পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন

তারকারা কি পারবেন বিজেপি বা তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনতে?

তৃণমূলে রাজ চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, সোহম ও সায়নী ঘোষ (বাঁ দিক থেকে)।

আগামী ২৭ মার্চ থেকে আট দফায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দুই দলেই আছে একাধিক তারকা প্রার্থী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দলই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে তারকা শক্তি ব্যবহার করতে চাইছে। তৃণমূল কংগ্রেস এমন সব আসনে তারকাদের প্রার্থী করেছে, যেসব আসনে তাদের আগের রেকর্ড মোটেও ভালো নয়। কিন্তু, তারকারা কি পারবেন বিজেপি বা তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনতে?

প্রাক্তন তৃণমূল হেভিওয়েট প্রার্থী আসানসোলের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আসানসোল থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সায়নী ঘোষ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে আসানসোলে বিজেপির তারকাপ্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় জয়ী হয়ে আসছেন।

কিন্তু, বাবুল সুপ্রিয় এবারের বিধানসভা নির্বাচনে টালিগঞ্জ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার বিরুদ্ধে থাকছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এই আসন থেকে নন্দীগ্রামের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া, এই আসনটি তৃণমূল দুর্গ হিসেবে পরিচিত এবং ২০১১ সাল থেকে সেখানে অরূপ বিশ্বাস নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তাই তৃণমূলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত আসনটিতে তারকা শক্তি ব্যবহার করছে বিজেপি।

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এই আসনটি প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও বর্তমানে বিজেপির সংসদ সদস্য অর্জুন সিংয়ের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ব্যারাকপুরের বর্তমান বিধায়ক সিলভদ্র দত্তসহ বেশ কয়েকজন নেতা ২০২০ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূল এই আসনে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজ চক্রবর্তীর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।

সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী পায়েল সরকার। বিজেপি এই অভিনেত্রীকে বেহালা পূর্ব থেকে মনোনীত করেছে। এই আসনটি কলকাতার একটি অতি পরিচিত তৃণমূল ঘাঁটি। তবে, এখানে প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কলকাতার সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। ধারণা করা হয়, এই অঞ্চলে তিনি অনেক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। অন্যদিকে, এই আসন থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। মূলত রত্নাকে মোকাবিলা করতেই বিজেপি তারকা শক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই দলটি অভিনেত্রী পায়েল সরকারকে প্রার্থী করেছে।

বিজেপিতে যোগ দেওয়া তারকা- যশ দাশগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, হিরণ চট্টোপাধ্যায় ও পায়েল সরকার (বাঁ দিক থেকে)।

যাইহোক, তারকা শক্তি ব্যবহারের ফর্মুলা সবসময় সফল ছিল না। যেমন: বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংগীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ী, সংগীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়, অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিমু ভৌমিককে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু, বাবুল সুপ্রিয় ছাড়া আর কেউ জিততে পারেননি।

একইভাবে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে বাঁকুড়ার বোরজোরা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দর্শকপ্রিয় অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী নির্বাচিত হননি। আবার, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়র কাছে পরাজিত হন তৃণমূলের হেভিওয়েট তারকা প্রার্থী মুন মুন সেন।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মতো এবারও তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিজেপি তারকা শক্তি ব্যবহার করছে। ইতোমধ্যে বিজেপিতে তারকার সংখ্যা বেড়েছে এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়া বেশিরভাগ তারকাকে নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন— কৌশানী মুখোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, সোহম চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর মতো জনপ্রিয় তারকারা। বিজেপিতে আছেন— যশ দাশগুপ্ত, হিরণ চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকারা।

আগামী ২৭ মার্চ থেকে আট দফায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো ভারত। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সালে এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। দলটি তৃতীবারের মতো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কিন্তু, বাংলায় উদীয়মান বিজেপি এবং কংগ্রেস ও সিপিআইএমের নেতৃত্বাধীন বাম ফ্রন্ট তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পথকে অনেক কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English

No place for Islamic extremism in Bangladesh

Islamic extremism will never find a place in Bangladesh again, said Chief Adviser Muhammad Yunus recently.

6h ago