‘বিশ্ববেহায়া’ স্বৈরাচার চলে গেলেন ‘সাহেব’ হয়ে
মৃত মানুষের তাৎক্ষণিক মূল্যায়নে আবেগ প্রধান হয়ে সামনে আসে। নির্মোহ-সত্যনিষ্ঠতা অনেক ক্ষেত্রেই হারিয়ে যায়। ‘তিনি ভালো’, ‘তিনি মহান’, ‘তিনি এই করেছেন’ ইত্যাদি বিশেষণ যোগে বিশ্লেষণ করা হয়, তিনি যেমন মানুষই হোন না কেনো। তার নিষ্ঠুর-ভয়ঙ্কর-অন্যায়-অনৈতিক-অসততার দিকগুলো সামনে আসে না। আরও সরাসরি বললে, সামনে আনা হয় না। যুক্তি হিসেবে সামনে আসে ‘যিনি চলে গেছেন তার সমালোচনা করা ঠিক নয়’। প্রকৃত অর্থে সত্যকে আড়াল করে, আবেগী সত্য বা অর্ধসত্য বিষয়গুলো দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। এমন একটি নজিরের সমাজে আমাদের বসবাস। ‘ভালো’-কে খারাপ, ‘খারাপ’-কে ভালো বলা কোনো অর্থেই সঠিক বা ন্যায্য হতে পারে না। সেই বিবেচনায় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সংক্ষিপ্ত নির্মোহ মূল্যায়নেই প্রচেষ্টা।
১.
এদেশে প্রাতিষ্ঠানিক সামরিক স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিত একজনই। তিনি এরশাদ। তার গুণগ্রাহীদের কেউ কেউ বলেন- মৃত্যুর পরও বলছেন, এরশাদ কারো সম্পর্কে কটূক্তি করতেন না, রাজনীতিতে খারাপ শব্দ ব্যবহার করতেন না, কাউকে অপমান বা অসম্মান করতেন না।
কথাগুলো পুরোপুরি অসত্য নয়, দৃশ্যমানভাবে আংশিক সত্য। তবে সত্যের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে আরও সত্য। এরশাদ কোনো রকমের অসততা, অন্যায়-অনৈতিক কর্মকাণ্ডবিষয়ক অপবাদ বা সমালোচনার বিষয়ে কথা বলতেন না। দৃশ্যমানভাবে কাউকে হয়ত অপমান-অসম্মান করতেন না। মিটিমিটি হাসি মুখে সবকিছু মেনে নিতেন। কোনো কিছুতেই এরশাদ অপমান বা অপমানিত হচ্ছেন, বুঝতে দিতেন না। নির্বিকার থেকে এরশাদ তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারতেন। তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সারাদেশ উত্তাল। এরশাদ নির্বিকার। আন্দোলন দমন, গ্রেপ্তার- চলতো, আহত-নিহতের ঘটনাও ঘটতো।
এক এক জুম্মায় এক এক মসজিদে নামাজ পড়ার স্বপ্ন দেখতেন। মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে সেই ‘সৃজনশীল স্বপ্ন গল্প’ বলতেন। রাতে স্বপ্ন দেখেই ছুটে যেতেন আটরশি পীরের দরবারে। এরশাদ নিজে হয়ে উঠেছিলেন রম্য-রসিকতার গল্পের অন্যতম চরিত্র। তার এই চরিত্র চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলেছিলেন শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের কালে কবিতা পরিষদের প্রতিবাদী মঞ্চে বসে এঁকেছিলেন ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’- যা ছিলো এরশাদের চরিত্রের সবচেয়ে সত্য-নির্মোহ-তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্লেষণ।
২.
জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর একটি নির্বাচিত সরকারকে পদচ্যুত করে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেছিলেন এরশাদ। দুর্নীতি-সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত ও কোন্দলে বিভক্ত বিএনপির রাজনীতি, এরশাদের ক্ষমতা দখলকে সহজ করে দিয়েছিলো। সহায়ক ভূমিকা রেখেছিলো সেই সময়ে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের রাজনীতি অবস্থানও।
বিএনপি-আওয়ামী লীগের ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গে’র রীতি-নীতির সুবিধা কাজে লাগিয়ে এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শুধু ক্ষমতা দখল নয়, সারাজীবনই পরিবেশ বা ভাগ্য- যাই বলি না কেনো, এরশাদের পক্ষে থেকেছে।
১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিয়ে পাকিস্তানে গিয়ে সামরিক বাহিনীর চাকরি করার অভিযোগ তার বইয়ে লিখেছেন মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম। তিনি লিখেছেন, মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে দেশে ফিরে আবার পাকিস্তান চলে গেছেন। ১৯৭১-১৯৭২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে থেকেছেন।
এরশাদ স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেছেন ১৯৭৩ সালে। বঙ্গবন্ধু তাকে সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুটেন্ড জেনারেল পদে চাকরি দিয়েছেন। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরেই পদোন্নতি পেয়ে কর্নেল হয়েছেন। ১৯৭৫ সালের জুনে তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তখন এরশাদ ভারতে প্রশিক্ষণে। ভারতে থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অবাক করা ব্যাপার হলেও এরশাদের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে।
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে লে. জে. পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু-জিয়াউর রহমান দুজনেরই কৃপা পেয়েছেন এরশাদ।
৩.
