ঘূর্ণিঝড় ইয়াস'র প্রভাবে ৯ জেলার ২৭ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

সচিবালয়ে আয়োজিত সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে দেশের উপকূলীয় নয় জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। আজ বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত সার্বিক ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, অতি জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হলো--শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, শরণখোলা, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, মঠবাড়ীয়া, বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, আমতলী, পটুয়াখালী সদর, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া, চরফ্যাশন, মনপুরা, তজুমদ্দিন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর, হাতিয়া, রামগতি ও কমলনগর।

নয় জেলার ২৭টি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা দিতে ১৬ হাজার ৫০০ শুকনো ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আজ সকাল থেকে ভারতের উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এর প্রভাব থেকে বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ মুক্ত।'

প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'উপকূলীয় জেলা, উপজেলাগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য আদান-প্রদানে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি (জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র) ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদানে সার্বক্ষণিক কাজ করেছে।'

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস'র প্রভাবে উপকূলীয় ১৪টি জেলার অবস্থাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

পটুয়াখালী

জোয়ারের পানি বেড়েছে তবে বিপৎসীমার নিচে আছে। গতকাল সন্ধ্যায় ১৭২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৪ হাজার লোক আশ্রয়গ্রহণ করেছিল। আজ সকালে তারা ফিরে গেছে। জোয়ারের সময় তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন এবং ভাটার সময় নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যান।

সাতক্ষীরা

বর্তমানে আবহাওয়া স্বাভাবিক। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট বেশি। কোন কোন জায়গায় বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। জেলায় এক হাজার ২৯২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। গতরাতে শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২৮০ জন লোক আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। বর্তমানে তারা নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেছে।

বরগুনা

বর্তমানে আকাশ মেঘলা এবং জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ীবাঁধের কয়েক জায়গায় কিছু অংশ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫২০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছিল, পরে তারা নিজ বাড়ীতে ফিরে গেছেন। সামান্য ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস'র প্রভাবে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ঝালকাঠি

জেলায় মোট ৪৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। ৪৯৭ জন লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বিপৎসীমার উপরে আছে। কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

পিরোজপুর

মঠবাড়ীয়া উপজেলার মাঝের চর বেড়ীবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ১০-১২টি মাছের ঘের এবং কয়েক একর সবজি বাগান পানির নিচে চলে গেছে। মাঝের চর আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা থেকে শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে তিন ফুট উপরে উঠেছে। ২৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

বরিশাল

আবহাওয়া স্বাভাবিক। এক হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। কোন লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণ করেনি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি আছে। কোন ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।

ভোলা

জেলার ঝড়ো হাওয়া হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া স্বাভাবিক। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উপরে উঠেছিল। কিন্তু, বর্তমানে নেমে গেছে। দুর্গম চরে প্রায় ২৫০টি কাঁচা ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে ৯০০ গরু-মহিষ ভেসে গেছে। ৬৯১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল, তবে বর্তমানে এসব লোকজন নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছে।

বাগেরহাট

জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার ২০-২১টি গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুই হাজার ৭০০ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা হিসেবে শুকনো খাবার (চিড়া, গুড় ও খাবার স্যালাইন) সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে। সকাল থেকে রোদ ছিল। বর্তমানে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক।

চাঁদপুর

জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিছু ছিন্নমূল মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণের জন্য উপজেলাওয়ারী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানির উচ্চতা স্বাভাবিক। সামান্য ঝড়ো হাওয়া বইছে।

লক্ষ্মীপুর

জেলার রামগতি, কমলগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকায় সামান্য জোয়ারের পানি উঠেছে। কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কোন লোক আশ্রয় গ্রহণ করেনি। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে।

খুলনা

জেলায় মোট এক হাজার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে কোন লোক আশ্রয়গ্রহণ করেনি। ঝড়ো হাওয়া আছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক আছে।

ফেনী

আবহাওয়া স্বাভাবিক। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক। ঝড়ো হাওয়া নাই। গতকাল ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবে একজন মারা গেছে। ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, কিন্তু কোন লোক আশ্রয়গ্রহণ করেনি।

চট্টগ্রাম

জোয়ারের পানি বাড়ছে। বর্তমানে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবহিত হচ্ছে। জেলার মোট ৮৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কোন লোক আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়নি। ক্ষয়ক্ষতির কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।

নোয়াখালী

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস'র কারণে জেলায় মোট ৩৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এ সব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৩০০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছিল। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট উপরে উঠেছিল। জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaws allowed back on Dhaka roads for one month

SC chamber judge issues status quo on HC order

3h ago