মানিকগঞ্জ করোনা হাসপাতালের কর্মীদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ
মানিকগঞ্জ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট এবং হাসপাতালের কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলায় সোহেল রানা সোহাগের (৩০) মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে সোহেল রানার মৃত্যুর পর তার স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসপাতালে যান স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
মৃত সোহেল রানা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ধুলসুরা ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের আবুল হোসেনের পুত্র। তিনি ওই উপজেলার ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন।
ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন জানান, সোহেল রানার স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সী একটি কন্যা আছে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোহেল রানা গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আগে থেকেই তার ফুসফুসের সমস্যা ছিল। আজ সকালে আমাকে ফোন করে জানান, তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমি তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি। সকাল ১১টার দিকে তাকে হাসপাতালে আনা হলে ৭১০ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয়।'
আলতাফ হোসেন আরও বলেন, 'ভর্তির পর অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু, আধাঘণ্টা পর অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে চিকিৎসক বা নার্সদের কাউকে ডেকে পাওয়া যায়নি। তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন রোগীর পরিবারের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রোগীর স্বজনরা বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানালে প্রশাসনের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।'
সোহের রানার মামা আব্দুল মান্নান বলেন, 'রোগী ভর্তির পর যে অক্সিজেন দেওয়া হয়, তাতে অক্সিজেন ছিল না। দায়িত্বরত চিকিৎসক কামাল হোসেনকে আমরা বললাম, চিকিৎসা দিতে না পারলে আমাদের ঢাকায় পাঠাইয়া দেন। কিন্তু, তিনি কোনো ধরনের সহায়তা করেননি। তার কারণেই আমার ভাগ্নে মারা গেছে। নার্সরা আমাদের সঙ্গে খুব দুর্ব্যবহার করেছেন। ঘটনার পর আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে, ডিসি, সিভিল সার্জন, ইউএনও, ওসি সাহেব ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।'
তবে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে বেডের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। সংকটাপন্ন রোগীদের আগে থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। এই রোগীর হাই ফ্লো অক্সিজেন দরকার ছিল। কিন্তু, আমাদের এখানে তা ফাঁকা ছিল না। এ কারণে আমরা রোগীকে ঢাকায় নিতে বলেছিলাম। তবে, তারা আমাদের কথা শোনেনি। আমাদের চিকিৎসক কামাল হোসেন গিয়ে দেখেন রোগী মারা গেছেন। রোগীর স্বজনরা তকে মারধর করেছে।'
এ বিষয়ে ওই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. মানবেন্দ্র সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে আনার আগেই রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। হাসপাতালে আনার পর তাকে দ্রুত ভর্তি করে অক্সিজেনসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। অক্সিজেন শেষ হয়ে গেলে আমরা অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা করি। কিন্তু যদি, অক্সিজেন সংকট থাকে, তাহলে তো আমাদের একটু সময় দিতে হবে। আমাদের তরফ থেকে কোনো গাফিলতি ছিল না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সিট আছে ১০০ জনের। রোগী ভর্তি আছে ২৩০ জন। ১৪টি হাই ফ্লো অক্সিজেনের মধ্যে সচল আছে ১২টি। এছাড়া, সাধারণ অক্সিজেন আছে ৭০টি এবং সিলিন্ডার আছে ১৫৬টি। সিটের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। তারপরও, আমরা আন্তরিকভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।'
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, 'রোগী মারা যাওয়ার পর রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়ার খবরে আমিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুত হাসপাতালে যাই এবং রোগীর স্বজনদের শান্ত করি।'
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, 'রোগী মারা গেলে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হতেই পারে। কিন্তু, সেখানে তো ডাক্তারের কোনো গাফিলতি ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো আন্তরিকতা দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তাদের কোনো গাফিলতি নেই। রোগীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল।'
Comments