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কে অংশ নিয়েছেন, কে নেননি, কেনো নেননি, কে স্বেচ্ছায় নিয়েছেন, কে বাধ্য হয়ে নিয়েছেন, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা রাজনীতির অন্যতম নিয়ামক।
অথচ কী আশ্চর্য বিষয়, এরশাদের ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে প্রায় কেউ কথা বলেন না। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি, পাকিস্তানের পক্ষে থেকেছেন, এই অভিযোগ তদন্তের কোনো উদ্যোগ কেউ কখনো নেননি। অথচ সেক্টর কমান্ডারদের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
৪.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের মৃত্যুতে দেওয়া শোক বাণীতে ‘বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের গঠনমূলক ভূমিকা’র কথা স্মরণ করেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। এই অভিযোগ সব সময় করা হয়, এবং সত্য অভিযোগ। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল ফারুকদের বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন এরশাদ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের বিপক্ষে কর্নেল ফারুককে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করিয়েছেন। ভোটারবিহীন নির্বাচনে কর্নেল ফারুকদের এমপি বানিয়েছেন, সংসদে এনে বিরোধী দল বানিয়েছেন। অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ফ্রিডম পার্টির হাতে নিহত হয়েছেন।
চট্টগ্রামের লালদিঘির ময়দানে জনসভায় যোগ দিতে যাওয়া শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করেছে। সেই গুলিতে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।পুলিশের গুলির এই দায়, সরকার প্রধান হিসেবে এরশাদের উপরই বর্তায়
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার চেয়ে কম ভয়াবহ ছিলো না শেখ হাসিনার জনসভায় সেই গুলিবর্ষণ।
৫.
জাতীয় রাজনীতিবিদদের সুযোগ-সুবিধা, ক্ষমতা দিয়ে দলে টানার যে ধারা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন, এরশাদ তার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়েছেন। রাস্তা-অবকাঠামো ‘উন্নয়ন’ তার কৃতিত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ করা হচ্ছে না যে, ‘উন্নয়ন’র নামে এরশাদ দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়েছিলেন।
ক্ষমতাচ্যুতের পর তার বালিশের ভেতরে-বিছানায় দুই কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়া মিজানুর রহমান ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, দলের অফিস করার জন্যে নেতাকর্মীদের থেকে এই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। দলের প্রধান হিসেবে এরশাদের কাছে তা রাখা ছিল। এবং তিনি তা রেখেছিলেন বালিশ-বিছানায়।
প্রেম-বিয়ে, রাষ্ট্রীয় অর্থ ও ক্ষমতার অনৈতিক ব্যবহারের বহু গল্প ছিলো তাকে নিয়ে।
অনেকে এও বলছেন, এরশাদ ছাত্ররাজনীতি পছন্দ করতেন না। ইতিবাচকভাবে বিষয়টি উপস্থাপনের চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রকৃত সত্য হলো, ‘নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ’ নামে এরশাদ একটি ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এরশাদের মদদপুষ্ট জগন্নাথ কলেজের তিব্বত-লোটন-জোটন তিন ভাইয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা জানা আছে সবারই।আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল তিব্বত।তিব্বত ছিল এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের জগন্নাথ কলেজ শাখার সভাপতি ও জগন্নাথের অনির্বাচিত ভিপি।
পুলিশি সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখলের চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হয়েছে ‘নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ’। ‘নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের’ সন্ত্রাসী আক্রমণে নিহত হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মী। রাউফুন বসুনিয়া হত্যা তার অন্যতম।
সেলিম-দেলোয়ারের উপর ট্রাক তুলে হত্যা করা হয়েছে। নূর হোসেন, জয়নাল, দীপালি সাহাদের গুলি করে হত্যা করেছে এরশাদের পুলিশ!
‘মিটিমিটি’ হাসি মুখে এরশাদ ছাত্র-জনতা হত্যা করেছে। ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ঐতিহ্যের অনেকটাই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিলো এরশাদ। তিনি ছাত্রদল নেতা জালালকে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। উপমন্ত্রী করে দলে ভিড়িয়েছিলেন ডাকসুর নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলুকে- যা ডাকসুর ইতিহাসে বিরল।
ক্ষমতার শেষ সময়ে অ্যাম্বুলেন্স ভর্তি অস্ত্র দিয়ে অভিদের জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। ক্যাম্পাসে এসে তারা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে।তাদের গুলিত ডা. মিলন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন,এই অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিরোধে অভিরা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এরশাদ ব্যর্থ হয়ে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
৬.
