কারা আসলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে
কথায় কথায় আমরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ শুনি। কিন্তু দেশে-বিদেশে কারা আসলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে? একটা উদাহরণ শুনুন। গত বছরের ফেব্রুয়ারির ঘটনা। কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস ও আরব টাইমসে খবর প্রকাশিত হলো, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারের গুরুতর অভিযোগ। তাকে ধরতে অভিযান চালিয়েছে কুয়েত পুলিশ।
বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহ অভিযোগ, কোথায় রাষ্ট্র খোঁজ নেবে, তা না করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, এমপির বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ ‘ফেক নিউজ’। (সূত্র: প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০)।
অন্যদিকে, কোভিডের সময় বিদেশ থেকে আসা প্রায় পাঁচশ প্রবাসীর বিরুদ্ধে ৫৪ ধারায় অন্তত পাঁচটি মামলা করেছে রাষ্ট্র। গৎবাঁধা সেই পুরনো অভিযোগ, ‘এরা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য সলাপরামর্শ করছিলেন। পুলিশ গোপন সূত্রে ওই সলাপরামর্শের খবর জানতে পেরেছে। ভবিষ্যতে তাদের বাংলাদেশে অপরাধে জড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।’ এদের মধ্যে ভিয়েতনাম ফেরত ৮১ জন বাংলাদেশিও রয়েছেন, যারা মানবপাচারকারীদের হাতে প্রতারিত হয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের কর্তাব্যক্তিরা তখন বলেছিলেন, এরা বাংলাদেশ দূতাবাস দখল করতে গেছেন।
অবশ্য দুদিন আগে, গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাইকোর্ট ভিয়েতনাম ও কাতার ফেরত ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। এর আগে, এই প্রবাসীদের তিন থেকে চারমাস জেলে থাকতে হয়। পুলিশ থেকে শুরু করে তদন্তকারী কর্মকর্তা, দূতাবাস সবাই জানতো এই বাংলাদেশিরা নিরপরাধী। তারপরেও নিরীহ এই প্রবাসীদের মাসের পর মাস জেলে থাকতে হয়েছে।
আর যেই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগকে ‘ফেক নিউজ’ বলা হয়েছিল, ২৮ জানুয়ারি সেই সংসদ সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন কুয়েতের আদালত। পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর–২ আসনের ওই সংসদ সদস্য শহিদকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবশ্য মানবপাচার ও অর্থপাচারের আরও দুটি মামলা এখনও চলমান। দেখা যাক সেগুলো রায় কী হয়!
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, কারা আসলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করল? মানবপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন সংসদ সদস্য, নাকি বিদেশে প্রতারিত সাধারণ মানুষ? কোনো সন্দেহ নেই, একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ ওঠা, তার গ্রেপ্তার, তার সাজা পুরো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। কারণ শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস নয়, বিশ্বজুড়ে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এখন প্রশ্ন হলো- এমন একজন লোক সংসদ সদস্য হলেন কী করে?
জনশক্তি রপ্তানিকারক ও লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে যতোটুকু জেনেছি, ১৯৮৯ সালে একটি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার (শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে চাকরি নিয়ে কুয়েত যান শহিদ। ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত দখলের কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শহিদ আবার কুয়েতে যান। এরপর মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানির নামে তিনি জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসা শুরু করেন। মূলত এই ব্যবসা থেকেই কোটি কোটি টাকা আয়। আর এই আয় যখন অনেক বেশি হয়ে গেল, তখন তার খায়েশ হলো সংসদে যাওয়ার এবং বাংলাদেশে যে টাকা দিয়ে সংসদ সদস্যের পদ কেনা যায়, সেটা প্রমাণ করলেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহিদ ইসলামকে এলাকার লোকজন আগে সেভাবে চিনতো না। শুধু টাকার জোরেই ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ করে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) মনোনয়ন পেয়ে যান শহিদ ইসলাম। এই মনোনয়নের ঘটনা তদন্ত করলেই বাংলাদেশের রাজনীতির আরেক চিত্র বেড়িয়ে আসবে।
ওই নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। জাপার মনোনয়ন পান আগের বারের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু মনোনয়ন পেলেও তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান, যদিও তার প্রতীক ছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, শহীদ কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করলেও, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে জাতীয় নির্বাচনের আট দিন আগে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটা চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ‘আপনাদের জানা আছে যে, শহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত নেতা ও সক্রিয় মাঠপর্যায়ের কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৃহত্তর স্বার্থে এই আসনের বিজয় দলের পক্ষে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে শহিদ ইসলামকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে নির্বাচন কমিশনকৃত তার প্রতীকে বিজয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি।’
অভিযোগ আছে, এই মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সবাইকেই বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছিলেন শহিদ ইসলাম। কারও কারও মতে, তিনি অন্তত ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। শুধু যে নিজে এমপি হয়ে তেলেসমাতি দেখিয়েছিলেন শহীদ ইসলাম তাই নয়, স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও একইভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বানান তিনি। এখন জানা যাচ্ছে, বিপুল পরিমাণ এই টাকার উৎস ভিসাবাণিজ্য ও মানবপাচার। টাকা থাকলে যে এমপি পদটাও কেনা যায়, সেটাই প্রমাণ করেছিলেন শহীদ।
মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে শহিদকে গত বছরের ৬ জুন রাতে তার কুয়েত সিটির বাসা থেকে সেদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে। আর গতকাল একটি মামলার রায় হলো- চার বছরের জেল। এখন প্রশ্ন হলো, দেশের ভাবমূর্তি তাহলে ক্ষুণ্ণ করলেন কারা? নিশ্চয়ই একজন সংসদ সদস্য। একইভাবে যারা তাকে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দিলেন, সংসদে নিয়ে গেলেন, যারা তার স্ত্রীকেও সংসদ সদস্য বানালেন, তারা কি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেননি?
