চসিক’র তদন্ত কমিটিও ফ্লাইওভারে কোনো ফাটল খুঁজে পায়নি
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র্যাম্প পিলার পরিদর্শনকালে তারা কোনো ফাটল খুঁজে পাননি।
তদন্ত কমিটির সদস্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফ্লাইওভারের র্যাম্প পিলারে কোনো ফাটল নেই কিংবা পিলারের কোনো সেটেলমেন্টও হয়নি।'
'এটি শুধু কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট, যা দূর থেকে দেখতে ফাটলের মতো মনে হয়', বলেন তিনি।
এই প্রকৌশলী বলেন, 'কোনো ফাটল না থাকায় আমরা শিগগির র্যাম্পটি খোলার জন্য চসিককে পরামর্শ দেব।'
চসিক'র নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিন-উল-ইসলাম বলেন, 'আমরা আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে আমাদের কোনো প্রতিবেদন দেননি।'
চসিক'র তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য হলেন চুয়েটের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান।
ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের র্যাম্প পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছিল বলে গত মঙ্গলবার সকালে দাবি করেছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।
কিন্তু সন্ধ্যা গড়াতেই সেটিকে ফাটল নয় বরং গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন চউক'র নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মো. মাহফুজুর রহমান।
র্যাম্প নির্মাণের কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (ডিপিএম) বিশেষজ্ঞ দল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরেরদিন সেটিকে ফাটল নয় বলে দাবি করে।
এর পরেরদিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন র্যাম্পের পিলারে ফাটলের কারণ উদঘাটন করতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে প্রতিনিধি চেয়ে চিঠি পাঠায়।
অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভারের বিভাজন ভেঙে র্যাম্প সংযুক্ত করার কারণে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১০ সালে চউক এই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করে। ফ্লাইওভারের মূল নকশায় র্যাম্প ও লুপ থাকলেও চউক তা না করেই নির্মাণকাজ শেষ করে বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদরা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, 'ফ্লাইওভারের বিভাজন ভেঙে র্যাম্প সংযোজন করা হয়েছে। সংযোগস্থলে কলাম দিয়ে সংযোগ করার কথা থাকলেও ক্যান্টিলিভার দিয়ে সংযোগ করা হয়েছে।'
'এভাবে অবকাঠামোগত পরিবর্তন করায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে', বলেন ড. মাহমুদ।
তিনি আরও বলেন, 'নকশা পরিবর্তন করে এভাবে অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভারের অবকাঠামোগত পরিবর্তন করে চউক ভুল করেছে।'
চট্টগ্রাম নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, 'ফ্লাইওভারের অবকাঠামো কেটে কখনই এভাবে জোড়া লাগানো উচিত না। অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভারের সঙ্গে যেভাবে র্যাম্পটি জোড়া লাগানো হয়েছে, তাতে সেখানে অনেকগুণ ঝুঁকি বেড়ে গেছে।'
'ফ্লাইওভারের র্যাম্প পিলারে আসলে কী হয়েছে, তা জানতে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। সেখানে বুয়েটকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল', বলেন তিনি।
এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, 'যেহেতু ডিপিএমের তদন্ত প্রতিবেদনে দেবে গেছে বলা হচ্ছে, বিষয়টি উদ্বেগজনক। বড় ধরণের দুর্যোগ না আসার আগেই নিরপেক্ষ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।'
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভারের অবকাঠামো পরিবর্তন করলে সেখানে ঝুঁকি বাড়বে।'
চউক'র নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের মূল ডিপিপিতে র্যাম্প কিংবা লুপ তৈরির কোনো কথা উল্লেখ ছিল না।'
'সিডিএর অর্থায়নে র্যাম্পটি তৈরি হয়নি। তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে র্যাম্পটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সিডিএ এর জন্য কোনো টেন্ডার বা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ইস্যু করেনি', বলেন তিনি।
আব্দুস সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না।'
নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, '২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমরা ফ্লাইওভারটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করি। কিন্তু তারা ঠিকমতো ফ্লাইওভারের দেখাশোনা করেনি। এই ফ্লাইওভার দিয়ে সবসময় ওভারলোডেড ট্রাক চলাচল করেছে।'
তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহিন-উল-ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'সেসময় ফ্লাইওভারের র্যাম্পে হাইট ব্যারিয়ার দেওয়ার কথা ছিল চউকের। কিন্তু তারা তা করেনি।'
২০১২ সালের নভেম্বরে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলাকালে একটি গার্ডার ধসে ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার পর এর নির্মাণকাজের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চউক জানায়, ২০১৬ -১৭ সালে র্যাম্পটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া এই র্যাম্পটি ২০১৭ সালে নির্মাণ শেষে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় বলেও জানায় চউক।
Comments