‘জাফর ইকবালের মতো পরিপূর্ণ নায়ক চলচ্চিত্রে আসেনি’

জাফর ইকবাল ও ববিতা। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৩০টি সিনেমায় জুটি হয়ে কাজ করেছেন জাফর ইকবাল ও ববিতা। দুজনের মধ্যে ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। প্রেমের কথাও শোনা যেতো। আজ (৮ জানুয়ারি) নায়ক জাফর ইকবালের মৃত্যুদিনে ববিতা স্মৃতিচারণ করেছেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কাছে।

"জাফর ইকবাল অভিনীত শেষ সিনেমা 'লক্ষ্মীর সংসার'-এ একটি সংলাপ ছিলো- 'ভাই আজিমপুর যাবো কীভাবে?' এখনো আমার কানে বাজে তার বলা সংলাপটি। ছবিটি মুক্তির কিছুদিন পরই ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি পাড়ি দেন জীবনের ওপারে। এ যেনো শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যাওয়া। চলচ্চিত্রকে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন। নিজেকে নিয়ে যেতে পারতেন অনন্য উচ্চতায়। কিন্তু ক্যানসার বাধা হয়ে দাঁড়ালো বাংলা চলচ্চিত্রের এগিয়ে যাওয়ার পথে। কেড়ে নিলো একটি তরতাজা প্রাণ। ভেঙে গেলো হাজারো স্বপ্ন।

অনেক বড় বড় অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছি। আমাদের নায়করাজ রাজ্জাক ভাই, ফারুক, সোহেল রানাসহ আরও অনেকের অভিনয়ে আজও মুগ্ধ হই। ভারতের সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আমি কাজ করেছি। কিন্তু, আমার পছন্দের নায়ক ছিলো জাফর ইকবাল। তার কিছু জিনিস আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করতো। তিনি সুদর্শন ছিলেন। তার অভিনয় সাবলীল। তার কণ্ঠ, ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন সচেতনতা, রুচিবোধ চমৎকার। খুব ভালো ইংরেজি গান গাইতে পারতেন। গিটার বাজিয়ে ওর মুখে ইংলিশ গান শোনাটা আমাদের সময়কার যে কোনো মেয়ের জন্য স্বপ্নের একটি মুহূর্ত। ওর মতো পরিপূর্ণ কোনো নায়ক আমাদের চলচ্চিত্রে আসেনি।

জাফর ইকবাল খুব অভিমানী এবং আবেগপ্রবণ ছিলেন। কিছুটা বোহেমিয়ান স্বভাবের। জীবনযাপন ছিলো কিছুটা অগোছালো। নিজের সময়ে তো বটেই, পরের সব প্রজন্মকেই প্রভাবিত করেছেন তিনি। শুধু অভিনয় বা গান দিয়ে নয়, ব্যক্তিত্বের আবেদন, পোশাক, স্টাইল সব মিলিয়ে জাফর ইকবাল যেনো ছিলেন এক গল্পের রাজকুমার! নিজস্বতা ছিলো অভিনয়ে। সাবলীল, তবে চিত্তহরণে অনন্য। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে কয়েকজন নায়ক এসেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম জাফর ইকবাল। সময়ের তুলনায় তিনি এগিয়ে ছিলেন। ফ্যাশনে, শরীরী ভাষায় অনন্য। নায়ক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও সংগীতশিল্পী হিসেবেই নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। চলচ্চিত্রে যখন তিনি প্রবেশ করেন, সে সময়টাও খুব অনুকূলে ছিলো না। অনেক নামকরা নায়ক তখন ঢাকার চলচ্চিত্রে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও নিজের আলাদা পরিচয় তিনি গড়ে তুলেছিলেন। সত্তর ও আশির দশকে পর্দায় রাগী, রোমান্টিক, জীবন-যন্ত্রণায় পীড়িত চরিত্রে দেখা যেতো তাকে। সামাজিক প্রেমকাহিনি 'মাস্তান' ছবিতে  রোমান্টিক নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। 'নয়নের আলো' ছবির এক গ্রামীণ যুবকের চরিত্রেও দর্শক তাকে গ্রহণ করেছিলেন।

আমরা প্রায় ৩০টি সিনেমায় জুটিবদ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে সে সময়ে অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। এমন গুঞ্জনের সময়েই মুক্তি পায় 'অবুঝ হৃদয়'। বাংলা চলচ্চিত্র তাকে মনে রাখবে অনন্তকাল।"

Comments

The Daily Star  | English

Attack on NCP rally venue: Four killed as violence grips Gopalganj

At least four people were killed and dozens injured in daylong running battles between law enforcers and Awami League followers in Gopalganj yesterday.

3h ago