গণস্বাস্থ্যের কিট, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণে দেশীয় রাজনীতি

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস পরীক্ষার ‘জি র‍্যাপিড ডট ব্লট’ কিট নিয়ে যা ঘটছে, তার ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না। ‘গবেষণাগারের পরীক্ষায় আমরা সফল হয়েছি, এবার পরীক্ষা করে অনুমোদন দিন’— গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বক্তব্য বা অবস্থান।

একটি স্বচ্ছ-সাধারণ বিষয় রাজনীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কতটা অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হতে পারে, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে হয়ত ইতিহাসে থেকে যাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট প্রসঙ্গটি।

সারা পৃথিবী তো বটেই, বাংলাদেশও কঠিনতম সময় অতিক্রম করছে। সামনের দিনগুলোতে কী অপেক্ষা করছে, আমরা জানি না। করোনাভাইরাসের মহামারি কমে যাবে, নাকি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি বা স্পেনের আকার ধারণ করবে, বলা সহজ নয়। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস মোকাবিলায় সাফল্যের দুটি নজির পৃথিবীতে দৃশ্যমান।

একটি, কঠিন লকডাউন এবং অধিক সংখ্যক পরীক্ষা। এই প্রক্রিয়ায় চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ সাফল্য পেয়েছে।

দ্বিতীয়টি, সীমিত লকডাউন এবং অধিক সংখ্যক বা গণহারে পরীক্ষা। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, আইসল্যান্ড এই প্রক্রিয়ার উদাহরণ। দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রাইফ থ্রু পদ্ধতি পৃথিবীতে আলোড়ন তৈরি করেছে। নিজেদের তৈরি র‍্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করেছে তারা।

পৃথিবীতে সাড়া জাগিয়ে এই প্রক্রিয়ায় নতুন যুক্ত হয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগাল। নিজেদের তৈরি এমন একটি র‍্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবন করেছে সেনেগাল, যার মূল্য মাত্র এক ডলার। যা দিয়ে পরীক্ষার জন্যে কোনো গবেষণাগার দরকার নেই। যে কোনো জায়গায় পরীক্ষা করা যায়। উপসর্গ ও উপসর্গহীন সব নাগরিককে গণহারে পরীক্ষা করছে সেনেগাল। আক্রান্তদের আলাদা করে সংক্রমণের হার কমিয়ে এনেছে। আমেরিকা নাস্তানাবুদ হয়ে র‍্যাপিড টেস্টের অনুমতি দিয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে র‍্যাপিড টেস্ট কিট উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের অনুমতির প্রক্রিয়া চলছে।

নিউইয়র্কের ফার্মাসিগুলোতেও করোনা পরীক্ষা হবে।

ভারত চীন থেকে র‍্যাপিড টেস্ট কিট আমদানি করেও মানসম্পন্ন না হওয়ায় বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু, নিজেদের বিজ্ঞানীদের তৈরি  র‍্যাপিড টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা চালু করেছে। নেদারল্যান্ড চীনের  র‍্যাপিড টেস্ট কিট ফেরত দিলেও,  র‍্যাপিড টেস্ট বাদ দেয়নি।

বাংলাদেশের জন্যে দীর্ঘ সময় কঠিন লকডাউনে থাকা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ তা সমর্থন করে না। কয়েক কোটি গরিব মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানোর সামর্থ্য বা সক্ষমতা কোনোটিই আমাদের নেই। সীমিত লকডাউনে অধিকসংখ্যক পরীক্ষার পথ অনুসরণ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু, মাঠে নেমে দেখা গেল, বাংলাদেশের সেই সক্ষমতাও নেই।

এখানে প্রাসঙ্গিক ও আশীর্বাদ হিসেবে সামনে এসেছিল গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত করোনা শনাক্তের কিট।

উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজ্ঞানীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেনেগালের কিটের সঙ্গে এর বেশ সাদৃশ্য রয়েছে।

