দেশ যখন করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি!
তুলনাটা বেশ নান্দনিক। তবে, অন্তরালের বাস্তবতা বড্ড বেশি রূঢ়, কষ্ট ও বিষাদের। যাতে জড়িয়ে আছে শত কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তার হাতছানি। বলছিলাম করোনা মহামারির সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা। সমুদ্রের জলে ঢেউ উঠে— ছোট ছোট ঢেউ, বড় বড় ঢেউ। পানি ফুলে-ফেঁপে ওঠে, জোয়ার আসে, আবার ভাটার টানে নেমে পড়ে। মহামারির বেলায়ও এরকম একের পর এক ঢেউ আসতে পারে। শতবর্ষ আগে স্প্যানিশ ফ্লু নামের মহামারিতে তিনটি ঢেউ এসেছিল। তাতে দ্বিতীয় দফায় প্রথম দফার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। করোনা মহামারির ক্ষেত্রেও কি একটি দ্বিতীয় ঢেউ আসতে চলেছে?
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে যাত্রা শুরুর পর এই মহামারি এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এর নিদারুণ থাবা বসিয়েছে। দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে জনজীবন। অনেক দেশই এমন নাকাল অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে যে, তারা শেষ আশ্রয় হিসেবে আকাশ পানে তাকিয়ে আহাজারি করতে বাধ্য হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় অবস্থার আপাত উত্তরণ ঘটেছে কমবেশি অনেক জায়গাতেই। নিউজিল্যান্ডের মতো কোনো কোনো দেশ তো এক পর্যায়ে নিজেদের শতভাগ করোনামুক্ত ঘোষণা করতে পেরেছে। এ ছাড়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিসহ আরও অনেক দেশই মোটামুটিভাবে এ মহামারির প্রাথমিক ধাক্কাটা কমবেশি সামলে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু, মহামারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনসহ জনজীবনের ওপর যেসব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছিল, তা শিথিল করার পর এসব দেশের অনেকগুলোতেই পুনরায় মহামারির প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে, প্রয়োজন দেখা দেয় আবারও কড়াকড়ি আরোপের।
প্রশ্ন হচ্ছে— এটা কি করোনার আরেকটি ঢেউ? অনেকেই এটাকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলতে নারাজ। তারা মনে করেন, এখনো প্রথম ঢেউ চলছে। যা হচ্ছে, তা কেবল সময় সময় সংক্রমণের খানিক হ্রাস-বৃদ্ধি। তাদের মতে একবার সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর যদি পুনরায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়, তাহলেই এটাকে আরেকটি ঢেউ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।(করোনা ভাইরাস: সেকেন্ড ওয়েভ কী এবং সেরকম কিছু কি আসতে যাচ্ছে?, বিবিসি নিউজ বাংলা)
সে যাই হোক, অনেক জায়গায় যে নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে বা বাড়ছে, তার অন্তর্নিহিত কারণ কী হতে পারে? সঠিক কারণ বলা মুশকিল। তবে, একাধিক বিষয়ের ভূমিকা থাকতে পারে। কোথাও কোথাও তো এমন দেখা গেছে, সংক্রমিত এলাকা থেকে আগত লোকজনের মাধ্যমে নতুন সংক্রমণ ছড়িয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে জনজীবনের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করার পাশাপাশি জনসাধারণের অংশবিশেষের মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের মতো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মৌলিক স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা ভাবকে কারণ হিসেবে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, ভাইরাসের মিউটেশন এবং জলবায়ু কিংবা এর সিজনাল ভেরিয়েশনের একটি বড় ভূমিকা থাকতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
জলবায়ু ফ্যাক্টরটিকে একটু ব্যাখ্যা করা যাক। নোভেল করোনাভাইরাসসহ শ্বাসতন্ত্রকে টার্গেটকারী অনেক ভাইরাস ঠান্ডা আবহাওয়ায় অধিকতর শক্তিশালী রূপ ধারণ করে। এ সময়ে একইসঙ্গে নিউমোনিয়া, ফ্লু, সর্দি-কাশি ইত্যাদির জন্য দায়ী অন্য অণুজীবগুলোর যুগপৎ সংক্রমণের ফলে করোনার আঘাতটা আরও জোরালো হয়ে উঠে থাকতে পারে। এ ছাড়া, শীতের সময়ে এমনিতেই হাঁপানি বা ব্রংকাইটিস জাতীয় ফুসফুসের সমস্যা আছে এমন রোগীদের অবস্থার অবনতি ঘটে। এ পর্যন্ত ভাইরাসটির বিস্তার পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, চীনে এটির সংক্রমণ শুরু হয়েছিল শীতে— ডিসেম্বরে। এরপর এটি বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে, ঠান্ডা আবহাওয়া ছাড়াও সংক্রমণ বিস্তারে আন্তদেশীয় মাইগ্রেশন এবং লকডাউন, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের মতো জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে দেশগুলো কতটা সময়মতো ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছে, সেটিও ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে এ ভাইরাসটির বিস্তার অপেক্ষাকৃত দেরিতে ও নিয়ন্ত্রিতভাবে হয়েছে। তবে, হয়তোবা প্রতিকূল আবহাওয়াই একমাত্র কারণ নয়। ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে এ ভাইরাসটি যখন এসব দেশে পৌঁছেছে, তখন দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মিউটেশনের কারণেও ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। কারণ যাই হোক, আমাদের মতো দেশগুলোতে সংক্রমণের তুলনায় নিম্ন মৃত্যুর হার বিবেচনায় নিলে ভাইরাসটি এখানে যে তুলনামূলকভাবে অনেক কম উত্তাপ ছড়িয়েছে, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। অনেকে অবশ্য আমাদের এখানে বয়স্ক লোকের অনুপাত কম হওয়াটাও নিম্ন মৃত্যুহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বলে মনে করেন।
