রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৫ হাজার পদের প্রতীক্ষায় ৬ লাখ প্রার্থী, বিসিএসে ৫ লাখ

নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর অপেক্ষায় তারুণ্য

সেপ্টেম্বর থেকেই পরীক্ষা: বিএসসি, এখনি বিসিএস নয়: পিএসসি

লকাডউন ও কোভিড-১৯ এর কারণে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষাগুলো প্রায় সাত মাস ধরে বন্ধ আছে। ফলে, একদিকে যেমন সরকারি অনেক পদ শূন্য, অন্যদিকে বেকারত্বের যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন লাখো তরুণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ থেকে এমবিএ করা ফাহমিদা খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিসিএস, রাষ্ট্রায়াত্ব সাত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, অফিসারসহ কিছু পদে আবেদন করে এখন পরীক্ষার জন্য বসে আছেন। করোনার কারণে সবকিছু আটকে আছে।

কিছুটা হতাশার সুরে ফাহিমদা বলেন, ‘একটা পরীক্ষা বা একটা চাকরি মানে একজনের বিষয় নয়। এর সঙ্গে গোটা একটা পরিবার, অনেক মানুষের স্বপ্ন জড়িয়ে আছে। লেখাপড়া শেষ করা শিক্ষার্থীদের কষ্টগুলো কেউ বুঝতে চায় না।’

গত কয়েকদিন কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা বলছেন, নিয়োগ পরীক্ষাগুলো নিয়ে যে জটিলতা শুরু হয়েছে, তা কাটানো দরকার।

রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিয়োগের দায়িত্বে থাকা ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) বলছে, করোনা শুরুর পর থেকে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে ছিল। সংকট কাটাতে চলতি মাস থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী চার মাসে প্রায় হাজার পাঁচেক শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর ২০১৯ সালে কোন ব্যাংকে কত শূন্যপদ আছে, সেই চাহিদা পাওয়া গেলে সেগুলোরও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এর ফলে নিয়োগের জটিলতাগুলো কেটে যাওয়ার আশাও করছে বিএসসি।

তবে, সরকারি কর্ম-কমিশন (পিএসসি) বলছে, ছোটখাটো নিয়োগ পরীক্ষাগুলো শুরু হলেও তারা এখনি বিসিএসের মতো বড় পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবছে না। কারণ, এজন্য বিপুলসংখ্যক কেন্দ্রসহ যেসব প্রস্তুতি দরকার, সেগুলো নেই। ফলে গতবছরের শেষে বিজ্ঞপ্তি হওয়া ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষা খুব সহসা নেওয়ার সুযোগ নেই। দুই হাজার ১৩৫টি পদের জন্য এই পরীক্ষায় পৌনে পাঁচ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন।

বিসিএসের বাইরে সবচেয়ে বড় নিয়োগ হয় রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে। চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডে কর্মকর্তা (ক্যাশ) পদে ২ হাজার ২৪৬ জনের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এর মধ্যে তিনটি ব্যাংকের পরীক্ষা হলেও মামলার কারণে জনতা ব্যাংকের ৬৩৩টি পদের পরীক্ষা হয়নি। ওই পরীক্ষার তারিখ ছিল গত ২০ মার্চ। কিন্তু, করোনার কারণে পরীক্ষা আটকে যায়।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালকের ১৮৮টি, রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের ৭৭১টি, নয় ব্যাংকের অফিসার জেনারেলের পদের দুই হাজার ৪৬টি এবং অফিসার ক্যাশের এক হাজার ৫১১টি পদে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও এখনো পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি পুরনো বেশ কয়েকটি নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা বাকি।

বিএসসি বলছে, চলতি মাস থেকেই মৌখিক পরীক্ষাগুলো শুরু হবে। আটকে যাওয়া বড় পরীক্ষাগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকের ৬৩৩টি পদের পরীক্ষা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তাতে অন্তত ৪৮ হাজার প্রার্থী অংশ নেবেন।

এ ছাড়া, সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও অফিসার (ক্যাশ) পদের পরীক্ষাও এ বছরই হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এই তিন পদেই প্রায় ছয় লাখ আবেদনকারী। এর মধ্যে সিনিয়র অফিসার পদে আড়াই লাখ, অফিসার পদে দুই লাখ এবং অফিসার (ক্যাশ) পদে দেড় লাখ প্রার্থী আছেন।

লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি মৌখিক পরীক্ষাগুলো সেপ্টেম্বর থেকেই নেওয়া শুরু করতে চায় বিএসসি। এর মধ্যে ২০১৬ সালে জনতা ব্যাংকের ৪৬৪টি সহকারী এক্সিকিউটিভ অফিসার পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা হলেও ভাইভা শেষ হয়নি। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে।

এ ছাড়া, একই বছরের ১০ মার্চ জনতা ব্যাংকের ৫৩৬টি অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার (টেলার) পদের পরীক্ষাও মামলার কারণে আটকে ছিল। এর মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২০ সেপ্টেম্বর থেকে। জনতা ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা (জেনারেল) হিসেবে ২০১৭ সালের ৮৮৯টি পদের ভাইভা শুরু হবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। যা চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রার্থীরা বলছেন, এর আগে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার দায়িত্বে থাকলেই প্রশ্নপত্র বেশি ফাঁস হয়। সামনের দিনগুলোতে যেন তাদের দায়িত্ব না দেওয়া হয়।

তবে, আরও হাজারখানেক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন ব্যাংকগুলোর প্যানেল বা অপেক্ষমাণ তালিকা নিয়ে। তারা বলছেন, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর যেসব পদে প্রার্থীরা যোগ দেন না এবং পদগুলো শূন্য থাকে, সেগুলোতে নিয়োগের জন্য প্যানেল করা হয়। কিন্তু, সেই কাজটি সমন্বিতভাবে করা হয় না। ফলে দেখা যায় কাউকে কোনো প্যানেলে রাখা হচ্ছে, কিন্তু, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তিনি আরও একাধিক পরীক্ষা দিচ্ছেন এবং অন্য কোনো ব্যাংকে চাকরি পাচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানে পিএসসির মতো বিএসসিরও সমন্বিত আবেদন চাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রার্থীরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব আরিফ হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনার কারণে সব নিয়োগ পরীক্ষাগুলো আটকে ছিল। তবে, আমরা ধীরে ধীরে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছি। ১৮ সেপ্টেম্বরে থেকেই শুরু হবে এবং এরপর ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা চলবে। প্রথমে কম প্রার্থী আছে এমন পরীক্ষাগুলো হবে। এরপর বেশি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা। পাশাপাশি আমরা ২০১৯ সালে কোন ব্যাংকে কতগুলো শূন্য পদ সেই চাহিদা চেয়েছি। সেগুলো পেলে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া শুরু হবে।’

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা এ বছরের মধ্যে চার হাজার ৭৫০টি পদে নিয়োগের সব পরীক্ষা নিতে চাই, যেগুলোর বিজ্ঞাপন আগে দেওয়া হয়েছে। সেটা করলেই সব জট কেটে যাবে। ফলে, ছেলেমেয়েরাও চাকরি পাবে। ব্যাংকগুলোরও জনবল সংকট কমবে।’

নন-ক্যাডারের কিছু পরীক্ষা হলেও এখনি বিসিএস নয়

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের প্রথম পছন্দ বিসিএস। অবশ্য বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে, দিন দিন এই পরীক্ষার জন্য আগ্রহ বাড়ছে। এর মধ্যে ৪১তম বিসিএসে রেকর্ডসংখ্যক চার লাখ ৭৫ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি।

কবে নাগাদ বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে?, জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চার-পাঁচ লাখ ছেলেমেয়ের বিসিএস দেওয়ার জন্য আট বিভাগে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার। এটি বিপুল কর্মযজ্ঞ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তো বন্ধ। তারা না খুললে, যথাযথ প্রস্তুতি না নিলে বিসিএস পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে, অল্প প্রার্থী আছে এমন বিভিন্ন নন-ক্যাডারের কিছু পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে। আগারগাঁওয়ে পিএসসি ভবনে তিন শ প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। সেখানেই এই পরীক্ষাগুলো হচ্ছে। পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষাগুলো শুরু হচ্ছে।’

শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Govt won’t raise power tariff despite pressure from IMF: energy adviser

The energy adviser explained that while the IMF recommended a tariff hike to ease the subsidy burden in the power sector, the government emphasised the adverse effects such a move would have on citizens already grappling with high inflation

20m ago