ভ্যাকসিন নিলেও করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে?

Coronavirus.jpg
করোনাভাইরাস। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের কার্যক্রম ভালোভাবেই এগিয়ে চলেছে। এপর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ২৬ লাখের ওপরে। সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবেই হচ্ছে। প্রথম দিকে ভ্যাকসিনে নিতে কিছুটা অনাগ্রহ থাকলেও এখন সবাই নিজের ইচ্ছেতেই ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। তবে, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পরেও কয়েকজন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সম্প্রতি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে, অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- ভ্যাকসিন কি আসলেই কাজ করছে?

Corona.jpg

হ্যাঁ, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন করোনা প্রতিরোধে একটি কার্যকরী ভ্যাকসিন এবং তা প্রমাণিত হয়েছে বড় পরিসরের ফেইজ-৩ ট্রায়ালে। যে কোনো ভ্যাকসিন কার্যকর হতে প্রথম ডোজের পরে শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরিতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। অক্সফোর্ড বা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এই সময় হচ্ছে ২১ দিন বা তিন সপ্তাহ। কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজের ১৪ দিনের আগে শরীরে পর্যাপ্ত নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি তৈরি হয় না। নিউট্রালাইজিং এন্টিবডিই মূলত কোনো একটি ভ্যাকসিনের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা নিশ্চিত করে। ফেইজ-২ ট্রায়ালে দেখা গেছে, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর রক্তে সর্বোচ্চ পরিমাণ এন্টিবডি তৈরি হয়। যা প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। সুতরাং এন্টিবডি স্বল্পতার কারণে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২১ দিনের মধ্যে যে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। এ সময়ে সতর্ক থাকা খুব জরুরি।

করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন সময় (সুপ্তাবস্থা) হচ্ছে ৫-১৪ দিন। অর্থাৎ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার বা সংক্রমণের ৫-১৪ দিন পরে কোভিডের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় অনেকেই করোনায় সংক্রমিত থাকতে পারে, যার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে ভ্যাকসিন দেওয়ার ৫-১৪ দিন পরে। আবার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার ১০-১২ দিনের ভেতরে কেউ ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তার ভেতরেও কোভিডের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কারণ টিকা প্রদানের পরে প্রথম ১০-১২ দিন রক্তে এন্টিবডির (ইমিউনোগ্লোবিউলিন-জি) পরিমাণ থাকে অপর্যাপ্ত। তবে, ভ্যাকসিন দেওয়ার ১২-১৪ দিন পরে যদি কেউ ভাইরাসে সংক্রমিত হন, তাহলে ভ্যাকসিনে কিছুটা সুরক্ষা পেলেও পেতে পারেন।

অন্যদিকে, টিকা গ্রহণের ২১ দিন পরে কেউ যদি সংক্রমিত হয়, তাহলে তার কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তবে, এক্ষেত্রে তিনি কিন্তু শতভাগ নিরাপদ নন। কারণ, প্রথম ডোজের ২১ দিন পর থেকে কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা হচ্ছে ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জনকে টিকা দিলে ২৪ জনের কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। কোনো ভ্যাকসিনই শতভাগ প্রতিরক্ষা দেয় না।

এবার আসা যাক আমাদের ত্রাণ সচিবের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার প্রসঙ্গে। পত্রিকার রিপোর্টে এসেছে- তিনি টিকা গ্রহণের ১২ দিন পরে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। টিকার কার্যকারিতা এবং ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময় পর্যালোচনা করলে খুব সহজেই বলা যায়- টিকা গ্রহণের ১২ দিন পর কোভিডে আক্রান্ত হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এমন হতে পারে, ত্রাণ সচিব যখন টিকা নিয়েছিলেন তখনই তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ছিলেন, কিন্তু বুঝতে পারেননি। আবার এমনও হতে পারে যে টিকা নেওয়ার ৭ দিন পর তিনি করোনায় সংক্রমিত হোন। আর তা কোভিড আকারে প্রকাশ পায় টিকা নেওয়ার ১২ দিন পর। এ সময়টি ভাইরাসের ইনকিউবেশন সময়ের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমারেখার মধ্যেই পড়ে। আবার টিকা নেওয়ার প্রথম ১৪ দিন ধরতে গেলে টিকার তেমন কোনো কার্যকারিতাই থাকে না। সুতরাং এই ঘটনাটি কোনোভাবেই প্রমাণ করে না যে, এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন ফেল করেছে। একইভাবে এরকম আরও যেসব সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তাও ব্যাখ্যা করা যায়।

এ ছাড়া, যদি কারো শরীরে কোনো কারণে ইমিউনিটি কম থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কাঙ্ক্ষিত সুরক্ষা নাও দিতে পারে। তবে, সেই সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। তাই, পত্রিকার খবর দেখে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কোভিশিল্ড একটি কার্যকর ভ্যাকসিন। এর দুটি ডোজ নিলে কোভিড থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে ৮৩ শতাংশ। সবচেয়ে বড় কথা- এই ভ্যাকসিনটি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে ফেলে শতভাগ। তাই, সবার উচিত যথাযথ নিবন্ধনের মাধ্যমে সময় মতো দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া।

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য।

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

আরও পড়ুন:

ভারতে করোনার নতুন স্ট্রেইন, বাংলাদেশে সতর্কতা জরুরি

৪ সপ্তাহের পার্থক্যে দ্বিতীয় ডোজে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৫৩ শতাংশ, ১২ সপ্তাহে ৮৩ শতাংশ

৪ সপ্তাহ নয়, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া দরকার ৮-১২ সপ্তাহ পর

করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ‘কিছুটা কমতে পারে’

ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা ও বিতর্ক কেন?

ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ও গণস্বাস্থ্যের কিট

করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয় না বাংলাদেশের পিসিআর পরীক্ষায়

করোনার নতুন স্ট্রেইন: করছি কী, করণীয় কী

ভ্যাকসিন কবে পাব এবং অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ‘ভুল ডোজ’র আশাবাদ

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

4h ago