মার্চ-এপ্রিলে বাংলাদেশে যখন এ ভাইরাসটির প্রাথমিক বিস্তার ঘটে, তখন এখানে গরমকাল শুরু হয়ে গেছে। যদিও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এবং পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার প্রথম তিন থেকে চার মাস ক্রমশ বাড়ছিল, গত দুয়েক মাসে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। মে, জুন ও জুলাইয়ে যেখানে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার করে রোগী শনাক্ত হচ্ছিল, সেপ্টেম্বরে তা প্রায় দেড় হাজারে নেমে আসে। অথচ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব ধরনের কর্মকাণ্ড, যথা গণপরিবহন, বিপণিবিতান, অফিস-আদালত, কলকারখানা, অনেকটা পুরোদমে খুলে দেওয়া হয়েছে। তাহলে, সংক্রমণ কমে আসলো কীভাবে?
দেশের কর্তাব্যক্তিরা হয়তো বলবেন, আমরা ভালোভাবে সামাল দিতে পেরেছি। বিপরীতে সমালোচকদের বক্তব্য, আসলে টেস্ট হচ্ছে কম। এ অভিযোগটা যদি সঠিকও হয়, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার যেখানে ২০ শতাংশের উপরে ছিল, সেখানে প্রায় অর্ধেকে (১০ শতাংশের কাছাকাছি) নেমে আসা কি এটাই বোঝায় না যে, ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়েছে? তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, ভাইরাসটি এখনো যথেষ্ট সক্রিয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা মোতাবেক, ধারাবাহিকভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার অন্তত পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে না আসা পর্যন্ত আপনি এমনটি ভাবতে পারছেন না যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। [করোনাভাইরাস ডিসিস ২০১৯ (কোভিড-১৯) সিচুয়েশন রিপোর্ট-৯ | ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ইন্দোনেশিয়া | ডাটা অ্যাজ অব: ২৪ মে ২০২০]
আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, আসন্ন শীতে পরিস্থিতি কী আকার ধারণ করবে, বলা মুশকিল। ভাইরাসটি অনুকূল আবহাওয়ায় আরও শক্তিশালী রূপ ধারণ করতে পারে। ডব্লিউএইচও আসন্ন শীতে ভাইরাসটি নতুন করে জোরালো আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করেছে। প্রধানমন্ত্রীও এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বারংবার দেশবাসীকে সতর্ক করে যাচ্ছেন। এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মহামারি শুরুর পর এই প্রথম বাংলাদেশ শীতের মৌসুমে যাচ্ছে। শীতের আগমনী বার্তা আসতে না আসতেই সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শনাক্ত-মৃতের সংখ্যা ও পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। কাজেই, এমন হতে পারে যে, আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে। ফুসফুসজনিত সমস্যা ছাড়াও বয়স্ক লোকজন, অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ যাদের ইমিউনিটি দুর্বল কিংবা যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি রোগের মতো কো-মরবিডিটি রয়েছে, তাদের জন্য মৌসুমটি একটি কঠিন পরীক্ষা হয়ে দেখা দিতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে— এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কী? অনেকেই ভেবে বসে আছেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারি নাগাদ টিকা চলে আসছে। কাজেই, এত চিন্তার কী আছে? তেমনটি হলে তো ভালোই। তবে, সম্প্রতি ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক (ইমার্জেন্সি ডিরেক্টর) মাইকেল রায়ান এ বিষয়ে এক প্রশ্নোত্তরে বলেন, যেকোনো জায়গায় উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছাতে চার থেকে ছয় মাস সময় লাগবে। (ভাইরাস ওয়েভ মাস্ট বি ফট উইদাউট ভ্যাকসিনস: ডব্লিউএইচও | এবিএস-সিবিএন নিউজ, ১৯ নভেম্বর ২০২০) তার মানে, বিশ্বব্যাপী সর্বত্র ভোক্তা পর্যায়ে টিকা পৌঁছাতে কম করে হলেও আরও মাস ছয়েক সময় লেগে যেতে পারে। কাজেই, বুঝতেই পারছেন, এই শীতটা আমাদের জন্য কঠিন হতে পারে। যদিও দেশের জনগণ ইতোমধ্যে করোনা আতঙ্ক অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে এবং করোনার সঙ্গে সহাবস্থানে একরকম অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু, পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করলে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অত্যধিক চাপে পড়ে যেতে পারে। কাজেই, পর্যাপ্ত সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই একমাত্র বিকল্প নয় কি?