গণস্বাস্থ্যের কিট দিয়ে পাঁচ থেকে ১৫ মিনিটে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। এই পরীক্ষার জন্যে আধুনিক ল্যাব জরুরি নয়। পরীক্ষা করা যাবে যে কোনো জায়গায়। ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। পুরো মাত্রায় উৎপাদনে গেলে এই খরচ ২০০ টাকায় নেমে আসতে পারে।

বিদেশ থেকে কিট আমদানি করে পরীক্ষা করলে খরচ পড়বে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। বর্তমানে পিসিআর মেশিনে যে পরীক্ষা চলছে, জনসংখ্যার তুলনায় তা অত্যন্ত নগণ্য।

সেনেগালের কিটের সঙ্গে আমাদের সাদৃশ্য থাকলেও, আচরণে বৈসাদৃশ্য প্রকট। সেনেগাল পুরোমাত্রায় কার্যক্রম শুরু করে আল জাজিরার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। আর আমরা তর্ক বা রাজনীতি করছি। পরীক্ষা না করেই কিটের দোষ-ত্রুটি বের করছি, সন্দেহ করছি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যে বিজ্ঞানী-গবেষকরা কিট উদ্ভাবন করেছেন তাদের সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমরা কিছুটা জেনেছি। সে বিষয়ে আরও দু-একটি কথা।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা করছিলেন ড. বিজন কুমার শীলসহ একদল গবেষক। ড. বিজন কুমার শীল গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস  সারা পৃথিবীতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাস হচ্ছে সার্স ভাইরাসের রূপান্তরিত রূপ। সার্স ভাইরাসের সঙ্গে যার প্রায় ৮২ শতাংশ মিল রয়েছে।’

এখন ডেঙ্গু নয়, গবেষণা করতে হবে করোনাভাইরাস নিয়ে। জানুয়ারির প্রথম থেকে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন ও ড. ফিরোজ আহমেদ গবেষণা শুরু করেন।

ড. বিজন কুমার শীল হচ্ছেন সেই গবেষক যিনি সিঙ্গাপুরে কর্মরতকালীন ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করেছিলেন। যার  পেটেন্ট রয়েছে তার নামে। চীন উচ্চমূল্যে ড. বিজনের কিট ফর্মূলা কিনে নিয়ে সার্স ভাইরাস শনাক্তে সফলভাবে কাজে লাগিয়েছে।

শুধু এটাই নয়। ড. বিজন ১৯৯৯ সালে পিপিআর ভ্যাকসিনের আবিস্কার করেছিলেন। যা ছাগলের মড়ক ঠেকানোর ভ্যাকসিন হিসেবে পৃথিবীতে পরিচিত। দেশে ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি সিঙ্গাপুরে চলে যান ২০০২ সালে। সিঙ্গাপুর সরকারের চাকরি নিয়ে গেলেও, তিনি একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।

অনুজীববিজ্ঞানী হিসেবে ড. বিজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত ও পরিচিত। অনেকগুলো গবেষণায় ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছেন। সার্স ভাইরাস শনাক্তের কিটসহ ১৪টি উদ্ভাবনের পেটেন্ট আছে তার নামে। আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জার্নালে তার বহু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

সার্স ভাইরাস গবেষণার ধারাবাহিকতায় ড. বিজন তার সঙ্গী গবেষকরা মিলে করোনাভাইরাসের কিট উদ্ভাবন করেছেন।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দেশীয় বিজ্ঞানী-গবেষকদের কিট যাচাই না করেই সন্দেহ পোষণ করা হচ্ছে!

গণস্বাস্থের কিট তৃতীয় পক্ষ দ্বারা কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্যে সরকারের কাছে জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু, নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে আলোচনা হবে কি নিয়ে? বক্তব্য নিয়ে, না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবন নিয়ে?

