ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ মান্নার জন্মদিন আজ
নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে সিনেমার জগতে যাত্রা শুরু হয়েছিলো প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্নার। ক্যারিয়ারের শুরুতে একক নায়ক হওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। এজন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো। কাশেম মালার প্রেম সিনেমাটি হিট হওয়ার পর মান্নার জীবনের গল্প বদলে যায়। তারপর মান্না হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ।
আজ (৬ ডিসেম্বর) মান্নার জন্মদিন।
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার সন্তান মান্না। টাঙ্গাইলে তাকে সবাই জানতেন এসএম আসলাম তালুকদার নামে। সিনেমায় এসে হয়ে যান মান্না। দৈহিকভাবে না থেকেও আজও মান্না সবার হৃদয়ে বেঁচে আছেন। শুধু টাঙ্গাইল নয়, বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমী মানুষেরা এক নামে চেনেন মান্নাকে।
মান্না অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম তওবা। পরিচালক ছিলেন আজহারুল ইসলাম। তার নায়িকা ছিলেন শেলী। যার সঙ্গে পরে তিনি ঘর বেঁধেছিলেন।
কষ্ট-সংগ্রাম-পরিশ্রমের ফলে একসময় মান্না হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই সিনেমার এক নম্বর নায়ক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিলেন। নায়ক থেকে প্রযোজক হয়েছিলেন। কৃতাঞ্জলি চলচ্চিত্র নামে তার ছিলো চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।
কৃতাঞ্জলি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে মান্নার জীবদ্দশায় অনেক সিনেমা নির্মাণ হয়েছিলো, যার বেশিরভাগই ব্যবসায়িক সফলতার মুখ দেখেছিলো। নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম প্রযোজিত সিনেমার নাম লুটতরাজ।
মান্নার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত আম্মাজান সিনেমাটি ছিলো সেই সময়ের আলোচিত ও ব্যবসাসফল একটি সিনেমা। আজও আম্মাজান সিনেমার গান মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
আশির দশকে সিনেমায় আসার পর অনেক নায়িকার বিপরীতে সিনেমা করেন মান্না। চম্পার সঙ্গে বেশ কয়েকটি সিনেমা করেন। মান্না ও চম্পা জুটি হয়ে অভিনয় করা কাশেম মালার প্রেম ছিলো মান্নার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। বেদের মেয়ে জোসনার পর কাশেম মালার প্রেম ছিলো ফোক সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত।
কাশেম মালার প্রেমের পর মান্না ও চম্পা অভিনীত আরেকটি হিট সিনেমার নাম কান্দো কেনো মন।
একটা সময়ে ফোক ঘরানা ছেড়ে সামাজিক গল্পের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সামাজিক, অ্যাকশন, রোমান্টিক সিনেমাতেও তাকে দেখা গেছে অভিনয় করতে। সমাজের বাস্তব চিত্র নিয়ে অনেক সিনেমা নির্মিত হয়েছিলো, যার নায়ক ছিলেন মান্না।
কাজী হায়াত পরিচালিত বেশ কয়েকটি সিনেমার নায়ক ছিলেন মান্না। তার মধ্যে দাঙ্গা, ত্রাস, দেশ প্রেমিক, সিপাহী ছিলো মান্নার ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল কয়েকটি সিনেমার মধ্যে অন্যতম। একজন নায়ক হিসেবে তিনি সর্বমহলে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই সিনেমাগুলি দিয়ে।
ঢাকার সিনেমায় খুব কম নায়ক এসেছিলেন এবং আজও অনেক নায়ক আছেন, যাদের ওপর নির্ভর করেই গল্প লেখা হতো। মান্না ছিলেন তেমনই একজন নায়ক, যাকে কেন্দ্র করে পরিচালক গল্প ভাবতেন এবং সেভাবে সিনেমা পরিচালনা করতেন।
ঢাকাই সিনেমার সব শীর্ষ নায়িকাকে মান্না যেমন পেয়েছিলেন অভিনয় জীবনে, একইভাবে শীর্ষ সব পরিচালকদের পরিচালনায়ও মান্না অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। দর্শকদের হলমুখী করতে মান্নার ছিলো অনেক অবদান।
প্রিয়দর্শিনী নায়িকা হিসেবে খ্যাত মৌসুমীর বিপরীতে মান্না সবচেয়ে বেশি সিনেমা করেছিলেন। মান্না ও মৌসুমী ৪৫টি সিনেমা করেছিলেন, যা ওই সময়ের একটি রেকর্ড।
মান্না ও মৌসুমীর কয়েকটি সিনেমার মধ্যে রয়েছে- লুটতরাজ, রাজু মাস্তান, স্বামী ছিনতাই, সন্ত্রাসী মুন্না, জীবনের গল্প, বীর সৈনিক, সত্যের বিজয়, কষ্ট, আমি জেল থেকে বলছি ইত্যাদি।
মান্না তার ক্যারিয়ারে ঢাকাই সিনেমার আরেক শীর্ষ নায়িকা শাবনূরের বিপরীতেও অনেক সিনেমা করেছিলেন। কয়েকটি সিনেমার মধ্যে রয়েছে- মোগলে আজম, জীবন নিয়ে যুদ্ধ, এ দেশ কার, ভাইয়ের শত্রু ভাই, কঠিন পুরুষ, জীবন এক সংঘর্ষ, দুই বধূ এক স্বামী, ভাইয়া, সমাজকে বদলে দাও, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ ইত্যাদি।
মৌসুমী ও শাবনূরের পর মান্না আরেক জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অনেক সিনেমা করেছিলেন। তিনি হলেন পূর্ণিমা। মান্না ও পূর্ণিমার জুটি হয়ে করা সিনেমার সংখ্যা ২৫টি। কয়েকটি সিনেমার মধ্যে রয়েছে- মনের সাথে যুদ্ধ, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, সুলতান ইত্যাদি।
মান্না তার অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বেশ কয়েকবার পেয়েছিলেন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং বাচসাস পুরস্কার।
সংগঠক হিসেবে ছিলেন জনপ্রিয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি (মৃত্যুর সময় এই পদে ছিলেন)।
আজও নায়ক মান্না এ দেশের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ভালোবাসার মান্না হয়ে বেঁচে আছেন।
বিশেষ দিনে আজও ভক্তরা তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। শুভ জন্মদিন মান্না।
Comments