‘খান আতার মতো পরিচালক বললেন, আমার পরের সিনেমার নায়িকা তুই’

Anjana-2.jpg
অভিনেত্রী অঞ্জনা। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

অঞ্জনা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী। সেই সঙ্গে একজন জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পীও। ক্যারিয়ারে তিনশ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশে তার সময়ের সব নায়কের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে কাজ করেছেন। তার বেশিরভাগ সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছিলো। অশিক্ষিত সিনেমাটি তার অভিনয় জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। নৃত্যশিল্পী হিসেবে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সেরা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলেন বেশ আগে। চলচ্চিত্র তারকা অঞ্জনা কথা বলেছেন ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

আমার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম দস্যু বনহুর। সোহেল রানার প্রোডাকশন হাউজ থেকে নির্মিত হয়েছিলো। সোহেল রানা ছিলেন আমার নায়ক। অবশ্য আমার অভিনীত প্রথম সিনেমা ছিল সেতু। কাছাকাছি সময়ে দুটি সিনেমার শুটিং করি। একদিন আগে পরে দুটি সিনেমার সাইন করি। দস্যু বনহুর সিনেমার জন্য সেই সময়ে সাইনিং মানি নিয়েছিলাম ২০ হাজার টাকা। সেতু সিনেমার জন্য সাইনিং মানি নিয়েছিলাম দশ হাজার টাকা। দস্যু বনহুর পরিচালনা করেছিলেন প্রয়াত শামসুদ্দিন টগর। সেতু সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন প্রয়াত বাবুল চৌধুরী।

জীবনের প্রথম শুটিং করি এফডিসিতে। ক্যামেরায় ছিলেন আবদুল লতিফ বাচ্চু। সিনেমায় আসার আগে আমি ছিলাম টেলিভিশনের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী। যার কারণে আমার মধ্যে কোনোরকম ক্যামেরা ভীতি ছিলো না। নাভার্সও ছিলাম না। এভাবে দুটি সিনেমার শুটিং শেষ হলো। প্রথম মুক্তি পেলো দস্যু বনহুর। সিনেমাটি সুপারডুপার হিট হলো। দর্শকরা নতুন নায়িকা হিসেবে আমাকে পেলেন। তার কিছুদিন পর মুক্তি পায় আমার অভিনীত সেতু সিনেমাটি। এই সিনেমাটিও দর্শকরা  গ্রহণ করেন।

আমার অভিনীত তৃতীয় সিনেমার নাম প্রিয় বান্ধবী। পরিচালনা করেন মোতালেব হোসেন। প্রিয় বান্ধবী সিনেমাটি দর্শকরা গ্রহণ করলেন। এরপর ডাক পেলাম খান আতার মতো বিখ্যাত পরিচালকের। তিনি একদিন বাসায় ফোন করে আমাকে দেখা করতে বলেন। দেখা করতে যাই। দেখা করার সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আমার পরের সিনেমার নায়িকা তুই।

খান আতাকে আমি চাচা ডাকতাম। আমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন খান আতা। ব্যস, খান আতার মাটির মায়া সিনেমার নায়িকা হয়ে গেলাম। মাটির মায়া সিনেমায় আমার নায়ক ছিলেন ফারুক। সুচরিতার নায়ক ছিলেন আলমগীর। মাটির মায়া রিলিজ হলো। এই সিনেমাটি সেই সময়ে অসম্ভব ব্যবসাসফল হয়েছিলো।

আমার ক্যারিয়ারে পঞ্চম সিনেমা অশিক্ষিত। সত্য সাহার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত সিনেমা। পরিচালনায় ছিলেন আজিজুর রহমান। সত্য সাহা একদিন আমাকে দেখা করতে বলেন। তিনি জানান, তার অশিক্ষিত সিনেমার নায়িকা আমি। আরও জানান, আমার নায়ক রাজ্জাক। সেই সময়ে রাজ্জাক ঢাকাই সিনেমার অসম্ভব জনপ্রিয় নায়ক। আমি অবাক। সেই সঙ্গে আনন্দিত।

তারপর অশিক্ষিত সিনেমাটি করলাম। এই সিনেমাটি আমার জীবনের অন্যতম সেরা টার্নিং পয়েন্ট। এই সিনেমার একটি গান ‘ঢাকার শহর আইসা আমার আশা ফুরাইলো’। আরেকটি গান ‘আমি যেমন আছি তেমন রবো, বউ হবো না রে’। এখনও গান দুটি জনপ্রিয়।

এভাবে ঢাকাই সিনেমার নায়িকা হিসেবে আমার অবস্থান শক্ত হতে লাগলো। সেই সময়ের সব নায়কের বিপরীতে ডাক পেতে লাগলাম। আমার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।

প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা দস্যু বনহুর দেখতে গিয়েছিলাম গুলিস্তান সিনেমা হলে। তখন গুলিস্তান সিনেমা হল ভীষণ প্রিয় সবার কাছে। হলে গিয়ে দেখতে পাই হাজার হাজার মানুষ। সোহেল রানা আমাকে বলেন, সবার উদ্দেশে হাত নাড়াও। আমি তাই করি। ওইরকম মানুষের ভিড় এবং তাদের ভালোবাসার কথা কখনও ভুলতে পারবো না।

দেশ বিদেশ নামের একটি সিনেমার শুটিং করতে আমেরিকায় গিয়েছিলাম। টানা দুই মাস ছিলাম। ওই সিনেমায় আমার বিপরীতে ছিলেন জসিম। শাবানা ছিলেন। টেলিসামাদ ছিলেন। মাহমুদ কলি ছিলেন। ওয়াশিংটনে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছিলো সিনেমার শুটিংয়ের জন্য। প্রতিদিন শুটিং করতাম আর কাজ শেষে আড্ডা দিতাম। জসিম কতো রকমের মজার মজার কথা বলে হাসাতেন। টেলিসামাদ চলে গেলেন।

পরিণীতা সিনেমার কথা বলি এইবার। এই সিনেমার পরিচালক ছিলেন আলমগীর কবির। ললিতা চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এই সিনেমা করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাচসাস পুরস্কার পাই। এভাবে একটার পর একটা সিনেমায় অফার আসে। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের একজন হয়ে যাই আমি। সিনেমাই আমার ঘরবাড়ি।

আজও পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাই, এফডিসিতে প্রথম যাওয়ার দিনগুলি। সবার সঙ্গে কতো আপন একটা সম্পর্ক ছিলো। নায়ক রাজ্জাকের বিপরীতেই ৩০টি সিনেমা করেছিলাম আমি।

ভাবতে ভালো লাগে, এদেশের সোনালী দিনের সিনেমার নায়িকা ছিলাম।

Comments

The Daily Star  | English
 Al Bakhera killings Al Bakhera killings

Killings in Chandpur: Water transport workers go on strike

Water transport workers has started an indefinite strike from midnight

5h ago