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন, উদ্ভাবিত করোনা পরীক্ষার কিট অনুমোদনের জন্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। তিনি অনুমোদনের বেশ কয়েকটি ধাপের কথা বলেছেন। বলেছেন, ধাপগুলো অনুসরণ করলে কিট পরীক্ষা করা হবে। এই বক্তব্যের পর পরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন না দেওয়ায় র‍্যাপিড টেস্টে যাবে না বাংলাদেশ। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট পরীক্ষা করে দেখার বিষয়টিও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বক্তব্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে মিল নেই।

একটি দেশের ওষুধ প্রশাসন অবশ্যই কঠিন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অনুমোদন দিবে। তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু, এটাও মনে রাখতে হবে, এগুলো বেশ দীর্ঘ সময়-সাপেক্ষ প্রক্রিয়া এবং স্বাভাবিক সময়ের জন্যে প্রযোজ্য প্রক্রিয়া। পৃথিবী এখন অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমরা এখন একটি যুদ্ধকালীন পরিবেশে আছি। যুদ্ধের মোকাবিলা স্বাভাবিক সময়ের কাজ বা প্রক্রিয়া দিয়ে করা যায় না।

বর্তমান সময়ের পৃথিবী যুদ্ধকালীন গতিতেই চলছে। একটি ভ্যাকসিন গবেষণাগারে আবিস্কারের পরে ১০-১২টি ধাপ অতিক্রমের পর বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু, করোনা ভ্যাকসিন আবিস্কারের ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ বাদ দিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে কত অল্প সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়া যায়।

সাধারণত মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আগে গিনিপিগ বা অন্য কোনো প্রাণীর শরীরে পরীক্ষা করা হয়, ঝুঁকি এড়ানোর জন্যে। করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করা হচ্ছে সরাসরি মানুষের (স্বেচ্ছাসেবীদের) শরীরে। যার শরীরে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হচ্ছে তার জীবনের জন্যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

কিন্তু, মানবজাতির বৃহত্তর স্বার্থে সরাসরি মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন পরীক্ষার গবেষণা করছে চীন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নরওয়ের একটি প্রতিষ্ঠান বলছে, পরীক্ষার সব ধাপ সম্পন্নের আগেই করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে হতে পারে। এই ভ্যাকসিন পরীক্ষার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। আরও দুটি ধাপ বাকি আছে। সেটা যেহেতু সময় সাপেক্ষ সে কারণে দুই ধাপ আগেই বাণিজ্যিক উৎপাদন নিয়ে আলোচনা চলছে। গত ২৬ এপ্রিল সিএনএন এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে, এর আগে এমন ঘটেছে কিনা জানি না।

তাছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিস্কার করেনি। তারা উদ্ভাবন করেছেন করোনাভাইরাস শনাক্তের একটি কিট। মানুষের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এতে মানুষের শরীরের ক্ষতি হওয়ার সামান্যতম কোনো সম্ভাবনা নেই। ডাক্তার-রাজনীতিবিদ-বিশেষজ্ঞ-অজ্ঞ এক কাতারে মিলে বলছেন, এই পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভুল রেজাল্ট আসতে পারে। তর্কের জন্যে ধরে নিলাম তাদের এই দাবি সঠিক।

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে পিসিআর মেশিনে এখন যে পরীক্ষা চলছে, সেটাও শতভাগ সঠিক ফল দিচ্ছে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই দেয় না। পিসিআর মেশিনের পরীক্ষাতেও ভুল ফল আসে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তা ঘটেছেও। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পরীক্ষা হচ্ছে চীনের কিট দিয়ে। চীনের কিটের সারা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্যতা কেমন? নেদারল্যান্ড চীনের ছয় লাখ কিট ফেরত দিয়েছে মানহীন বলে। ইতালি, চেক রিপাবলিক বলেছে চীনের কিট ৮০ শতাংশ অকার্যকর।

