclear sites

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

1h ago