৩ বছর ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নেই মুক্তিযুদ্ধের ছবি
২০১৫ সালে ‘অনিল বাগচীর একদিন’ ও ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়। দুটি চলচ্চিত্রই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। ‘অনিল বাগচীর একদিন’ পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। রিয়াজুল রিজু পরিচালিত ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। ছবির কাহিনি লিখেছেন মাসুম রেজা। অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রের জন্য যে জাতীয় পুরস্কারগুলো দেওয়া হয়েছে সেখানে নেই কোনো মুক্তিযুদ্ধের ছবি। চলচ্চিত্রের অন্য কোনো শাখাতেও নেই মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার।
কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ অবলম্বনে ২০১৪ সালে মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ শ্রেষ্ঠ গীতিকার, সংগীত পরিচালক, সুরকার, নারী কণ্ঠশিল্পী ও রূপসজ্জা বিভাগে পুরস্কার পায়।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত ‘গেরিলা’ ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, অভিনেত্রী, খল অভিনেতা, প্রযোজক, পোশাক পরিকল্পনা, রূপসজ্জা, শিল্প নির্দেশনাসহ দশটি শাখায় পুরস্কার পায় ‘পেরিলা’। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা ও গাজী রাকায়েত।
তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জয়যাত্রা’ সে বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। এছাড়াও, লাভ করে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার, সংগীত পরিচালক, পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী ও চিত্রগ্রাহক পুরস্কার। ছবিতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, চাঁদনী প্রমুখ।
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘বীর সৈনিক’ ২০০৩ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মান্না, মৌসুমী, সাথী, হুমায়ুন ফরীদি, রোজী আফসারী প্রমুখ। মান্না শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং সাথী শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্র পুরস্কার পান।
১৯৯৭ সালে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে নির্মিত ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রটি তিনটি বিভাগে পুরস্কৃত হয়। ছবিটির পরিচালক ছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। ছবিতে অভিনয় করেছেন সুচরিতা, সোহেল রানা, অরুণা বিশ্বাস প্রমুখ। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে সুচরিতা এবং শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার হিসেবে সেলিনা হোসেন পুরস্কার পান।
১৯৯৫ সালে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে।
১৯৯৪ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এছাড়াও, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, শিশুশিল্পী, সংগীতপরিচালক, সংলাপ রচয়িতা, শব্দগ্রহণসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে ছবিটি। এতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুরসহ অনেকে।
১৯৯২ সালে ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবির শ্রেষ্ঠ কাহিনির জন্য পুরস্কার দেওয়া হয় হুমায়ূন আহমেদকে।
১৯৯০ সালে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ পুরস্কার পায়।
১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পায়। আলাউদ্দিন আল আজাদের উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন সুভাষ দত্ত। ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেকেই। এটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি বিভাগে পুরস্কার পায়।
১৯৭৬ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মেঘের অনেক রং’ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এটি পরিচালনা করেছেন হারুনর রশীদ। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাথিন, ওমর এলাহী, রওশন আরা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪২ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ বার পুরস্কার পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র।
Comments