একটি তথ্য জেনে রাখা দরকার, র‍্যাপিড টেস্ট কিটের মান দেশ ভেদে আলাদা। চীনের র‍্যাপিড টেস্ট কিট যেমন মানহীন-অকার্যকর হিসেবে পরিচিত, দক্ষিণ কোরিয়ার কিট মানসম্পন্ন ও কার্যকর হিসেবে পরিচিত-স্বীকৃত। র‍্যাপিড টেস্ট কিট মানেই সব কিট এক নয়।

বাংলাদেশে পিসিআর মেশিনে কোরিয়া, আমেরিকা বা ইউরোপের উন্নতমানের কিট কাজ করে কিনা, তা নিয়ে ডাক্তার-বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও আলোচনা আছে।

শুরুতেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। এখন সামনে আনা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার র‍্যাপিড টেস্টের অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়টি।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যা বলছে, তা পালন করতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠেছি। আসলে কি তাই? তারা তো বলেছে, পরীক্ষা পরীক্ষা এবং পরীক্ষা। মানে যত বেশি সম্ভব তত পরীক্ষা। আমরা তা করছি? সেই সক্ষমতা আছে আমাদের?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনা-সামর্থ্য কাজে লাগানো যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাও নয়। করোনাভাইরাস ইস্যুতে মাস্ক ব্যবহার করা, না করা নিয়ে তাদের নীতি সঠিক ছিল না। এমন নজির বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আছে।

একটু পেছনে ফিরে দেখি। স্যার ফজলে হাসান আবেদের ভাষায়, ‘শুরুতে আমরা যখন ওরস্যালাইন কর্মসূচির জন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে অনুমোদন চেয়েছিলাম তখন তারা বলেছিল, ডাক্তার ছাড়া কেউ এ কাজ করতে পারবে না।’ (ব্র্যাক ও ফজলে হাসান আবেদ বই থেকে)।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্র্যাকের ওরস্যালাইন কর্মসূচির সাফল্য দেখে বিস্মিত হয়েছিল, স্বীকৃতি দিয়েছিল। ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে ওরস্যালাইন কর্মসূচি সফল করে সম্মানিত হয়েছিলেন ফজলে হাসান আবেদ।

পৃথিবীর অনেক দেশ র‍্যাপিড টেস্ট করছে না, আবার অনেক দেশ করছে। কানাডা বা যুক্তরাজ্যের উদাহরণ দিয়ে কেউ কেউ বলছেন, তারা তো র‍্যাপিড টেস্ট করছে না। তারা যে আরও বহু কিছু করছে, তা বলা হচ্ছে না। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সামর্থ্য, সক্ষমতা কোনো কিছুর ধারে কাছেও আমরা নেই। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে দেখবো, না সেনেগালকে দেখবো?

যেখানে উল্লেখ করার মতো সংখ্যা পরীক্ষাই করতে পারছি না, সেখানে গণস্বাস্থ্যের কিট ভুল ফল দিতে পারে, এমন অনুমান করে কিট পরীক্ষাই করবো না? হতে পারে গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো না। আবার এমনও তো হতে পারে, উদ্ভাবকরা যা দাবি করছেন, সরকারের পরীক্ষাতেও তেমন ফলই আসলো। সেটা বাংলাদেশের জন্যে কত বড় আশীর্বাদ হতে পারে!

দেশের বিজ্ঞানী-গবেষকরা বিদেশে সফল হয়ে সম্মানিত হবেন, দেশে এসে উদ্ভাবন করলে আমরা তা যাচাই করেই দেখবো না? উৎসাহিত করবো না, সম্মান- শ্রদ্ধা না করে দূরে সরিয়ে দেব!

এ কেমন নীতি?

s.mortoza@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English
caretaker government proposal Bangladesh

Restoration of caretaker system to be proposed

The restoration of the caretaker government and the introduction of a bicameral system in parliament will be among the recommendations to be proposed by the Constitution Reform Commission.

7h ago