খোলা চিঠি, মেয়রের কাছে

Mayor Atiqul Islam
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

মাননীয় মেয়র,

আমি ঢাকা উত্তরে বসবাসকারী একজন নাগরিক। দেশের অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি তৈরি পোশাক রফতানি খাতের একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকে সম্মান করি। ব্যবসায় আপনার কঠোর পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা ও সমস্যা সমাধানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অনেক গল্প শুনেই আপনার ভক্ত হয়েছিলাম। দু-একবার আলাপচারিতায় আপনাকে কথাটা জানিয়েছি। আপনি যখন ঢাকা উত্তরের নির্বাচন করছেন বলে শুনি, আনন্দিত হয়েছিলাম। বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে গিয়ে আপনাকে ভোট দেই যদিও আপনি ভোট চাইতে আসেননি একদিনও। তবুও প্রিয় আনিস ভাইয়ের সুযোগ্য উত্তরসূরি ভেবেই আপনাকে ভোট দিয়েছি।


শহরের হাজার হাজার মানুষের মতো আমিও গত কয়েকদিন থেকে জ্বরে ভুগছি। ডাক্তার বন্ধু ও আপনজনদের আতঙ্কিত মুখ আমাকে বাধ্য করে হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে। বেসরকারিখাতের একটি শীর্ষ হাসপাতালে গেলাম। সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। মানুষের এতোই ভিড় এতোই ভিড় যে দিনটাই চলে গেলো ডেঙ্গু টেস্টের জন্য রক্তের নমুনা দিতে।

টোকেন নিয়ে শত শত মানুষ বসে রয়েছেন, সিরিয়াল কখন আসবে। অপেক্ষমাণদের বেশির ভাগই শিশু। তার আগে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিতে গিয়ে বললাম ভয় পাচ্ছি, ভর্তি করে নেন। ডাক্তারের জবাব, বেড-কেবিন খালি নেই, রাখবো কই? রিপোর্টটা কাল আসুক, বাসায় রেখেই ট্রিটমেন্ট দিবো। যেহেতু সিসিইউ-আইসিইউ ছাড়া বেড খালি নেই। সেখানে বসে থাকা অবস্থায় নানাজন থেকে শুনেছি বেসরকারি হাসপাতালে না কী প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মরছে, তার হিসাব কেউ রাখছেন না। আমি আরো আতঙ্ক নিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ রক্তের নমুনা দিতে সক্ষম হই। এই এক দিনে অসংখ্য শিশু, বৃদ্ধ মানুষের ভোগান্তি নিজ চোখে দেখেছি। তীব্র ব্যথায় শিশুদের চিৎকার দেখে চোখের জল ধরে রাখা সত্যিই কষ্টকর ছিলো আমার মতো দুর্বল মানুষের জন্য।

আজ খবরে জানতে পারলাম আপনি সবিনয়ে ক্ষমা চেয়েছেন। এই শহরেরই আরেক মেয়রের মতো প্রলাপ বকেননি। বিষয়টা অবশ্যই আপনার সম্মান বাড়ায়। তবে আপনার কাছে আমিও সবিনয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।

প্রিয় আতিক ভাই,

আপনিতো তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেন বছরের পর বছর ধরে। যেখানে অনভিজ্ঞতা এবং অবহেলার জন্য চরম খেসারত দিতে হয়। সেখানে কাজ করা সব মানুষের সময় জ্ঞান থাকতে হয়। তা না হলে আপনাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বলে শুনেছি।

বেয়াদবি মাফ করে আমাদের কি একটু জানাবেন, ছোটখাটো ভুলের জন্য কাঁচামাল সময়মত গুদামজাত না হওয়া, বা ১০০০ পোশাকের বিলম্বিত উৎপাদনে এয়ার শিপমেন্ট হওয়ার মতো ঘটনায় জীবনে কতো মার্চেন্ডাইজারের চাকরি গিয়েছে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে?

কখনো সরবরাহকারীর দেরিতে মালামাল পৌঁছানোর জন্য মার্চেন্টের ফলোআপকে দায়ী করে কতোজনের চাকরি গেছে? অথবা লাইন ম্যানেজমেন্ট ঠিক নেই বলে পিএম কতোজনকে বিদায় করলেন এ জীবনে?

প্রতি লাইনে ১২০০ পিস কার্গো শর্টসের উৎপাদন কমে ১০০০ পিসে নেমে যাওয়ায় কতো জন জিএম এর চাকরি খেয়েছেন? ওরা যখন ঐ সব সামান্য ভুলের জন্য মাথা নিচু করে বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় ভুল না করার অঙ্গীকার করে দ্বিতীয় সুযোগ চেয়েছিলো, আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠান কি সে সুযোগ দিয়েছিলো?

আপনি বলছেন আপনি অনভিজ্ঞ, তাই সবিনয়ে ক্ষমা চান। আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনার বা আপনাদের অবহেলায় আমাদের প্রিয়জনদের প্রাণ যাচ্ছে। মৃত্যু ও আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে প্রাণের ঢাকা। তাও কি আপনি ভাবছেন, আপনাকে ক্ষমা করা উচিত?

এতোগুলো প্রাণের মূল্য কি ৫২টা সুইং মেশিনের এক একটা লাইনের লস, বা কয়েক পিস গার্মেন্টসের এয়ারফ্রেইটের কয়েকটা ডলারের চেয়েও কম?

আপনার যদি বিবেক থাকে দয়া করে নিজেকে প্রশ্ন করুন। আমাদের কি উচিত আপনি বা আপনাদের ক্ষমা করা?

বিচারহীনতার এই সমাজে আমরা অসহায় বলে বেঁচে যাচ্ছেন আপনারা। ক্ষমতা থাকলে  ঠিকই আপনাদের বিচারের সামনে দাঁড় করাতাম।

জসিম আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

With Trump’s win, Bangladesh gets more investment queries from China

Chinese entrepreneurs are increasingly inquiring with Bangladeshi businesses over scope for factory relocations, joint ventures and fresh investments, apprehending that the new Trump administration might further hike tariffs on their exports to the US.

10h ago