‘দরকার স্মার্ট প্রেজেন্টেশন, শিল্পীর অভাব নেই’
প্রথম মুক্তিপাওয়া ছবি ‘পোড়ামন-২’ দিয়েই দর্শকদের মন জয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানের বাংলা সিনেমায় শীর্ষ নায়কদের একজন তিনি। এরপর মুক্তি পেয়েছে আরও দুটি ছবি ‘দহন’ ও ‘ফাগুন হাওয়ায়’। শেষ করেছেন গিয়াসউদ্দীন সেলিমের পরিচালনায় ‘পাপ পুণ্য’ ছবির শুটিং। শুটিং করছেন ‘শান’ ও ‘বিশ্ব সুন্দরী’ সিনেমার। ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপনে বলেছেন তার সিনেমাযাত্রা নিয়ে একান্ত ভাবনার কথা।
ডেইলি স্টার: বর্তমানে সিনেমার অবস্থা খুব একটা ভালো না। এই অবস্থায় বেশ কয়েকটা নতুন ছবির শুটিং করছেন। বিষয়টা নিজের জন্য কতটা ভালোলাগার?
সিয়াম আহমেদ: খারাপের পরই ভালো আসে। এটাই চিরায়ত নিয়ম। কিছুদিন আগেও আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গন নিয়ে হা-হুতাশ ছিল। এখন কিন্তু তেমনটি নেই। হল কমে যাওয়ার খবর আগে নিয়মিত আসত। এখন সিনেপ্লেক্স বাড়ার খবরও পাচ্ছি আমরা। তার ওপর বছরে কম হলেও আলোচিত কিছু ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তরুণ নির্মাতারাও সিনেমা নির্মাণের প্রতি ঝুঁকছে। আমার তো মনে হয় আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নতুন দিগন্তের দিকে যাচ্ছে। সিনেমায় হতাশা বেশিদিন থাকবে না।
ডেইলি স্টার: এইসময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত অভিনেতা বলা হচ্ছে আপনাকে? কেমন লাগে শুনতে?
সিয়াম আহমেদ: এভাবে কারা বলে জানি না? কাজের ব্যস্ততা সবারই কম-বেশি আছে। সব নায়কই ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তবে বেশকিছু ছবিতে ইতোমধ্যে সাইন করেছি। কিছুর শুটিংও শুরু হয়েছে। কয়েকটা কাজ একটুখানি বাকি আছে। সবমিলিয়ে খুব খারাপ লাগে না।
ডেইলি স্টার: বর্তমানে কোন কোন ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন?
সিয়াম আহমেদ: এমএ রাহিমের ‘শান’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্বসুন্দরী, গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’ ছবির শুটিং শেষ করলাম কয়েকদিন আগে। রায়হান রাফির নতুন একটা ছবির কাজ শুরু করব, বরাবরই নিত্যনতুন চরিত্রের দিকে মনোযোগ দিই। দর্শকরা যেন আমাকে দেখে বোরিং ফিল না করেন। প্রতিটি ছবিতে নতুন নতুন চরিত্রে দেখতে পান। সে চেষ্টাই থাকে। কাজের মধ্যে নতুনত্ব না থাকলে তো সেই কাজ করে নিজেরও কোনো মজা থাকে না। ছবির স্ক্রিপ্ট এলে এদিকেই মনোযোগ দিই বেশি।
ডেইলি স্টার: সংসার, সিনেমার শুটিংয়ের ব্যস্ততা সবকিছু কীভাবে সামলান?
সিয়াম আহমেদ: আপাতত অভিনয় সামলাচ্ছি আমি। সংসারটা দেখছে আমার স্ত্রী। তবে সংসারে কিছুটা হলেও সাহায্য করি। আমার মা-বাবাও সবাই মিলেই যৌথভাবে সংসার সামলাচ্ছেন। তাদের কারণে সংসার সামলানোর খুব একটা দরকার হয় না আমার।
ডেইলি স্টার: অল্প সময়ে তৃতীয় সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’বিষয়বস্তু হিসেবেই পেয়েছেন ভাষা আন্দোলনকে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সিয়াম আহমেদ: ঐতিহাসিক একটা বিষয় নিয়ে সিনেমাতে কাজ করছি। এই প্রজন্মের একজন অভিনেতা হিসেবে এটা গর্বের বিষয়। আর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমাদের দেশে এর আগে সে মাপের রিমার্কেবল কোনো কাজ হয়নি। এ ছাড়া তৌকীর ভাইয়ের (তৌকীর আহমেদ) সিনেমাতে কাজ করার আলাদা একটা ব্যাপারও রয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম সারির কয়েকজন মেধাবী নির্মাতার মধ্যে তৌকীর ভাই অবশ্যই একজন।
ডেইলি স্টার: প্রত্যেক শিল্পীর জীবনে কিছু কাজ থাকে, হয়তো সবার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু শিল্পীর মনের খোরাক মেটায়, আত্মতৃপ্তি পায়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এ কাজটিকে ঠিক কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সিয়াম আহমেদ: আমার বাবা-মাকে অনেক ধন্যবাদ। তাদের এই কাজের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে না। কারণ যদি আমাকে চিন্তা করতে হয়, এ কাজটির ওপর আমাকে সংসার চালাতে হবে, তাহলে আমার হাতে ‘না’ বলার অপশন অনেক কমে যেত। তখন প্রচুর কাজ করতে হতো। নিজেকে আর্নিং মেশিনে রূপ দিতে হতো। আমার মনে হয়, এই বয়সটা তো পরিশ্রম করার একই সঙ্গে ঝুঁকি নেয়ারও বয়স। আমার কাছে এই কাজটা কিন্তু বেশি রিস্কি। আপনি যতই না বলেন না কেন, এই কাজের আলাদা কিছু দর্শক রয়েছেন। যদি বলি ম্যাস পিপলের কথা, এমনো কাজ করেছি ব্যক্তিগতভাবে নয়, তারপরও করতে হয়েছে। কাজের মধ্যে এক ধরনের ব্যালান্স আনার চেষ্টা করছি, যেটা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও রয়েছে। কমার্শিয়াল কাজটা হোক, পাশাপাশি কিছু গল্পের কাজও হোক।
ডেইলি স্টার: নিজের ভেতরের শিল্পী মানুষটাকে কীভাবে লালন-পালন করছেন?
সিয়াম আহমেদ: চরিত্র ও আমার মিশন কিংবা ভিশনটা ফিক্সড করা সবার আগে প্রয়োজন। আমি জানি কী করতে চাই। না চাওয়াটা সম্পর্কে আরও ভালো জানি। গা ভাসাতে চাই না, যার কারণে আমার কাছে আমার উদ্দেশ্য কিংবা বিধেয় একদম পরিষ্কার। এ বিষয়গুলোই আমাকে কাজ যাচাই কিংবা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করছে সব সময়। প্রচুর কাজ করতে হবে, এমন নয়। ভালো কাজের দিকে আমার নজরটাই সব সময় বেশি থাকে।
ডেইলি স্টার: সিনেমা নিয়ে সামনের দিনগুলোর জন্য আপনার পরিকল্পনাটা কেমন?
সিয়াম আহমেদ: ভালো কাজ করতে চাই, ভালো গল্পের সঙ্গে থাকতে চাই। চরিত্রটা যে সব সময় লিড ক্যারেক্টার হতে হবে, তা কিন্তু নয়। নেগেটিভ ক্যারেক্টার খুব পছন্দ করি। আমাকে যদি তেমন কোনো নেগেটিভ গল্প দেওয়া হয়, সেটাও আমি করতে রাজি আছি। বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য কিছু করে যেতে চাই। মৃত্যুর পর মানুষ যাতে বলতে পারে, এই ছেলেটা কিছুটা হলেও চেষ্টা করেছে। কমিটমেন্টের জায়গাটা ঠিক রাখা একজন শিল্পীর জন্য ভীষণ প্রয়োজন।
ডেইলি স্টার: বর্তমানে নির্মাতাদের গল্প বলার ঢং গত কয়েক বছরের থেকে বেশ বদলে গেছে। সে বদলে যাওয়ায় কতটা যুক্ত হতে পারছেন?
সিয়াম আহমেদ: আগের একটা প্রশ্নের উত্তরে একটা শব্দ বলেছি ‘ম্যাস পিপল’। তাদের রুচির জায়গায় বড় একটা পরিবর্তন দরকার। তাহলে এ সংকটটা থেকে বের হওয়া যাবে। আমাদের দেশের নির্মাতারা এ ধরনের সিনেমা নির্মাণে এগিয়ে আসতে পারবেন। না হলে পুরনো ছকেই আটকে থাকতে হবে। একটু একটু করে কাজ হচ্ছে। একটু হলেও তো যুক্ত হওয়া যাচ্ছে।
ডেইলি স্টার: সিয়ামের অভিনয় জীবনে কোন অভিনেতার প্রভাব রয়েছে?
সিয়াম আহমেদ: কাউকে ফলো করতে পারি না, তবে সম্মান করতে পারি। কারণ ফলো করে, কাউকে খুব বেশি টাচ করতে পারি না। তখন নিজেকে খুব ছোট লোক মনে হয়। হুমায়ুন ফরীদি স্যার ও সালমান শাহর ভক্ত আমি। অভিনয় জীবনের অনেকটা জুড়ে সালমান শাহ। এছাড়া যখন উত্তম কুমার অভিনীত‘নায়ক’ সিনেমাটি দেখে ‘নায়ক’ শব্দটির সংজ্ঞাই বদলে গিয়েছে। আমি চাই আমার মৃত্যুর অনেক বছর পরও একটি সিনেমা থাকুক, যেটা সবাই দেখবে।
ডেইলি স্টার: বর্তমানে সিনেমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
সিয়াম আহমেদ: আমাদের এখানে বর্তমানে সিনেমা প্রযোজনা করবে এমন চার থেকে পাঁচটি বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দরকার। যারা টাকা-পয়সা খরচ করে ভালো সিনেমা বানাবে। আর যেটা দরকার সিনেমাটির স্মার্ট প্রেজেন্টেশন ও শিক্ষিত ডিরেক্টর। শিল্পীর অভাব নেই। কিন্তু স্মার্ট ডিরেক্টর দরকার। যে কাজ আদায় করে নিতে পারবে। তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির হয়তো ১০ বছরের মধ্যেই পরিবর্তন হবে।
Comments