সিলেটে এবার পাখির মাংসে ডিবি কর্মকর্তার জন্মদিনের ভোজ
ব্যাপক সমালোচনার পরও বন্ধ হচ্ছে না সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বন্য পাখির মাংস বিক্রি। আইন ভেঙে বন্য পাখির মাংসে ভোজের প্রবণতা যেমন বাড়ছে, তেমনি সমালোচিত হচ্ছেন দায়িত্বশীলরাও।
বন্য পাখির মাংসে ভোজ করে গত ১১ ডিসেম্বর সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ কাউন্সিলরের পর এবার সমালোচিত হলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি) অলক কান্তি শর্মা।
জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে হরিপুরের তারু মিয়া রেস্টুরেন্টে পাখির মাংস দিয়ে খাওয়া-দাওয়ার সময় তাদের একজন ফেসবুকে ছবি পোস্ট করলে তা নিয়ে সমালোচনার শিকার হন এই ডিবি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ফেসবুকে অলক শর্মার পাখির মাংসে জন্মদিনের ভোজের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে এই পুলিশ কর্মকর্তার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন।
আব্দুল করিম কিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর বা এই পুলিশ কর্মকর্তার মতো দায়িত্বশীল অসংখ্য ব্যক্তি এসব রেস্টুরেন্টের নিয়মিত ক্রেতা, আর তাদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করে না বনবিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই এত সমালোচনার পরও বন্ধ হচ্ছে না অবাধে পাখি শিকার ও বিক্রি।'
এ বিষয়ে জানতে অলক কান্তি শর্মার অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে আজ সকালে যোগাযোগ করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। পাখির মাংসে ভোজের ফেসবুক পোস্টটিও মুছে ফেলা হয়েছে।
তবে আব্দুল করিম কিমের দেওয়া ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে অলক শর্মা বলেন, '…এক ছোট ভাই ফান করে আমাকে নিয়ে এমন একটা পোস্ট দিয়ে দেয়। আমি খুবই ব্যথিত আমার অজান্তে এরকম একটা পোস্ট দিয়ে দেওয়ার জন্য। আসলে আমার জন্মদিন উপলক্ষে ওদেরকে খাইয়েছিলাম, কিন্তু এটা কোনো পাখির মাংস ছিল না। কোয়েল এবং মুরগির মাংস ছিল।'
আব্দুল করিম কিম বলেন, 'হরিপুরের তারু মিয়া রেস্টুরেন্টসহ সবকটি রেস্টুরেন্টে বন্য পাখির মাংস বিক্রি হয় এবং সেখানে যারা যান তারা সেসব খেতেই যান। অলক শর্মা পড়াশোনা করেছেন সিলেটে এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন, তারাও দীর্ঘদিন ধরে সিলেটেই আছেন এবং জানেন সেখানে কী বিক্রি হয় ও কী খেতে সবাই সেখানে যান। এটি দায় এড়ানোর একটি চেষ্টা। তবে দায়িত্বশীল সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।'
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি (অলক শর্মা) যেটি করেছেন সেটি ব্যক্তিগতভাবে করেছেন। তবে একটি দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে এ ধরনের কাজ করে সেটি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলব এবং বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।'
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলে বন্য পাখি শিকার মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেছে। এটি বন্ধে যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে নিয়ে সার্বিকভাবে সচেতনতা কর্মসূচি প্রয়োজন। দ্রুতই সিলেটের হরিপুরসহ যেসব জায়গায় বন্য পাখি বিক্রি হয়, সেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
যদিও, গত ১১ ডিসেম্বর রাতে ৫ কাউন্সিলরের পাখির মাংসে ভোজন করে তা ফেসবুকে লাইভ করার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হওয়ার পর দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বন অধিদপ্তর।
সেসময় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, 'যারা আইনের সঙ্গে জড়িত তারাই যদি এদের নিয়মিত ক্রেতা হন, তাহলে রেস্টুরেন্ট মালিকদের সচেতনতা কোনো কাজে দেবে না।'
এ ঘটনার দুদিন পর ১৩ ডিসেম্বর জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদা পারভীন রেস্টুরেন্টগুলোয় অভিযান চালিয়ে তারু মিয়া রেস্টুরেন্ট ও তার পার্শ্ববর্তী একটিকে মোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
তবে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সেই কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধেও কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ।
Comments