সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমার কাজ করতে হয়
আজম খান। বর্তমান টেলিভিশন মিডিয়ার একজন পরিচিত মুখ। ৩১ বছর ধরে ব্যাংকিং সেবায় কর্মরত রয়েছেন তিনি। কর্মজীবনের পাশাপাশি শখের বশে কাজ শুরু করেন শোবিজ অঙ্গনে। তার কর্মজীবন, শোবিজের কাজের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য আরো বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি...
স্টার অনলাইন: আপনার কোন জীবনটাকে বেশি উপভোগ করেন- ব্যক্তি জীবন নাকি অভিনয় জীবন?
আজম খান: আসলে জীবনের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে আমাকে তিনটা জীবন সম্পর্কেই বলতে হবে। প্রথমত পরিবার, দ্বিতীয়ত ব্যাংকিং আর তৃতীয়ত শেবিজ অঙ্গন। এই তিন জীবনের মধ্যে পরিবারই আমার কাছে সবার আগে, তারপর প্রফেশনালি যদি বলতে হয়, তাহলে ব্যাংকিং লাইফের কথাই বলব। কারণ ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ৩১ বছর ব্যাংকিং জীবনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। এক কথায় বলতে গেলে ব্যাংকিং সেক্টরে আমি অনেক কিছু শিখেছি। তাই কর্মজীবনের এ পেশাটাকে আমি অনেক বেশি উপভোগ করি।
স্টার অনলাইন: শোবিজের কাজ শুরু করেন কবে থেকে?
আজম খান: আমি শোবিজ অঙ্গনে কাজ শুরু করি ২০১৫ সালের ৩ জুলাই। ছাত্রজীবনে আমি মঞ্চে কাজ করার পাশাপাশি প্রচুর বিতর্ক অনুষ্ঠান করতাম এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতাম। পরবর্তী সময়ে পেশাগত কাজের সুবাদে টেলিভিশন মিডিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়। একটা সময় আমি মিডিয়াতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করি। এটিএন বাংলার সঙ্গে আমাদের তখন একটা ওয়ার্কিং রিলেশন ছিল। আমার আগ্রহ প্রকাশের পর এটিএন বাংলা চন্দন সিনহা এবং মীর মোতাহের আহসান আমাকে কয়েকজন গুণি নির্মাতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে শোবিজে আমার কাজ করা শুরু হয়। আমার অভিনীত প্রথম টেলিফিল্মটি প্রচার হয় চ্যানেল আইতে। এটি পরিচালনা করেছেন এফইউ পিটার এবং আমি এতে শক্তিমান অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে অভিনয় করি। ওই দিনটা আমার জন্য অশেষ আনন্দের পাশাপাশি দুঃখের ছিল। কারণ সে দিনটিতে আমি আমার মাকে হারাই।
স্টার অনলাইন: ব্যস্ততার মাঝে অভিনয়ের জন্য সময় বের করেন কীভাবে?
আজম খান: সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমার কাজ করতে হয়। যেহেতু আমি একটি পেশার সঙ্গে জড়িত, সে কারণে আমি চাইলেও পুরোপুরি মিডিয়াতে সময় দিতে পারি না। আমাদের নাটকের শুটিং যেহেতু বেশিরভাগ উত্তরাতেই হয়, সে কারণেই অফিস শেষ করেই রাতে কাজ করা হয়। এছাড়া আমি চেষ্টা করি আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে শ্যুটিং ফেলার। আর যদি ঢাকার বাইরে কিংবা ছুটির দিনগুলোর সঙ্গে না মেলানো যায়, তাহলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কাজ করা হয়।
স্টার অনলাইন: আপনার ভাল লাগা কাজগুলো কী কী?