মানবপাচার ও অর্থপাচারের এসব ঘটনায় কুয়েতের ফৌজদারি আদালত বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের পাশাপাশি সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মাজেন আল জারাহকেও চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করেন। প্রভাবশালী ওই জেনারেল বাংলাদেশের সংসদ সদস্যকে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনায় মদদ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
অবশ্য কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আবুল কালামের বিরুদ্ধেও সংসদ সদস্য পাপুলকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ২০১৬ সালের ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালামকে চুক্তিতে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি কালাম চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিও ছিলেন। রাষ্ট্রদূত হয়ে তিনিসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা শহিদ ইসলামকে মদদ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু মেয়াদ শেষে তাকে ফিরিয়ে আনা ছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যায়নি। অথচ অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে রাষ্ট্রদূতও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন।
২০১৮ সালে নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়, ওই সময়েই শহিদ ইসলাম ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সোনাদানাসহ প্রায় শত কোটি টাকার অর্থসম্পদের মালিক। তবে দুদক বলছে, প্রদর্শিত এই অর্থসম্পদের বাইরেও শহিদ ইসলাম ও তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামের বিপুল অর্থসম্পদ আছে দেশ-বিদেশে। দুদক ইতিমধ্যেই অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে। শহীদ-সেলিনা দম্পতিসহ চার জনের বিরুদ্ধে দুদকের করা ওই মামলায় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার পর শহিদের স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
সংসদ সদস্য শহিদ যে শুধু তার স্ত্রী-কন্যার নামে সম্পদ গড়েছেন তাই নয়, দুদকের অনুসন্ধান বলছে, তার শ্যালিকা জেসমিনের পাঁচটি ব্যাংক হিসেবেও ১৪৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার তথ্য মিলেছে। অথচ ২৩ বছর বয়সী জেসমিনের নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। বিভিন্ন ব্যাংকে জেসমিনের প্রায় ৪৪টি হিসাব পাওয়া গেছে। একটি ব্যাংকেই তার ৩৪টি এফডিআর হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া, পাপুলের মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামে ৪১টি এফডিআরে দুই কোটি ২৯ লাখ টাকাসহ মোট ২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা জেসমিন প্রধানের একটি ব্যাংকের হিসাবে লগ্নি করে ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার ওভার ড্রাফট সুবিধা গ্রহণের প্রমাণ মেলে।
দুদক বলছে, অবৈধ পথে অর্জিত বিপুল অর্থ বৈধ হিসাবে দেখাতে শ্যালিকা জেসমিনের মালিকানায় ‘লিলাবালি’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন এমপি পাপুল। ওই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জেসমিন প্রধানের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাচার করা হয় ১৪৮ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে এমপি শহিদ, তার স্ত্রী ও সন্তান এবং শ্যালিকার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। এ ছাড়া, সংসদ সদস্য শহিদ, তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের ৬১৭টি ব্যাংক হিসাব স্থগিতের (ফ্রিজ) আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অন্যদিকে, কুয়েত কর্তৃপক্ষও সেদেশের ব্যাংকে থাকা সংসদ সদস্য শহিদের ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। কুয়েতের আদালতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে ছয়-সাত লাখ টাকা করে নেওয়া হলেও, যে বেতন দেওয়ার কথা সেই বেতন না দিয়ে কুয়েতে নিপীড়ন করা হয়েছে।
কুয়েতে মামলার তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আল-রাই জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ তার জনশক্তি ব্যবসা থেকে বছরে আয় করছেন প্রায় ২০ লাখ দিনার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
কুয়েতের দৈনিক আল কাবাস’র বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস গতকাল বলেছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে পাঁচ মিলিয়ন দিনার সম্পদ করেছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, পাপুল কুয়েতি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে শ্রমিক আনতেন। শ্রমিকদের কাছ থেকে সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া ও ওয়ার্ক ভিসার কথা বলে অবৈধভাবে ২,৫০০ থেকে ২,৭০০ দিনার নেওয়া হতো। এভাবে বাংলাদেশ থেকে ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কুয়েতে এনে আসমিরা ৫০ মিলিয়ন দিনারের বেশি আয় করেছেন। প্রতিবেদন মতে, তদন্তে আরও জানা গেছে এমপি পাপুল অবৈধ উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করতেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আয়ের উৎস গোপন রাখতেন এবং কুয়েতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে মানবপাচার করতেন।
অবশ্য শহিদ ইসলামের মতো সংসদ সদস্য নিশ্চয়ই আরও আছেন, যাদের কোনো না কোনোভাবে টাকা হওয়ার পর মনে হয়েছে, এবার সংসদে যেতে হবে। এই যে দুর্নীতি করা, টাকা পাচার এগুলোতে কী দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় না? ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল, এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার বা ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বার্ষিক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে সেখানে ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। কারা এই টাকা রাখছেন? শুধু সুইজারল্যান্ডেই নয়- সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। শুধু জানা যায় না টাকা পাচারের পেছনের মানুষগুলোর নাম, যারা আসলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং অধিকাংশ সময়েই তারা ক্ষমতাশালী মানুষ।
অবশ্য শুধু টাকা পাচার নয়, অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট-ক্ষমতা দখলসহ সবকিছুতেই দেখা যায় এই ক্ষমতাশালীদের। এসব দেখে নাগরিক হিসেবে তাই প্রশ্ন জাগে- কারা আসলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণকারী?
শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments