তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

আমানত সুরক্ষা আইন: ক্ষতিপূরণ মাত্র এক লাখ!

ব্যাংকে যত টাকা জমা রাখেন না কেন, ক্ষতিপূরণ পাবেন সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা! বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’র প্রস্তাবনায় এ কথা লেখা আছে।
bb-logo_2.jpg

ব্যাংকে যত টাকা জমা রাখেন না কেন, ক্ষতিপূরণ পাবেন সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা! বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’র প্রস্তাবনায় এ কথা লেখা আছে।

একজন গ্রাহক হয়ত ব্যাংকে রেখেছেন পাঁচ লাখ টাকা, আরেকজন হয়ত রেখেছেন পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে উভয়ের অবস্থান সমান, পাবেন এক লাখ টাকা করে।

এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয় এটা।

প্রশ্ন দুটি।

১. ক্ষতিপূরণ এত কম কেন?

২. পাঁচ লাখ আর পাঁচ কোটি বা তারও বেশি পরিমাণ টাকার ক্ষতিপূরণ সমান, এ কেমন ‘আমানত সুরক্ষা আইন’?

তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ আসছে কেন?

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি দেউলিয়া বা বন্ধ হয়ে যায় বা গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে ব্যার্থ হয়, তবে ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ আসে। ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি আহসান এইচ মনসুরসহ অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ক্ষতিপূরণের টাকার অংক এমনই।

ভারতের দ্য হিন্দু বিজনেসলাইন অনলাইনের সাংবাদিক প্রতীম বসু জানালেন, ভারতেও ক্ষতিপূরণ এক লাখ রুপি ছিল। এবারের বাজেটে তা পাঁচ লাখ রুপি করা হয়েছে।

ব্যাংক গ্রাহকের থেকে যে আমানত জমা রাখে, তার এক লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা করা থাকে। এই বীমার জন্যে যে খরচ ব্যাংক তা গ্রাহকের থেকে কেটে নেয়। যদি এক লাখের পরিবর্তে এক কোটি টাকার বীমার ব্যবস্থা করা হয়, তবে গ্রাহকের থেকে টাকা কেটে নেওয়ার পরিমাণও বাড়বে। সেক্ষেত্রে জমানো টাকার থেকে লাভের পরিমাণ কমে যাবে।

ক্ষতিপূরণের এমন নিয়ম পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কার্যকর থাকলে, সেসব দেশে সমস্যা না হলেও, বাংলাদেশে কেন এত আলোচনা-সমালোচনা বা অস্থিরতা? সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। পৃথিবীর খুব কম দেশেই বাংলাদেশের মতো ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে চরম আস্থাহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। জনগণের আমানতের সেই টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামক দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে বিদেশে পাচারের ঘটনা সামনে এসেছে। অর্থাৎ ব্যাংকসহ আর্থিক খাত সুরক্ষিত নয়, জনমনে এমন ধারণা প্রায় স্থায়ী বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে।

সে কারণেই ‘ক্ষতিপূরণ কেন এত কম’ বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক বা অস্থিরতা দৃশ্যমান হয়েছে। আসলে বিষয়টি ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতিপূরণের অংক কম বা বেশির নয়। মূল বিষয় ব্যাংক-আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা ও গ্রাহকের আস্থাহীনতার সঙ্কট।

গ্রাহকের আতঙ্ক দূর করার জন্য ব্যাংক-আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার।

s.mortoza@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English

Dubious cases weaken quest for justice

A man named Labhlu Mia was shot dead in the capital’s Uttara during protests on the morning of August 5.

58m ago