গায়ক থেকে নায়ক মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবাল

নায়ক ও গায়ক জাফর ইকবাল ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সুদর্শন এই নায়ক সিনেমায় আসার আগেই গায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তার সময়ে সবচেয়ে স্মার্ট ও স্টাইলিশ নায়ক বলা হতো তাকে। স্বর্ণালী যুগের নায়ক, গায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবালকে নিয়ে এ লেখা।
Zafar Iqbal.jpg
নায়িকা ববিতার সঙ্গে জাফর ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

নায়ক ও গায়ক জাফর ইকবাল ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সুদর্শন এই নায়ক সিনেমায় আসার আগেই গায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তার সময়ে সবচেয়ে স্মার্ট ও স্টাইলিশ নায়ক বলা হতো তাকে। স্বর্ণালী যুগের নায়ক, গায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবালকে নিয়ে এ লেখা।

‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী’ গানটি শুনেননি এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। অনেক বছর ধরেই এ গানটি মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। গানটির গায়ক জাফর ইকবাল। যিনি নায়ক হিসেবে সবার কাছে বেশি পরিচিত।

‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’ এই গানটিও এদেশে বেশ জনপ্রিয়। এখনও গানটির জনপ্রিয়তা রয়ে গেছে। নায়ক জাফর ইকবালই এই গানটি গেয়েছিলেন এবং তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। এই গানটি বদনাম সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছিলো।

এই গানটির সুর করেছিলেন প্রয়াত আনোয়ার পারভেজ। গীতিকার ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

আরও অনেক গানই গেয়েছিলেন জাফর ইকবাল। আসলে নায়ক ও গায়ক হিসেবে ছিলো তার জনপ্রিয়তা। একজন মানুষ নায়ক হিসেবে সব মানুষের কাছে ভালোবাসা কুড়িয়েছেন, একই সঙ্গে গায়ক হিসেবেও ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। 

ষাটের দশকে জাফর ইকবাল ঢাকায় একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। নাম ছিলো- রোলিং স্টোন। শিল্পী পরিবার থেকেই উঠে আসা এই নায়ক ও গায়কের জন্ম ঢাকা শহরে।

তার বড় বোন শাহনাজ রহমতউল্লাহ একজন খ্যাতিমান শিল্পী ছিলেন। বিখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ তার বড় ভাই। পরিবার থেকেই গান শেখেন তিনি।

তবে, সিনেমায় আসার পর গান গাওয়া কমে যায় জাফর ইকবালের। ব্যস্ততা বেড়ে যায় সিনেমায়। কতোটা সুদর্শন, কতোটা স্টাইলিশ ছিলেন, তা তার অভিনীত সিনেমা দেখেই অনুমান করা যায়। ঢাকাই সিনেমার স্টাইলিশ নায়ক ও চিরসবুজ নায়কও বলা হতো তাকে।

তিনি গিটারও বাজাতেন।

জাফর ইকবালকে নিয়ে শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, “ওই সময়ে তার মতো স্টাইলিশ নায়ক ও গায়ক কমই ছিলেন। নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন তিনি।”

শহরে জন্ম নিয়েও শহুরে গল্পের সিনেমায় যেমন অভিনয় করেছিলেন, তেমনি করে একেবারে গ্রামীণ গল্পের সিনেমাতেও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। যা আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।

‘নয়নের আলো’ ছিলো তেমনি গ্রামীণ গল্পের একটি সিনেমা। এই সিনেমায় একজন গায়কের চরিত্রে অভিনয় করে অসম্ভব রকমের সাড়া, জনপ্রিয়তা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছিলেন।

নয়নের আলো সিনেমার একটি গান আজও জনপ্রিয়- ‘আমার সারাদেহ খেয়ে গো মাটি…।’

জাফর ইকবাল অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম ‘আপন পর’। এই সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন কবরী। সব মিলিয়ে তিনি দেড়শো’র বেশি সিনেমা করেছিলেন । সবচেয়ে বেশি জুটি হয়ে সিনেমা করেছিলেন নায়িকা ববিতার সঙ্গে। জাফর ইকবাল অভিনীত বেশিরভাগ সিনেমা হিট হয়েছিলো।

জাফর ইকবালের আরেকটি বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর শুরু হয় নতুন পথচলা। সেটা সিনেমায়।

রোমান্টিক নায়ক হিসেবে অসম্ভব সফল ছিলেন জাফর ইকবাল। এই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ বলেন, “আমার প্রিয় নায়কদের মধ্যে জাফর ইকবাল অন্যতম। ছোটবেলায় তার সিনেমা দেখার স্মৃতি এখনও চোখে ভাসে। তার স্টাইলটাই বেশি টানতো।”

জাফর ইকবাল, ববিতা ও চম্পা অভিনীত ত্রিভুজ প্রেমের সিনেমা ‘অবুঝ হৃদয়’ আশির দশকের একটি আলোচিত ও ব্যবসাসফল সিনেমা। এইরকম বহু সিনেমা রয়েছে, যা তার ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করেছিলো।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমার মধ্যে রয়েছে- মাস্তান, ভাই বন্ধু, চোরের বউ, অবদান, সাধারণ মেয়ে, ওগো বিদেশিনী, নবাব, ফুলের মালা, প্রতিরোধ,  সন্ধি, সাত রাজার ধন, এক মুঠো ভাত, দিনের পর দিন, বেদ্বীন, মেঘ বিজলি বাদল, ফকির মজনু শাহ, মিস লঙ্কা।

নায়ক ও গায়ক জাফর ইকবাল নেই। ১৯৯১ সালের ২৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কিন্তু তার সিনেমা ও গান এখনও আছে। যা তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আরও বহু বছর। বিজয়ের মাসে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

9h ago