খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারি ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার ৪টি সরকারি ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারে গতি বাড়াতে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি খুবই করুণ।

এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে মূলধন সংকটে ভুগতে থাকা এই ব্যাংকগুলোকে মূলধন ভিত্তি বলিষ্ঠ করার জন্য শিগগির উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে আরও বলা হয়েছে তাদের অতিরিক্ত তারল্যকে বিনিয়োগে রূপান্তর করে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করতে।

এই ৪টি ব্যাংকের সঙ্গে সাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী মার্চ-জুন প্রান্তিকের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন গভর্নর ফজলে কবির। বৈঠকে উল্লেখিত ৪ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১ সালে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু তারা জুন পর্যন্ত মাত্র ৫৩ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যাংকগুলো অন্যান্য খেলাপিদের কাছ থেকে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৩২০ কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।

ব্যাংকগুলোর নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) এর পরিমাণ ৪৩ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের সার্বিক ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন জন কর্মকর্তা জানান, এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদেরকে এ বিষয়ে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম আজাদ জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদেরকে কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে এনপিএল পুনরুদ্ধার করার নির্দেশ দিয়েছে।

এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকগুলোকে আরো জানিয়েছে, এনপিএল ও আনক্লাসিফায়েড ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশনিং রাখার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রত্যাশা না করতে।

নিয়ন্ত্রক শৈথিল্য বলতে এখানে এমন একটি পরিস্থিতির কথা বলা হচ্ছে, যখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখতিয়ার থাকা সত্ত্বেও একটি দেউলিয়া ব্যাংককে বন্ধ করে দেওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকে।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর উচ্চ পর্যায়ের এনপিএল অনুপাত তারা পূর্বসূরীদের কাছ থেকে পেয়েছেন।

'কিন্তু আমরা খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি', বলেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক চারটি ব্যাংককে তাদের বড় আকারের মূলধন ঘাটতি কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর সামগ্রিকভাবে জুন মাস পর্যন্ত ২০ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল।

ব্যাংকগুলোকে বন্ড ছাড়া মূলধন জোগাড় করার অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত তারল্য ও বিনিয়োগ না করার কারণে ব্যাংকগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ঝামেলায় পড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক করপোরেট সুশাসন বজায় রেখে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের হার বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছে।

উল্লেখিত চারটি ব্যাংকে অতিরিক্ত তহবিলের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে ১ লাখ ২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা সমগ্র ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্যের ৪৪ শতাংশ।

আজাদ জানান, 'আমানতের পরিমাণ বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদেরকে অনুরোধ করেছে তহবিল বিনিয়োগ করতে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Voter Turnout in National Election | Chief Election Commissioner Kazi Habibul Awal

Ex-CEC Habibul Awal calls 2024 polls ‘farcical’

‘If I am not allowed to justify myself, then shoot me,’ Awal lashes out in court; put on 3-day remand

23m ago