বিএসএমএমইউ’র আধুনিকায়নে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ আবারও বাড়ল
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিশ্চিত করতে ভূমি উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতিসহ উন্নত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে যে বিশেষ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ আবারও বাড়িয়েছে সরকার।
মূলত মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি। যে কারণে এর মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়ানোর পাশাপাশি এই কাজে অতিরিক্ত ১৯৫ কোটি টাকা চেয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রস্তাবনাটি পাস হয়েছে।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে চলমান বলে উল্লেখ করে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, ‘২০২০ সাল পুরোটাই করোনা পরিস্থিতিতে কেটেছে। সে কারণে প্রকল্পে দেরি হয়েছে। তবে, এখন যে সময় নেওয়া হলো, আশা করছি এর মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় কর্তৃপক্ষ বিএসএমএমইউর ভূমি উন্নয়নসহ একটি নয়তলা ভবন নির্মাণের কাজ করছে। এর প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন হবে ৪৫ হাজার বর্গমিটার। ভবনটিতে ১২ হাজার ৬৪৩টি মেডিকেল ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, দুই হাজার ২৫৬টি কম্পিউটার ও ছয়টি গাড়ি থাকবে। এ ছাড়া, এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসক-কর্মকর্তারা দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণও নেবেন।
মূলত প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সংশোধিত প্রস্তাব অনুসারে, বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়াই এই মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের নির্ধারিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবনা অনুসারে তা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৫৬১ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে।
এর মধ্যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সংস্থা ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) দেবে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা। বাকি টাকা আসবে সরকারের কাছ থেকে।
প্রকল্পের ঠিকাদার কোম্পানি সাউথ কোরিয়ার হুন্দাই। আর চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে স্যামসাং।
সংশোধিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বরাদ্দ করা অর্থের মধ্যে ৬৮২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়েই তারা কাজটি শেষ করতে পারতেন। কিন্তু, আরও কিছু কারণের সঙ্গে করোনা মহামারি কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক জুলফিকার রহমান খান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার কারণে আবগারি শুল্ক বেড়েছে। অন্যান্য খরচ একই রকম আছে।
এই অধ্যাপক একইসঙ্গে বিএসএমএমইউ’র হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরুর পর আমরা মাটির নিচে বহু বছর আগের ৪৪টি পিলার পাই। ওগুলো সরাতে সময় লেগেছে। এ ছাড়া, মহামারির কারণেও প্রকল্পের কাজ পাঁচ মাস বন্ধ ছিল।’
প্রকল্পের আদ্যোপান্ত
বিএসএমএমইউ’র কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুসারে, ভবন নির্মাণের কাজ এর মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া, অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর কাজ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
অধ্যাপক জুলফিকার রহমান বলেন, ‘আশা করছি- চলতি মাসের শেষের দিকে আমরা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি হাতে পেতে শুরু করব। একটি চুক্তি অনুসারে, কোরিয়ান কোম্পানিটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে রাজি হয়েছে। তারপরেও যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য আমরা ছয় মাস সময় বেশি চেয়েছি।’
সব ধরনের সাধারণ ও জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ’র সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এর পেশাজীবীদের দক্ষতা উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আধুনিক চিকিৎসাসেবা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটিকে একটা ‘সেফটি নেট হাসপাতাল’ হিসেবে গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
বিএসএমএমইউ’র কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, যারা চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে যান, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে তারা এখানেই আসবেন।
আটটি ভিভিআইপি কেবিনের সঙ্গে হাসপাতালটিতে সাধারণ শয্যা থাকবে ৮৪৬টি।
অধ্যাপক জুলফিকার বলেন, ‘অত্যাধুনিক সব সুবিধাই এখানে থাকবে। চিকিৎসা খরচও হবে সাশ্রয়ী।’
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ
Comments