ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বরিশাল বিভাগে ১০০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পান্ডব নদীর জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলি জমি, বসতবাড়ি। ছবি: টিটু দাস/স্টার

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের ১০০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীরা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তারা জানিয়েছেন, ১০ দশমিক ১৮ কিলোমিটার সম্পূর্ণ এবং ৮৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার বাঁধ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ভোলা ও পটুয়াখালী।

এছাড়া বেশ কিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল এখনও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত রয়েছে। দুর্গম আশ্রয়কেন্দ্রগুলি থেকে অনেকে নিজ বাসস্থানে ফিরতে পারেনি।

বরিশাল বিভাগের বেশ কিছু নদ-নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপরে। কচা নদী বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার, বিষখালী ঝালকাঠীর পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার, বিষখালীর মেঘনা দৌলতখান পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার, তেতুলিয়া টঙ্গীবাড়ি পয়েন্টে ১১১ সেন্টিমিটার, স্বরুপকাঠী নদী ৫ সেন্টিমিটার, তেতুলিয়া ভোলা খেয়াঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, ধর্মগঞ্জ নদী হিজলা পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার জানান, বরিশাল বিভাগে ১৭ হাজার ২০৯টি পুকুর ও জলাশয়ের আড়াই হাজার টন মাছ ভেসে গেছে। এখানে অবকাঠামোগত ক্ষতি ৬ দশমিক ৯৩ কোটি টাকাসহ মোট ৮২ কোটি টাকার মৎস‍্য সেক্টরে ক্ষতি হয়েছে।

ভোলা

ভোলা জেলার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপপরিচালক আবদুর রশিদ জানান ভোলার চরগুলোতে জোয়ারের পানি ওঠায় আবার ডুবে যায়। এসব চরে অনেক দুর্গত মানুষ এখনও বাড়ি ফিরে যেতে পারেনি।

ভোলা জেলা প্রশাসনের এর প্রাথমিক তথ্যে ৭৭৭৩ টি বাড়ি আংশিক ও ৩৫৭৯টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলা ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহামুদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান এই ডিভিশনের মধ্যে ৮ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, অধিকাংশ বাঁধই জরুরিভিত্তিতে মেরামত করা সম্ভব হয়েছে।

ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার মনুষ আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ৬০-৭০ ভাগ ফিরে গেলেও দুর্গম এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম মিঞা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান এখানে ৮ ফুট পানিতে কলাতলির চর নিজাম, কলাতলির চর ডুবে গিয়েছিল। এখনও এসব চর ৩/৪ ফুট জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে। প্রবল বাতাসে এসব চরে মানুষ দুর্গত অবস্থায় রয়েছে। এখানে কুলাগাজির তালুক ও পশ্চিম মনপুরা এলাকায় ৩০ মিটার বাঁধ ভেঙেছে।

ভোলার বোরহানউদ্দিনে হাসান নগরে ৫ মিটার বাঁধ ভেঙেছে গেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে।

ছবি: টিটু দাস/স্টার

পিরোজপুর

পিরোজপুর জেলায় ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ও ৩ কিলোমিটার আংশিক বাঁধ ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পিরোজপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান।

পিরোজপুর জেলা কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে এখানে ৪০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ৩১ টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম। ৫৯৬ হেক্টর পুকুর জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে, যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার বেশি।

ঝালকাঠী

ঝালকাঠীতে সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধের আংশিক ও ৬০ মিটার আংশিক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২১৩৯টি পুকুর জলাশয়ের ১৩৫ দশমিক ৪১ টন মাছ ভেসে গেছে।

ছবি: টিটু দাস/স্টার

বরিশাল

বরিশালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৬২ জন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখানে ৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম খান জানান পান্ডব, কারখানা, লোহালিয়া নদীর ১৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৩ কিলোমিটার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখানে বাধ ভেঙে ইউনিয়নের সব রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ জানান, এই উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের পুরাতন হিজলা পয়েন্টের ৩০০ মিটার বেড়ি বাঁধ ভেঙে গেছে।

পটুয়াখালীতে সম্পূর্ণ বাঁধ ভেঙেছে ৩ কিলোমিটার, আংশিক ভেঙেছে ৫২ কিলোমিটার, ৫ লাখ ৫৯ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, ৪৬৯৩ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ২৩২ গ্রাম প্লাবিত। পটুয়াখালীতে ৫৭০০ পুকুর ও ১৩০০ মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ৩০ কিলোমিটার সড়ক আংশিক, ১৪৫টি কালভার্ট, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে এল জি ডি সূত্র।

বরগুনা 

পাউবি নির্বাহী প্রকৌশলী কাইসার আলম জানান এই জেলায় ১৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার আংশিক ও ৭০০ মিটার সম্পূর্ণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaws allowed back on Dhaka roads for one month

SC chamber judge issues status quo on HC order

2h ago