তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

কেন হঠাৎ পাপিয়া!

Papiya Final-1.jpg
শামীমা নূর পাপিয়া। ফাইল ছবি

পাপিয়া কি হঠাৎ করে এই পাপিয়া হয়ে উঠেছেন? ঠিক এই প্রশ্নটি সামনে এসেছিল যখন খালেদ-সম্রাটদের কাহিনী জানা যায়। পাপিয়ার এই রঙিন জীবন-কাহিনী কি এতটাই গোপনীয় ছিল যে, দলের নেতা-মন্ত্রী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দারা কিছুই জানতেন না? খালেদ-সম্রাটদের সময়ও প্রশ্নটি উঠেছিল?

খালেদ-সম্রাটদের কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষ কিছুটা জানতেন। অনেক বেশি জানতেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ক্যাসিনো কাণ্ড যে তাদের অজানা ছিল না, তা তো পরবর্তীতে বোঝা-জানা গেল। পাপিয়া আলোচনায় ছিলেন। তাকে নিয়ে বহু গুঞ্জন ছিল। তার আশেপাশে কারা থাকতেন, তাও একেবারে অজানা ছিল না। কিন্তু এত বছর ধরে তার এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। এতদিন পাপিয়ার কীর্তি-কাহিনী জানা গেল না কেন? এখানে গণমাধ্যমের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ আসতে পারে বা আনা হতে পারে। খালেদ-সম্রাটদের সময়ে যেভাবে আনা হয়েছিল। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণমাধ্যমকে দায় নিতে হবে। পাপিয়া কর্মযজ্ঞের সংবাদ গণমাধ্যম প্রকাশ করতে পারেনি। গণমাধ্যম কেন সংবাদ প্রকাশ করেনি বা এসব ক্ষেত্রে কেন সংবাদ প্রকাশ করতে পারে না, অনেক কথা বলা যায়। তবে এই আলোচনায় তা আনছি না।

কিন্তু রাষ্ট্রের এত বাহিনী, এত সংস্থা কেন কিছু জানলেন না, নাকি সবই জানতেন?

উত্তর জানা থাকা যাদের দায়িত্ব, তাদের থেকে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না। ‘কিছুই জানতাম না’- জাতীয় কথা বলে বিস্মিত হতে দেখা যায় তাদের। এটা কি শুধুই বিস্মিত হওয়ার বিষয়?

পাপিয়াকে যারা নেতা বানালেন, তারা তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানেন না বা জানতেন না! ‘বিস্ময়’ প্রকাশ বা ‘বহিষ্কার’ করেই দায়মুক্ত তারা। খালেদ-সম্রাটদের সময়ও ঠিক একই ঘটনা দৃশ্যমান হয়েছিল।

২০১৪ সালে নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শামীমা নূর পাপিয়া। যে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। দুজনেই আওয়ামী রাজনীতির পরিচিত মুখ। একটি জেলা শহরের সাধারণ সম্পাদক কী করেন, কোথায় থাকেন, তা কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানেন না। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানেন না যে, তাদের সংগঠনের নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক এলাকায় থাকেন না, ঢাকায় থাকেন। জেলায় যুবলীগের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের তার সম্পর্কে অজানা থাকার কথা নয়। তারা জানেন না, জেলার সাধারণ সম্পাদক অধিকাংশ সময় অবস্থান করেন ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে। রাজা-বাদশাদের মত পাঁচ তারকা হোটেলের প্রেসিডেনসিয়াল স্যুট সব সময় ভাড়া করে রাখতেন। সত্যিই যদি না জেনে থাকেন, তাহলে কত কম জেনে তারা রাজনীতি করছেন!

পাপিয়া ৫৯ দিনে শুধু পাঁচ তারকা হোটেলের বিল পরিশোধ করেছেন ৮১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। প্রতিদিন বারের বিল পরিশোধ করতেন প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকায় পাপিয়ার কমপক্ষে দুটি পাঁচ তারকা মানের ফ্ল্যাট আছে।

প্রেসিডেনসিয়াল স্যুট ও ফ্ল্যাটে কি শুধু তারাই থাকতেন। শুধু তারা যে থাকতেন না, সেই তথ্যও সামনে এসেছে। বলা হচ্ছে হোটেল-ফ্ল্যাটে মেয়েদের রেখে অনৈতিক কাজ করানো হতো। জোর করে মেয়েদের বাধ্য করা হতো ইত্যাদি। ৫৮ লাখ টাকা উদ্ধার, মদ-পিস্তলসহ আরও বহু কিছু উদ্ধার করা হয়েছে। গণমাধ্যমে সেই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, পাঁচ তারকা হোটেলের স্যুটে, ফ্ল্যাটে কারা যেতেন? গোয়েন্দা সংস্থা অনেকদিন পাপিয়াকে অনুসরণ করেছে, তদন্ত করেছে। এই তথ্য নিশ্চয়ই জানা গেছে যে, কারা ছিলেন পাপিয়ার ঘনিষ্ঠজন? কারা যেতেন পাপিয়ার স্যুটে-ফ্ল্যাটে? তদন্তের স্বার্থে তা হয়ত প্রকাশ করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রকাশ করা হবে কী কোনোদিন?

পাপিয়ার স্যুটে কারা যাতায়াত করতেন, পাঁচ তারকা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলেও তা জানা যেতে পারে।

জানা কী যাবে কারা ছিলেন পাপিয়ার আশ্রয়দাতা? খালেদ-সম্রাটদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের কথা জানা যায়নি। কিছু ক্ষমতাবান পদ হারিয়েছেন শুধু।

৫৮ লাখ বা কোটি টাকা এদের কর্মকাণ্ডের তুলনায় অতি সামান্য। তাদের খরচের হিসাবের কাছেও এই পরিমাণ টাকা নগণ্য। স্যুট ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই পরিমাণ টাকা সম্ভবত আয় করাও সম্ভব নয়। তাদের জীবনযাপন ও টাকার অঙ্ক বড় কোনো চোরাকারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ইঙ্গিত দেয়। তদন্ত কতদূর পর্যন্ত যাবে? বিদেশি মদ আর মুদ্রা রাখার মধ্যেই তদন্ত মামলা সীমিত থাকবে না বলে আশা রাখি।

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

2h ago