‘নায়ক রাজ রাজ্জাকের সামনে থর থর করে কাঁপছিলাম’

Rozina
চিত্রনায়িকা রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সিনেমার সোনালি সময়ের নায়িকা ছিলেন রোজিনা। তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। অ্যাকশন, ফোক ও সামাজিক- এই তিন ধারার সিনেমায় নায়িকা হিসেবে তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কলকাতায়ও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন রোজিনা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য গঠিত জুরি বোর্ডের সদস্যও ছিলেন তিনি। রোজিনা তার ফেলে আসা জীবনের কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

“নায়িকা হিসেবে ‘রাজমহল’ আমার প্রথম সিনেমা। নায়ক ছিলেন ওয়াসিম। ওয়াসিম তখন সুপারস্টার। আমি একেবারেই নতুন। আর নতুন হিসেবে এতোবড় নায়কের সঙ্গে অভিনয় করতে যাওয়া ছিলো বিশাল ব্যাপার। ১৯৭৭ সালে ‘রাজমহল’র শুটিং করি। মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। তারপর সিনেমাটি ব্যাপক ব্যবসা করে। ‘রাজমহল’ আমার জীবনের গল্প বদলে দিয়েছিলো। জীবন বদলে যাওয়ার ঘটনাটিও আমার অভিনয় জীবনের স্মরণীয় একটি ঘটনা। এটি কখনই ভুলবো না।

আমার ও ওয়াসিমের বহু সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছিলো। কতো ঘটনা আছে আমাদের শুটিংকে ঘিরে। ‘বিনি সূতার মালা’ সিনেমাটির কথা বলি। কুয়াকাটায় শুটিং করেছিলাম। বিশ দিন ছিলাম। শুটিং শেষ করে যখন ফিরে আসবো, সবাই কান্নাকাটি করতে থাকি। এতোটাই পরিবারের মতো ছিলাম আমরা। এতোটাই বন্ধন ছিলো আমাদের। ‘বিনিসূতার মালা’ সিনেমার শুটিংয়েও এমন হয়েছে যে ভোররাত চারটায় উঠে মেকআপ নিতে বসে যেতাম। সকাল হওয়ার আগেই শুটিং শুরু করতাম।

সেসময় ‘বিনিসূতার মালা’ সিনেমাটি টানা কয়েক মাস ধরে চলেছিলো। এটিও আমার শিল্পী জীবনের বড় ঘটনা।

নায়ক রাজ রাজ্জাককে নিয়ে একটি ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে। নায়ক রাজ তখন সবচেয়ে বড়  সুপারস্টার। তার সঙ্গে প্রথম অভিনয় করি ‘আয়না’ সিনেমায়। পরিচালক ছিলেন মোহসীন। এফডিসিতে শুটিং হবে। কল ছিলো সকাল সাতটায়। সকাল সাতটার আগেই চলে গেলাম শুটিং করতে। কিছুক্ষণ পর রাজ্জাক এলেন। রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। কিন্তু, আমি সংলাপ দিতে পারছি না। থরথর করে কাঁপছি। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আজও খুব করে মনে পড়ে- নায়ক রাজের সামনে থর থর করে কাঁপছিলাম।

রাজ্জাক বুঝলেন, ভয়ে আমি এমনটি করছি। তিনি শুটিং বন্ধ করে দিলেন। আমার সঙ্গে গল্প করলেন। আমাকে বোঝালেন তিনিও নতুন ছিলেন। তার কথা শুনে আমি মুগ্ধ হলাম। আমি ইজি হয়ে গেলাম। তারপর সুন্দরভাবে শুটিং করলাম ‘আয়না’ সিনেমায়। একজন নতুনের জন্য রাজ্জাকের সহযোগিতাও আমি মনে রেখেছি।

মনে পড়ে, ‘নসিব’ সিনেমার কথা। মনে পড়ে ‘নালিশ’ সিনেমার কথা। মমতাজ উদ্দিন পরিচালক ছিলেন। আমার নায়ক ছিলেন উজ্জল। এই দুটি সিনেমায় আমাকে ঘোড়া দৌড়াতে হতো। সাভারে শুটিং করেছিলাম। সেসময় সিনেমার সবাই জানতেন, ঢাকার সিনেমায় আমি ছাড়া কোনো নায়িকা ঘোড়া চালাতে পারতেন না। পরিচালক মমতাজ উদ্দিন পছন্দ না হলে দৃশ্য ওকে করতেন না। একটি দৃশ্য দশবারও করতে হতো। ‘নসিব’ ও ‘নালিশ’ আমার অভিনয় জীবনের বিখ্যাত দুটি সিনেমা।

মনে পড়ে, একটা সময় ছিলো যখন আমার নামের ওপর ঢাকার সিনেমা চলতো। ‘সুলতানা রাজিয়া’, ‘তুফান মেইল’ … আরও কতো সিনেমা চলেছে আমার নামের ওপর। এসব আমার শিল্পী জীবনকে সবার মাঝে নিয়ে গেছে। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি প্রবলভাবে।

আবার একটা সময়ে অ্যাকশন সিনেমার নায়িকা থেকে হঠাৎ সামাজিক সিনেমা করতে শুরু করি। তখন অনেকেই বলাবলি করতেন আমার ক্যারিয়ার শেষ। কিন্তু, না। ‘কসাই’ সিনেমা দিয়ে শুরু করি সামাজিক সিনেমা। আমজাদ হোসেনের মতো বিখ্যাত পরিচালক বানালেন ‘কসাই’। এটিও সুপারহিট হলো। আমি পেলাম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

‘তাসের ঘর’, ‘সাহেব’-সহ অনেক সামাজিক সিনেমায় অভিনয় করেছি। নায়ক ফারুকের সঙ্গে সামাজিক সিনেমায় আমার জুটি গড়ে উঠে। সামাজিক সিনেমা করেও আমি ক্যারিয়ার ধরে রেখেছিলাম সফলতার সঙ্গেই। ‘তাসের ঘর’ সিনেমাটি অনেকদিন ধরে সিনেমা হলে চলেছিলো। সেসব ঘটনা আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকবে।

আবার এই আমি ফোক সিনেমা করেও জয় করে নিলাম সবার মন। ‘সাগরভাসা’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আলোমতি প্রেম কুমার’, ‘কুচবরণ কন্যা’ ইত্যাদি। এসব ফোক সিনেমা আমাকে নতুনভাবে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।

পেছনে ফিরে তাকালে আরও একটি ঘটনা মনে পড়ে। ভারতের নামকরা নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে একটি সিনেমা করেছিলাম নায়িকা হিসেবে। ওটা ছিলো কলকাতার সিনেমা। নাম ছিলো ‘অন্যায় অবিচার’। ওই সিনেমাটিও আমাকে বিদেশের মাটিতে শিল্পী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

শিল্পী জীবনে এসব কতো ঘটনাই তো আছে। সেসব সুখের গল্প নিয়েই বেঁচে আছি। বেঁচে থাকতে চাই মানুষের হৃদয়ে।”

Comments

The Daily Star  | English

CA appoints 3 new special assistants with state ministerial rank

Hours after induction three more advisers to the interim government, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus appointed three special assistants equivalent to state minister portfolio

1h ago