ষাটের দশকের রোমান্টিক নায়ক ছিলেন রহমান
রহমান নামটি নিলেই ফিরে যেতে হয় বহু বছর পেছনে। একেবারে ষাটের দশকের প্রথম দিকে। এই দশকের শুরুর দিকের রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তিনি সুনাম কুড়ান।
ওই সময়ে হিন্দি, উর্দু সিনেমার সঙ্গে টক্কর দিয়ে বাংলা সিনেমার নায়ক হিসেবে জয় করে নেন কোটি মানুষের ভালোবাসা। আজ তিনি নেই। ১৪ বছর হয়ে গেলো পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তার কালজয়ী সিনেমাগুলি আজও আছে।
সেসব আজও দর্শকরা আগ্রহ নিয়েই দেখেন। রহমান অভিনীত সিনেমার আবেদন এখনও আছে। এদেশের সিনেমা ততোদিন থাকবে, রহমান নামটিও থাকবে উজ্জ্বল হয়ে। তিনি এদেশের নায়ক, বাঙালীর নায়ক। একজন সফল রোমান্টিক নায়ক তো অবশ্যই।
রহমান অভিনীত প্রথম সিনেমা- এদেশ তোমার আমার। এহতেশাম পরিচালক ছিলেন। প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন ভিলেন চরিত্রে। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়।
এরপর, রহমান নায়ক হিসেবে এহতেশাম পরিচালিত- রাজধানীর বুকে সিনেমায় অভিনয় করেন। তার সঙ্গে নায়িকা ছিলেন চিত্রা সিনহা। রাজধানীর বুকে খুবই জনপ্রিয় একটি সিনেমা। নায়ক হিসেবে দাঁড়িয়ে যান রহমান।
রাজধানীর বুকে সিনেমাটি হিট হওয়ার পর রহমান অভিনয় করেন হারানো দিন সিনেমায়। এই সিনেমায় তার সঙ্গে নায়িকা ছিলেন শবনম। হারানো দিন সিনেমায় রোমান্টিক নায়ক হিসেবে রহমান ভীষণ সাড়া ফেলেন সবার মাঝে। রহমান-শবনম জুটি পায় এদেশের দর্শকরা।
হারানো দিন সিনেমার জন্য সেই সময়ে রহমান তিনহাজার টাকা সম্মানী পেয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে মুক্তি পেয়েছিলো এই সিনেমাটি। এতো বছর পর আজও হারানো দিন সিনেমার আবেদন ফুরিয়ে যায়নি। এদেশের সিনেমার ইতিহাসে এই নামটি রয়ে যাবে বহুদিন।
তার অভিনীত প্রীত না জানে রীত সিনেমাটিও একটি সাড়া জাগানো সিনেমা। ষাটের দশকে এই সিনেমার শুটিং থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। এরপর তাকে হারাতে হয় একটি পা।
অতঃপর রহমান নামের রোমান্টিক নায়কটির জীবনের ছন্দপতন ঘটে। সিনেমা থেকে দূরে ছিলেন বেশকিছুটা দিন। তবে-বিরতির পর আবারও সিনেমায় ফেরা হয়েছিলো তার।
চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত দেবদাস সিনেমায় তিনি চুনীলাল-এর চরিত্রে অভিনয় করেন। যা ছিলো ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত একটি সিনেমা।
এরপর রহমান সিনেমা পরিচালনায় নাম লেখান। মিলন নামে একটি সিনেমা পরিচালনা করেন, যা প্রশংসিত হয়। পরে আরও কিছু সিনেমা পরিচালনা করেন।
বাংলা সিনেমার পাশাপাশি তিনি উর্দু সিনেমাতেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত অন্যতম উর্দু সিনেমার নাম- চান্দা। এই সিনেমারও পরিচালক ছিলেন এহতেশাম। চান্দা ছিলো একটি রোমান্টিক সিনেমা।
আশির দশকে তিনি অভিনয় করেন স্বর্গ নরক সিনেমায়। এটিও একটি আলোচিত সিনেমা। এরপর বিশাল, টাকার অহংকার, বেপরোয়া সিনেমায় অভিনয় করেন শেষ দিকে।
রহমান ঢাকায় এসেছিলেন বাড়ি থেকে অভিমান করে। শাহবাগ হোটেলে চাকরি করতেন। সেখান থেকে বনে যান এদেশের সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। ২০০৫ সালে তিনি মারা যান। কিন্তু তার কাজ দিয়ে এখনও বেঁচে আছেন।
রহমান-শবনম জুটির সিনেমা বেশি হিট হয়েছিলো। অন্য নায়িকাদের সঙ্গে করা সিনেমাও হিট হয়েছিলো। নায়ক রহমান নেই, কিন্তু তার অভিনীত সাদাকালো যুগের সেই সিনেমাগুলি আজও স্বর্ণালী দিনের সিনেমা হিসেবে রয়ে গেছে।
রহমান অভিনীত সিনেমার আবেদন থাকবে বহু বছর। কেনো না- তিনিই যে এদেশের প্রথম রোমান্টিক নায়ক।
Comments