ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট: পররাষ্ট্রমন্ত্রী-বিমানের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

ঘোষণা দিয়েও ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রতিবেশি দেশটিতে যেতে চাওয়া ও ফেরার অপেক্ষায় থাকা শত শত যাত্রী। আর এই ঘটনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একে অপরকে দোষারোপ করছেন।

বিমান কর্তৃপক্ষকে এই অব্যবস্থাপনার জন্য কঠোর সমালোচনা করেছেন বিমান বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া যাত্রীদের ভোগান্তির জন্য জাতীয় পতাকাবাহী এই বিমান কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে অবস্থান করছেন। তিনি টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমি বলিনি যে ২০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ফ্লাইট শুরু হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমি বলেছিলাম, ২০ আগস্ট থেকে দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট শুরু হতে পারে।'

তিনি আরও জানান, ভারত জানিয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে ভারত নীতিগতভাবে সম্মত রয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানের একজন উর্ধ্বতন কর্মকতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির ভিত্তিতে তারা ২২ আগস্ট থেকে ফ্লাইট চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেনি। আমরা ভেবেছিলাম এ বিষয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।'

বিমান ২২ আগস্ট থেকে দিল্লি ও কলকাতায় ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ায় বহু মানুষ তাদের টিকিট কিনেছে। ফলে এখন তাদের ভারতে যাওয়া বা দেশে ফেরার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে বিমানের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন।'

কীসের ভিত্তিতে ফ্লাইট চালুর কথা বলেছিলেন, জিজ্ঞেস করলে মোমেন জানান, তিনি গণমাধ্যমকে বারবার বলেছেন যে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে পুনরায় ফ্লাইট চালু করতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গত ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমকে জানান, ২০ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফ্লাই পরিচালনা শুরু হবে।

বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সুবিধা দিতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে রাজি হয়েছে বলেও জানান তিনি। 

এর পরদিন, বিমান বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, 'এয়ার বাবল' চুক্তিতে কলকাতা ও দিল্লির সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় বিমান সংস্থাটি আরও জানায়, তারা দিল্লিতে সপ্তাহে দুটি ও কলকাতায় তিনটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এছাড়া যাত্রীদের নির্ধারিত ফ্লাইটের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতেও বলে বিমান।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে তারা এখনো বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি।

২২ আগস্ট থেকে ভারতের সঙ্গে বিমানের ফ্লাইট চালুর ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দেশের অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো আমরাও ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই ঘোষণা দিয়েছিলাম।'

এই পরিস্থিতিতে শত শত যাত্রী টিকিট কিনেছেন, যাদের অধিকাংশই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন বলে বেশ কয়েকজন যাত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে তাদের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।

তাছাড়া, অনেক বাংলাদেশি যারা ভারতের বিভিন্ন শহরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সেখানে আটকা পড়ে আছেন। তারাও বিমানের টিকিট কিনে দেশে ফেরা নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী এম জিয়া উল কবির, সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস), সিএএবি, আজ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ফ্লাইট চালুর বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে এখনো কোনো উত্তর পাননি।

গত ৪ আগস্ট ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরের (ডিজিজিএ) কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে ১১ আগস্ট থেকে 'এয়ার বাবল' চুক্তির আওতায় ফ্লাইট চালুর আনুমোদ চায় সিএএবি। 

এর আগে, গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে কয়েক মাস বিমান যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এরপর এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে আবারও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফ্লাইট শুরু হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands. 

1h ago