কুইক রেন্টালের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়াতে বিল পাস

parliament_11.jpg
জাতীয় সংসদ ভবন। ছবি: সংগৃহীত

বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তীব্র বিরোধিতা এবং সমালোচনার মুখে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে এক দশক আগের ভাড়াভিত্তিক (কুইক রেন্টাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর বিশেষ আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে একটি বিল পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। 

আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ 'বিদ্যুৎ ও জ্বলানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১' সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। 

পরে সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাবগুলোর ওপর আলোচনা শেষে স্পিকার তা নিষ্পত্তি করেন।

বিলটি পাসের প্রক্রিয়ার সময় বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সদস্যরা তীব্র বিরোধিতা করেন। তবে, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জবাব দিতে গিয়ে বলেছেন, 'নিরবিচ্ছিন্ন এবং নির্ভরযোগ্যভাবে সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এই বিলটির মেয়াদ বৃদ্ধি আরও পাঁচ বছর বৃদ্ধি করা হচ্ছে।' 

বিলটির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, 'জনগণের করের টাকা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হচ্ছে।' তারা আরও বলেন, ''অসৎ উদ্দেশ্যে বিলটি তড়িঘড়ি করে পাস করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন আইনটি 'জঘন্য কালো আইন।'

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, 'আরও পাঁচ বছর কেন বাড়ানো হচ্ছে। আমরা শতভাগ বিদ্যুতের কথা বলছি আবার অন্যদিকে এই আইনের মেয়াদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। এই আইন করে আমরা অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দিচ্ছি। বিশেষ বিধান রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমনসহ বিভিন্ন সময় করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষ বিধান কেন ১৬ বছর ধরে চলবে। বিশেষ বিধান সাময়িক সময়ের জন্য করলেন। সর্বোচ্চ এই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করেন। বিশেষ বিধান এভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না।'

গণ ফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, "এই আইন একটি জঘন্য কালো আইন। এখানে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস করা হচ্ছে। জনগণের টাকা অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এই আইন করা হয়েছে।'

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু নিজের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'এলাকায় বিদ্যুৎ পাই না। চৈত্র, বৈশাখ, ভাদ্র মাসে মানুষ ঘুমাতে পারে না। এলাকায় চার-পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। জোরে বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ যায়। বাতাস হলে বিদ্যুৎ যায়। আমাদের বাঁচান। আইনের এক্সটেনশন দরকার নেই। বিদ্যুৎ দেন।'

তিনি বলেন, 'সরকার বলছে সারাদেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে সব সময় কিন্তু আমার এলাকায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে।' 

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, 'এলাকায় বিদ্যুৎ আসে না যায় বোঝা যায় না। আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ চাই না। আগের অবস্থায় ফিরতে চাই।'

বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, 'মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এই আইনে কিছু মানুষের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। জনগণের টাকা কিছু মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হবে কিন্তু তা নিয়ে কথা বলা যাবে না। বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পরিকল্পিতভাবে অচল করা করে রাখা হচ্ছে।'

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, 'কুইক রেন্টাল ব্যয়বহুল। কেন এটা করা হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনে কেনো নজর দেওয়া হচ্ছে না।'   

জবাব দিতে উঠে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'বিলটি নতুন করে আনা হয়নি। সময় বাড়ানো হয়েছে। নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ যাতে দিতে পারি সেজন্য এই আইন। ছয় মাসের মধ্যে যাতে কাজ করতে করতে পারি, সেজন্য এই আইন। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। এখন নির্ভযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চাই। সঞ্চালন লাইন করতে গেলে সময় লাগবে। এটা কুইক রেন্টালের জন্য না। দ্রুত সরবরাহের জন্য এই আইন। আমাদের দ্রুত সঞ্চালন করতে হবে। মাটির নিচে যেতে হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ঢাকা আন্ডারগ্রাউন্ডে যাবে। সিলেট ও খুলনাও যাবে।'

২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন'। শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।

২০১০ সালে প্রণীত আইনটির মেয়াদ সবশেষ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করা হয়েছিল। সেই মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদের সম্মতি নেওয়ার জন্য বিল তোলা হল।

তাৎক্ষণিক পরিকল্পনায় তিন বছর, পাঁচ বছর ও ১৬ বছর মেয়াদী এসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বেড়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হয়েছে বলে সরকারের ভাষ্য।

তবে, এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, যা আসে করদাতাদের পকেট থেকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে।  

বিদ্যমান আইনে ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে বিশেষ বিধানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে আলোচনা করে চুক্তি সম্পাদনের সুযোগ রয়েছে।

বিলটি সংশোধনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সংসদে বলেন, '…নবায়নযোগ্য  জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার লক্ষ্যে এ খাতে দ্রুত অধিক সংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।'

'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য।'

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Undergraduate admission tests under the cluster system faces uncertainty for the 2024-25 academic year, as several prominent universities have decided to withdraw and conduct their own admission tests independently. 

8h ago