আমার মনে হয় না, দেশ এখন আবারও ‘লকডাউনে’ যাওয়ার মতো অবস্থায় আছে। কাজেই, সেরকম পরিস্থিতির যাতে উদ্ভব না হয়, তার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা চাই। মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন, অহেতুক ঘোরাফেরা এবং জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে জোরালো প্রচারণা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মীসহ ব্যাপক জনগোষ্ঠীকেও কার্যকরভাবে সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্যাম্পেইনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের সর্বত্র অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোরও যথেষ্ট জনসম্পৃক্ততা রয়েছে। এগুলোকে কাজে লাগানো গেলে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো সহজ হতে পারে। দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে কীভাবে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
মাস্ক পরিধানের বিষয়টি কার্যকর করার বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন ও প্রত্যয়ী বলেই মনে হয়। ইতোমধ্যে মাস্কবিহীন চলাফেরার ওপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। এ ছাড়া, সরকারঘোষিত ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতিও যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে এক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। তবে, এটা বাস্তবে রূপায়ন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের জরিমানার পাশাপাশি তাদের হাতে মাস্কও তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। মাস্ক ক্যাম্পেইনিংয়ের অংশ হিসেবে সারাদেশে গরিব-দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর কাছে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া যেতে পারে। এতে যে কেবল তাদের হাতে মাস্ক পৌঁছাবে তা নয়, এটি ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের অনেক জেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য বা প্রশাসন এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন এসেছে। তারা অনেকেই মসজিদে মসজিদে মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। দেশের সব জেলাতেই তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ কর্মসূচি বিস্তৃত করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সংক্রমণ বিস্তারে গণপরিবহন, শপিং মল, বাস বা লঞ্চ স্টেশনসহ পাবলিক স্থানগুলো বিরাট ভূমিকা রাখে। কাজেই, এগুলোকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা ও জনসমাগম সীমিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
দেশে এখন পর্যন্ত পিসিআর টেস্টই করোনা শনাক্তকরণে একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট এই পরীক্ষা পদ্ধতির সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। আমার বিশ্বাস, পিসিআর টেস্টের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে করোনার হটস্পটগুলোর বিষয়ে একটি মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেছে। আগামী দিনে যাতে সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেজন্য এসব এলাকার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যেহেতু অ্যান্টিজেন টেস্টে দ্রুত রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব এবং এটি পিসিআর পদ্ধতির মতো জটিল নয়, এটি চালু করা গেলে অনেক বেশি মানুষকে টেস্টের আওতায় আনা যেত। অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে কোন এলাকায় কী লেভেলে সংক্রমণ হয়েছে, সে বিষয়ে আরও স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যেত। একারণে এ টেস্টগুলো দ্রুত চালু করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা দরকার।
আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দ্রুত টিকা আসবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে, টিকাপ্রাপ্তি এবং তা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সে বিষয়ে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, টিকা যে শতভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে, বিষয়টি তেমন নয়। মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) যেসব টিকা অন্যূন ৫০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখাবে, সেগুলো অনুমোদন দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। [করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আপডেট: এফডিএ টেকস অ্যাকশন টু হেলপ ফ্যাসিলিটেট টাইমলি ডেভেলপমেন্ট অব সেফ, ইফেকটিভ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস | এফডিএ নিউজ রিলিস, জুন ৩০, ২০২০]
যেসব টিকা ট্রায়াল পর্যায়ে অনেক বেশি কার্যকারিতা দেখাচ্ছে বলে খবর আসছে, সেগুলো যখন ফিল্ড লেভেলে প্রয়োগ করা হবে, তখন সমভাবে কার্যকর নাও হতে পারে। সুতরাং, টিকা নিলেই আপনি সুরক্ষিত হয়ে গেলেন, এমনটি ভেবে বসার সুযোগ নেই। কাজেই, টিকা না আসা পর্যন্ত, এমনকি টিকা আসার পরেও আমাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
লেখক: ড. মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন, অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
muhsin_ju@yahoo.com
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments