‘হিমু চরিত্রের জন্য যদি আমাকে অফার করা হয়, তাহলে কাজটি করব’
চঞ্চল চৌধুরী দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সু অভিনয় দিয়ে। অসংখ্য নাটকে অভিনয় করলেও সিনেমা করেছেন ছয়টি। সবগুলি সিনেমা তাকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে মনপুরা তার ক্যারিয়ারকে করেছে সমৃদ্ধ। ভারতীয় পরিচালক গৌতম ঘোষের মনের মানুষ সিনেমায় দুই দেশে পেয়েছেন প্রশংসা। নতুন একটি সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন সম্প্রতি। ডেইলি স্টারকে চঞ্চল চৌধুরী দিয়েছেন সাক্ষাৎকার।
ডেইলি স্টার: গিয়াসউদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় মনপুরা সিনেমায় অভিনয় করে আপনি সব শ্রেণির দর্শকদের কাছে পরিচিতি পান, আবারও তার পরিচালনায় সিনেমা করছেন, সে বিষয়ে জানতে চাই।
চঞ্চল চৌধুরী: ১০ বছর পার হয়ে গেছে মনপুরায় অভিনয় করেছিলাম। এত বছর পর আবারও তার পরিচালিত নতুন সিনেমা পাপ পুণ্য-তে অভিনয় করলাম। শুটিং শেষ করেছি। চাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুটিং করেছি। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে (পুরনো) শুটিং করেছি। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি টিমের সঙ্গে কাজ করা হলো। গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে আমি বলব গল্প বলা একজন পরিচালক। তিনি গল্প বলতে পারেন। পাপ পুণ্যতে গল্প বলতে পেরেছেন।
ডেইলি স্টার: আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে একটু বলবেন কি, পাপ পুণ্য সিনেমাটি কতটা দর্শক সাড়া পাবে?
চঞ্চল চৌধুরী: কাজ করার পর আমার নিজের উপলব্ধি হচ্ছে- মনপুরা যে মাত্রায় দর্শক প্রিয়তা পেয়েছিল, পাপ পুণ্য সেই মাত্রায় ব্লক বাস্টার হবে। পাপ পুণ্য মানুষ দেখবে।
ডেইলি স্টার: এতটা আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণ কী?
চঞ্চল চৌধুরী: আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রধান কারণ, এই সিনেমায় সুন্দর একটি গল্প আছে। আমাদের দেশের মানুষ গল্প পছন্দ করেন। সেটা তারা পাবেন। সেই সঙ্গে মনপুরা টিমের অনেকেই এই সিনেমায় আছেন। সবাই শতভাগ দরদ ও ভালোবাসা দিয়ে অভিনয় করেছেন। নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আফসানা মিমি, সিয়াম আহমেদ সহ বেশ কজন। সিয়াম এর অনেক ভক্ত আছে। একটা শক্তিশালী টিম আছে এই সিনেমায়। এজন্য আমার আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেশি।
ডেইলি স্টার: চাঁদপুরে শুটিং চলাকালীন কোন ঘটনাটি মনে পড়ে?
চঞ্চল চৌধুরী: চাঁদপুরে যে গ্রামটিতে শুটিং করেছি, সেটি ছিল নদীর পাড়ে। শুটিং শেষে যতটুকু অবসর পেয়েছি, সবাই মিলে আড্ডা দিয়েছি। আসলে একটা সময় আমরা থিয়েটার থেকে যারা এসেছি, সবাই মিলে প্রচুর আড্ডা দিতাম। এখন সেই আড্ডাটা হয় না। চাঁদপুরে গিয়ে আড্ডা দিতে পেরেছি। এছাড়া নদী থেকে তাজা মাছ তুলে এনে রান্না করে খাওয়ার স্বাদের কথা ভুলতে পারছি না এখনো। তাজা ইলিশ মাছের স্বাদ এখনো জিহ্বায় রয়ে গেছে।
ডেইলি স্টার: পাপ পুণ্য সিনেমায় আপনার চরিত্রটি কেমন?
চঞ্চল চৌধুরী: খোরশেদ চেয়ারম্যান এর চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। শতভাগ সততা আছে খোরশেদ চেয়ারম্যানের মধ্যে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে কাজ করতে হয় তাকে। এইরকম চরিত্রে দর্শকরা কখনোই আমাকে দেখেননি। খোরশেদ চেয়ারম্যান হিসেবে দর্শকরা নতুন চঞ্চল চৌধুরীকে দেখবেন। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।
ডেইলি স্টার: ১২ বছরে আপনি মাত্র ছয়টি সিনেমা করেছেন, এটা কি কম নয়?
চঞ্চল চৌধুরী: দেখুন, আমি চাইলে ১২ বছরে ৬০টি সিনেমা করতে পারতাম। কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারতাম। কিন্তু সেসব আমাকে টানেনি। দর্শকরা যে চঞ্চল চৌধুরীকে সিনেমায় দেখে এসেছেন, আমি তাদের কাছ থেকে বিশ্বাস হারাতে চাই না। যার জন্য সব ধরনের গল্পের সিনেমা করিনি বলেই ১২ বছরে আমাকে ছয়টি সিনেমা করতে হয়েছে। তারপরও আমি খুশি এই কারণে যে, ছয়টি সিনেমা মানুষ ভালো ভাবে গ্রহণ করেছেন। আমি আসলে এমনই-দুই বছর বা দেড় বছর পর পর একটি ভালো সিনেমায় কাজ করতে চাই।
ডেইলি স্টার: মিসির আলী এদেশের সাহিত্য প্রেমীদের কাছে একটি জনপ্রিয় চরিত্র, মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সেইরকম হিমুও অনেক জনপ্রিয়, হিমু চরিত্রটি করার ইচ্ছে আছে?
চঞ্চল চৌধুরী: ইচ্ছে আছে। তবে, এই ধরনের বিখ্যাত চরিত্রগুলিতে অভিনয় করাটা অনেক রিস্ক। রিস্ক এই জন্য যে, পাঠকরা তো আগেই চরিত্রটিকে পড়ে ফেলেছেন। সিনেমা হওয়ার পর পাঠকরা সেই হিসেবটা মেলাতে চেষ্টা করেন। তারপরও কোনো ভালো পরিচালক যদি হিমুকে নিয়ে সিনেমা বানাতে চান, আমি হিমু চরিত্রটি করতে চাই। একটি কথা বলতেই হয়। দেবী সিনেমায় যখন মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করি, তখন একদিন শুটিং দেখতে এসেছিলেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি আমাকে বলেছিলেন-দেবদাস এর পর এদেশে সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র হচ্ছে মিসির আলী। তো সেই চরিত্রটি আমি করেছি। এখন হিমু নিয়ে সিনেমা হলে কাজটি করতে আপত্তি থাকার কথা নয়।
ডেইলি স্টার: আপনি অনেক জনপ্রিয় একজন অভিনেতা, নারী ভক্তরা আপনাকে কতটা বিরক্ত করে?
চঞ্চল চৌধুরী: ভক্ত তো ভক্তই। নারী ভক্ত ও পুরুষ ভক্ত হিসেবে দেখি না। আমার একটি ফ্যান পেইজ আছে। সেখানে অসংখ্য ভক্ত আছেন। তারা আমার কাজ নিয়ে কথা বলেন। ভালো কাজের প্রশংসা করেন। আমি সময় পেলে তাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। এমন কোনো দিন নেই একশ বা তারও বেশি টেক্সট আসে না। সেসব পড়তে চেষ্টা করি।
ডেইলি স্টার: নারী ভক্তরা ভালোবাসার কথা নিশ্চয়ই বলে?
চঞ্চল চৌধুরী: তা তো বলেই। কেউ কেউ ফোনও করেন। ভালোবাসা বা প্রেমের অফার দিলেও ম্যানেজ করি কথা বলে। সুন্দর করে বুঝিয়ে বলি। তবে, কখনও ভক্তদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না। কারণ, তাদের জন্যই তো কাজটা করি।
Comments