‘কেরামতিয়া’র কেরামতি
বছরখানেক আগের কথা। রংপুরে অনুষ্ঠিত হবে আন্তঃস্কুল হকি টুর্নামেন্ট। জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের মতো কেরামতিয়া হাই স্কুলও প্রতিযোগিতায় নাম লেখাল। স্কুলের কিশোরদের হকি স্টিক হাতে তুলে নেওয়ার শুরুটা তখনই।
পরের গল্পটা রূপকথার মতো। প্রতিভা, উদ্যম আর পরিশ্রমের সমন্বয়ে বছর না ঘুরতেই স্কুল পর্যায়ে দেশের সেরার মুকুট জিতে নিল কেরামতিয়া।
কৃত্রিম টার্ফ নেই। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও অপ্রতুল। এমনকি খেলার মূল উপাদান হকি স্টিকও ধার করতে হয়েছিল কেরামতিয়া হাই স্কুলের খেলোয়াড়দের! কিন্তু সকল বাধা-বিপত্তি জয় করে বিজয়ীর হাসি হাসল তারাই।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক জাতীয় স্কুল হকি চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল রংপুরের কেরামতিয়া হাই স্কুল। আজ রোববার ফাইনালে তারা ২-০ গোলে হারিয়েছে ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি হাই স্কুলকে।
মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে কৃত্রিম টার্ফে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে একক আধিপত্য দেখানো কেরামতিয়ার হয়ে গোল দুটি করেন নূর হোসেন বিশাল ও রেজাউল ইসলাম।
ম্যাচ শেষে শিষ্যদের প্রশংসায় ভাসান কেরামতিয়ার কোচ আবু সাইদ, যিনি নিজে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগে দুই মৌসুমে খেলেছেন, ‘(বাংলাদেশ হকি) ফেডারেশন আমাদের যেসব স্টিক দিয়েছিল তা নিম্নমানের, পরে বাংলাদেশ পুলিশের (হকি দল) কাছ থেকে আমরা ফাইবারের তৈরি হকি স্টিক ধার করি। কাজটা কঠিন হলেও নতুন স্টিকের সঙ্গে খেলোয়াড়রা মানিয়ে নিতে পেরেছে এবং নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ রেখে জয় তুলে নিয়েছে।’
স্কুল হকিতে এটাই কেরামতিয়ার সেরা সাফল্য। এর আগে জেলা পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতায় তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
ফাইনালের দুই গোলদাতার অন্যতম দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিশাল বলেন, ‘শিরোপা জেতার বিষয়টি আমরা কল্পনাও করিনি। চূড়ান্ত পর্বের দ্বিতীয় ধাপের ছয় দলের মধ্যে সুযোগ পেয়েই আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। আমরা ফাইনালে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। কারণ আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় প্রথমবারের মতো কৃত্রিম টার্ফে খেলেছে। অন্যদিকে, আরমানিটোলার খেলোয়াড়রা এখানে নিয়মিত অনুশীলন করে।’
প্রথমবারের মতো জাতীয় স্কুল হকির ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া রংপুরের দলটির প্রতিপক্ষ আরমানিটোলা গেল আসরে রানার্সআপ হয়েছিল। এবারও লড়াইয়ে পেরে না উঠে একই ভাগ্য বরণ করতে হলো তাদের।
উল্লেখ্য, ২০০৩ ও ২০১২ সালে স্কুল হকিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আরমানিটোলা। আব্দুস সাদেক, সাব্বির ইউসুফ, হোসেন ইমান চৌধুরী, জামাল হায়দার, রফিকুল ইসলাম কমল, রাসেল মাহমুদ জিমি ও মাকসুদুল আলম হাবুলের মতো বাংলাদেশের অনেক বর্তমান ও সাবেক জাতীয় তারকার হকির হাতেখড়ি হয়েছিল এই স্কুল থেকে।
Comments