সিনেমার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে চাচ্ছি: জসিম আহমেদ
জসিম আহমেদ একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। টেলিভিশন নাটকও পরিচালনা করেছেন। তবে সিনেমাতেই বেশি ব্যস্ত তিনি। পৃথিবীর নানা উৎসবে গিয়েছে তার পরিচালিত সিনেমা। তার পরিচালিত ‘দাগ’ সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছে।
তিনি দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন তার পরিচালিত সিনেমা দিয়ে। তার প্রযোজিত সিনেমা এবার যাচ্ছে সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসবে। এসব বিষয় নিয়ে জসিম আহমেদ কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
করোনাকালেও খুশির সংবাদ যে আপনার একটি সিনেমা সাংহাই চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে।
জসিম আহমেদ: আসলে এটা আমার ও আমাদের বাংলা সিনেমার জন্য খুশি ও আনন্দের সংবাদ। ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমাটি চীনের সাংহাই উৎসবে যাচ্ছে। চীনের মর্যাদাসম্পন্ন সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ডের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়েছে দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’। এটি সাংহাই উৎসবের ২৩তম আসর। আগামী ২৫ জুলাই এর উদ্বোধন করা হবে। চলবে ৩ আগস্ট পর্যন্ত।
আপনি তো সিনেমাটির প্রযোজক, কিভাবে এই আনন্দের সংবাদটি নিশ্চিত হলেন?
জসিম আহমেদ: এশিয়ান নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড বিভাগের প্রধান আমাকে ইমেইলে এই আনন্দের সংবাদটি নিশ্চিত করেন। আমরা খুব আনন্দিত এ কারণে যে এ গ্রেডের তালিকাভুক্ত একটি উৎসবে আমাদের সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’র প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে। আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে এটুকু বলতে পারি বিদেশের এই বড় উৎসবে সিনেমাটি সবাইকে মুগ্ধ করবে।
‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমায় তো অনেকদিন পর অপি করিম অভিনয় করেছেন?
জসিম আহমেদ: ঠিক বলেছেন। এর মাধ্যমে অপি করিম প্রায় ১৫ বছর পর সিনেমায় অভিনয় করলেন। এই সিনেমায় তার চরিত্রের নাম সোমা। মেয়েটি কলকাতার। বিবাহিতা। স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। তার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। মূলত মানিক বন্দোপাধ্যায়ের দুটি ছোট গল্প ‘বিষাক্ত প্রেম’ ও ‘সুবালা’ থেকে গল্প নিয়ে এই সময় উপযোগী করে আমরা কাজটি করেছি। এটি পঞ্চাশ দশকের গল্প হলেও চলতি সময়টা স্থান পেয়েছে।
সিনেমাটি মুক্তি পাবে কবে?
জসিম আহমেদ: আশা করছি ২০২১ সালের মার্চে ‘মায়ার জঞ্জাল’ মুক্তি দিতে পারব।
আপনার সিনেমা পরিচালনার বিষয় নিয়ে কিছু বলুন।
জসিম আহমেদ: ‘রক্তের অক্ষরে’ নামে একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রথম পরিচালনা করি। এটি বেশ আগে। ১৯৯৭ সালে। এছাড়াও শেষ পরিচালনা করি ‘চকলেট’ নামের একটি সিনেমা। মাঝে আরও বেশ কিছু সিনেমা করেছি। আমার পরিচালিত ‘দাগ’ সিনেমাটি চলেছে সারা বিশ্বে।
একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কি ধরনের সমস্যা দেখেন?
জসিম আহমেদ: ওভাবে কোনো সমস্যা দেখি না। অনেকে বলেন বাজেট বড় সমস্যা। আমার কাছে বাজেট কোনো সমস্যা না। আমি মনে করি ভালো আইডিয়া থাকলে, ভালো গল্প থাকলে, বাজেট সমস্যা হয় না। শোনা যায় শিল্পীরা ঝামেলা করেন। এটাও নাকি সমস্যা। আমি তা মনে করি না। আসলে যেসব শিল্পী দেখতে পান বা মনে করেন– এই পরিচালককে দিয়ে হবে না, তখনই তারা ‘ঝামেলা’ করেন।
তাহলে আমাদের সিনেমায় কোনোই সমস্যা নেই আপনার দৃষ্টিতে?
জসিম আহমেদ: আছে। আমাদের সিনেমার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউশন সমস্যা। আমাদের অনেক বেশি সিনেমা হল নেই। যা ছিল তাও নেই এখন। এ দেশে ‘মাটির প্রজা’র মতো ভালো সিনেমা মাত্র একটি হলে মুক্তি পেয়েছিল। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার একটাই উপায়— যখন দর্শকরা বেশি বেশি হলে যাবেন, হল সমস্যা থাকবে না, হল সংখ্যা বাড়বে। এজন্য দরকার প্রচুর সিনেপ্লেকস। দেখুন, আমাদের দেশের সিনেপ্লেক্সগুলো ভালো সিনেমা চালানোর চেষ্টা করছে।
আপনার সিনেমা নিয়ে কি ধরনের স্বপ্ন দেখছেন?
জসিম আহমেদ: আমার সিনেমা নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে চাচ্ছি। এমন সিনেমা বানাব দেখে মনে হবে আন্তর্জাতিকমানের সিনেমা। বাংলাদেশের সিনেমাকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাব। এটাই আমার সংগ্রাম।
Comments