তৃণমূল নেতাদের কারণে জনপ্রিয়তা কমছে তৃণমূল কংগ্রেসের

Trinamool Congress
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে লোকসভা ভোটের নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবারের নির্বাচনে বিজেপিকে আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের খোদ দলনেত্রী প্রতিদিন একটি বা দু’টি করে জনসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপিকে কড়া সুরে আক্রমণ করে চলেছেন।

তৃণমূলের তরফে পশ্চিমবঙ্গে এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোট ৪২টি লোকসভা আসনের ৪২টি দখলের ডাক দেওয়া হলেও বাস্তবে যে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তা মেনে নিয়েছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারাও।

গত ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যে হারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলো, এবারে সেই জনপ্রিয়তার মাত্রা অনেকটাই হারিয়েছে। উপরন্তু শাসকের ভয় রাজ্য জুড়ে দাপিয়ে বসেছে। প্রায় প্রতিদিনই অভিযোগ উঠছে, শাসকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই নানাভাবে পুলিশি হয়রানি ও জুলুম-অত্যাচারের ঘটনা ঘটে।

ফলে, এবারে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের যতোটা না জনপ্রিয়তা রাজ্যে রয়েছে, তার চেয়ে বেশি ভয় কাজ করছে মানুষের মনে। এবারের নির্বাচনী প্রচারে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা ময়দান কাঁপালেও আমজনতা অদ্ভুতভাবে নিশ্চুপ। ভোট নিয়ে কেউই সেই অর্থে মুখ খুলতে রাজি নয়। রাজ্যটির রাজনৈতিক মহলের মত, তৃণমূলের এই জনপ্রিয়তা হারানোর মূল কারণ দলের নীচুস্তরের নেতা-নেত্রীরা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য নেতৃত্বের প্রথম সারির কিছু নেতা-নেত্রীকে বাদ দিলে জেলা ও ব্লক স্তরে একটি বড় অংশের তৃণমূল নেতাদের দাদাগিরি কার্যত অসহনীয় হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের কাছে। বাম জমানায় যেভাবে কমরেডদের রক্তচক্ষু মানুষকে সন্ত্রস্ত করে তুলেছিলো। ঠিক একই কায়দায় এই জমানাতেও রাজ্যের বহু স্থানে তৃণমূলের সিকি ও আধুলি মাপের নেতা-নেত্রীরা হয়ে উঠেছেন এলাকার বেতজ বাদশা।

সেই সঙ্গে বাম আমলের কুখ্যাত কমরেডদের বাছ-বিচার না করে জেলায় জেলায় শাসক শিবিরে ঢুকিয়ে নেওয়াটাকেও ভালো চোখে দেখেনি সাধারণ মানুষ। বাম আমলে যাদের বিরুদ্ধে বিরক্ত হয়ে মানুষ তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছিলো, এখন রাজ্যের বহু ক্ষেত্রে সেই সমস্ত বাম আমলের দাগী কমরেডরাই তৃণমূল নেতাদের ছায়াসঙ্গী হয়ে উঠেছে। ফলে স্বভাবতই মানুষ চুপচাপ শাসক শিবিরের থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতেই পশ্চিমবঙ্গে বাড়বাড়ন্ত ঘটেছে বিজেপির।

রাজ্যশাসক বিরোধী শক্তি বলতে যেহেতু কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রতিবাদ প্রতিরোধের ক্ষমতা দেখাতে পারছে, তাই বিজেপি শিবিরেই ঝুঁকছেন মানুষ। রাজ্যে শাসক শিবিরের যে পায়ের তলার মাটি একটু একটু করে ক্ষয় হচ্ছে সেটা হয়তো বুঝতে পেরেই তৃণমূল নেত্রী রাতদিন এক করে ওয়ান ম্যান আর্মির মতোই প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। মজার বিষয় হলো, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া শাসক শিবিরের এমন কোনও নেতা বা নেত্রী নেই যাদের দিকে তাকিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক কথা বলবে।

যে কারণেই এবারে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সেলিব্রিটি প্রার্থী তথা অভিনেত্রী নুসরাত জাহান থেকে মুনমুন সেন সবাইকে ভোট প্রচারে বলতে হচ্ছে, আমাকে নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দিন। ফলে তৃণমূলের ঘুণে খাওয়া নীচুস্তরের নেতা-নেত্রীদের দলে রেখে একা মমতা এবারে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে লড়াইয়ে কতোটা সাফল্য আদায় করে  নিতে পারবেন, সেটিই এবারের নির্বাচনের সবথেকে কৌতুহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus in Rome to attend Pope Francis’ funeral

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus reached Rome yesterday to attend the funeral of Pope Francis.

2h ago