আওয়ামী লীগ-বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার মোহ ও নৈতিকতাহীন রাজনীতি, পতিত স্বৈরাচার এরশাদকে আবার পুনর্বাসন করেছে। একথাও সত্যি যে,এরশাদ সমগ্র রংপুর ও সিলেটের কিছু অংশে ক্ষমতাচ্যুতের পরেও জনপ্রিয় ছিলেন। গণআন্দোলনে পতিত স্বৈরাচার রংপুর থেকে পাঁচটি আসনেও বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে এরশাদকে জেলে রেখেছে, দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়েছে। মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলার মতো গুরুতর মামলা পরিচালনা করেনি। বিএনপির আচরণে প্রকৃত শাস্তির চেয়ে প্রতিহিংসা বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। বিএনপি আবার তাকে চার দলীয় জোটে টেনে নিয়েছে। সুবিধামতো এরশাদ বিএনপিকে ছেড়ে চলে গেছে।
আওয়ামী লীগ এরশাদকে কাছে টেনে নিয়েছে। মঞ্জুর হত্যা মামলা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এরশাদ নির্বাচন বর্জন ও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে চেয়েও পারেননি। অসুস্থ না হয়েও তাকে সিএমএইচয়ে ভর্তি হতে হয়েছে, এমপি হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূত হয়েছেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন।
এরশাদ সব সময় নিজেকে ‘সৈনিক’ হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন, রাজনীতিবিদ নয়। এরশাদকে নিয়ে বড় রাজনৈতিক দল দুটি যেমন খেলেছে, সৈনিক এরশাদ রাজনীতিবিদদের নিয়ে খেলেছেন তার চেয়ে বেশি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে, সাম্প্রদায়িকতার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়ে গেছেন। একাত্তরের জল্লাদ মাওলানা মান্নানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাজনীতিকে কলুষিত-দূষিত করার ক্ষেত্রে বহুবিধ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রেখেছেন।
এরশাদকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একটি সুক্ষ্ম চতুরতা দৃশ্যমান হচ্ছে যে, তার সময়ের দুর্নীতির চেয়ে এখন দুর্নীতি আরো বেড়েছে, বেড়েছে শাসন ব্যবস্থার কর্তৃত্ববাদ। নির্বাচনগুলো এরশাদের সময়ের চেয়ে এখন আরো খারাপ হয়েছে। এসবের কোনোকিছুই হয়ত অসত্য নয়। ইতিহাসে নিশ্চয় বিষয়গুলো মুল্যায়িত হবে। যিনি যা করছেন তার মূল্যায়ন সেভাবেই হবে। সে কারণে এরশাদের স্বৈরাচার পরিচয় মুছে যেতে পারে না। তার অনৈতিকতা-দুর্নীতি-অসততা, বর্তমানের প্রেক্ষাপট সামনে এনে আড়াল করা যাবে না।
যদিও সব সময়ের ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা সেই চেষ্টাই করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এমন অনেক নেতা ‘এরশাদ সাহেব’ বলেন। বিএনপিরও কোনো কোনো নেতাকে ‘এরশাদ সাহেব’ বলতে শোনা যায়।
নূর হোসেন, সেলিম-দেলওয়ার, বসুনিয়া-জয়নাল-জাফর-দীপালি সাহা, ডা. মিলনদের কথা ভুলে গেছেন রাজনীতিবিদরা।
স্বৈরাচার ‘বিশ্ব বেহায়া’ বিদায় নিলেন ‘এরশাদ সাহেব’ হয়ে!
৭.
সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। প্রশ্ন সামনে এসেছে, এরশাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাওয়া নিয়ে। আদালতের রায় অনুযায়ী এরশাদের ‘রাষ্ট্রপতি পদ’ অবৈধ। এছাড়া তিনি জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলারও আসামি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জের মামলা দুটির রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সুস্পষ্টভাবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন-
ক. জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ।
খ. জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতার পুরো সময়কাল অবৈধ।
গ. জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা দখলের পরের সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ।
সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগ ঘোষিত যে কোনো রায় বাংলাদেশের আইন।
এই দুটি রায়ে মাননীয় বিচারপতিগণ সুস্পষ্টভাবে মতামত প্রকাশ করেছেন যে, সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে এভাবে ক্ষমতা দখল ছিলো রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কর্মকাণ্ড। এজন্যে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের বিচারের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিলো এই দুটি রায়ে।’’
Comments