আজম খান: এনটিভিতে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক ‘নীল রঙা মন’ নাটকটি আমার মনে রাখার মতো একটি কাজ। নাটকটিতে মূলত তিন প্রজন্মের গল্প বলা হয়েছে। এছাড়া গোলাম সোহরাব দোদুলের পরিচালনায় ‘শিউলিমালা’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছি। ৪০০ বছরের পুরনো একটি গল্পে নির্মিত এ নাটকটি আমার ভালো লাগার কাজের মধ্যে অন্যতম। বেসিক আলী নামে একটি সিরিজে আমি একজন ব্যাংকারের চরিত্রে কাজ করেছি। এছাড়া বিভিন্ন দিবস কিংবা দিবসের বাইরেও বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা দিবসের বেশকিছু ভালো ভালো একক নাটক কিংবা টেলিফিল্মে কাজ করা হয়েছে।
স্টার অনলাইন: অভিনয়ের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেন?
আজম খান: আমাকে যখন কোনো নির্মাতা কাজের জন্য নির্বাচন করেন, তখন আমি আগে থেকে নাটকের স্ক্রিপ্টটা চেয়ে নিই এবং সে অনুযায়ী চরিত্র নিয়ে নিজের ভাবনা থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করি। অনেক সময় দেখা যায়, অনেক নাটকের স্ক্রিপ্টই থাকে না। সে কারণে একটু সমস্যায় পড়তে হয়। তবে নির্মাতাদের সহযোগিতা আর নিজের ভাবনা দিয়ে কাজটা সম্পন্ন করি।
স্টার অনলাইন: সিনেমায় কাজ করা হয়েছে?
আজম খান: আমি একটি মাত্র সিনেমায় কাজ করেছি। সেটি হচ্ছে গোলাম সোহরাব দোদুল পরিচালিত ‘সাপলুডু’। সিনেমাটিতে একজন সিআইডি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। যদিও আমার চরিত্রটি খুব ছোট, তবুও আমার কাজে এটি অনেক বড় প্রাপ্তি।
স্টার অনলাইন: সিনেমা এবং নাটকে অভিনয়ের পার্থক্য কেমন?
আজম খান: দুই মাধ্যমেই অভিনয়ের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। সিনেমা দর্শক তার পকেটের টাকা খরচ করে দেখে। দর্শককে যা খুশি তা দেখালে তো আর হবে। এক কথায় বলতে হয়, সিনেমার অভিনয় থেকে শুরু করে সবকিছুই অনেক গভীর থেকে গভীরতরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, যেটা নাটকে করা হয় না।
স্টার অনলাইন: অভিনয় করতে এসে নিজের স্বপ্নকে কি ছুঁতে পেরেছেন?
আজম খান: আমার অভিনীত একক নাটকের সংখ্যা প্রায় ১১০-১১৫। এর মধ্যে থেকে হয়তো হাতে গোনা ১০টি হয়তো রয়েছে আমার পছন্দের কাজের তালিকায়। অভিনয় তো আর আমার বেশি সময় হয়নি। সে হিসেবে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো তেমন কোনো কাজ আমার না থাকলেও আশা করি ভবিষ্যতে ভালো কাজ হবে। তবে ধারাবাহিক ‘নীল রঙা মন’ এবং ‘শিউলিমালা’ নাটকের চরিত্র দুটি নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী।
স্টার অনলাইন: কাদের অভিনয় আপনার ভালো লাগে?
আজম খান: আবুল হায়াত সাহেবের অভিনয় আমার ভালো লাগে। কারণ আমার মনে হয় উনি নিজে একটা ইনস্টিটিউট। এছাড়া তরুণদের মধ্যে সিয়াম ও মেহজাবিনের অভিনয় আমার ভালো লাগে।
স্টার অনলাইন: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আজম খান: আসলে মিডিয়াতে আমার আসাটা একটু দেরিতে হয়েছে বিধায় মনের মধ্যে অনেক স্বপ্ন থাকলেও সেটা সম্ভব নয়। কারণ আমাকে আমার বর্তমান অবস্থা নিয়েই চিন্তা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাকে একজন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করতে হবে। এ কাজটাই আমি খুবই আনন্দের সঙ্গে করি। ভবিষ্যতে তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকলেও এতটুকু বলতে পারি, যতদিন বাঁচি মিডিয়ার সঙ্গেই কাজ করে যেতে চাই।
Comments