লোকসভা ভোট বিশ্লেষণ

পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় উন্মাদনা ক্রমশ বাড়ছে

India polls
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে উঠেছে বিজেপি। তার নমুনা দেখা গেলো কলকাতায় এক শিল্পীর শিল্পকর্মে। ছবি: রয়টার্স

এই মাটিতে জন্মেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জন্মেছিলেন বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কতোশত সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, নাট্যকার, বিজ্ঞানীর জন্মের ইতিকথা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

অসাম্প্রদায়িক চেতনা এখানে শিরদাঁড়াকে সোজা করতে শেখায়। কিন্তু, এখানেই এই রাজ্যের রাজনীতিকরাই বারবার রাজনীতের সুবিধার জন্য ব্যবহার করছেন ধর্মকে।

সোজা কথায়, ধর্মকে সম্বল করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের রাজনীতি ক্রমশই প্রকট হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে। ধর্মের রাজনীতিতে গোঁড়া ধর্মপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও সেই ধর্মের পথে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। ১৪ এপ্রিল রামনবমী উদযাপন সেই দৃশ্যই পশ্চিমবঙ্গে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো।

সেদিন রামনবমী উপলক্ষে বিজেপি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও শোভাযাত্রা বের করে। সেসব শোভাযাত্রার বহু ক্ষেত্রেই গদা, তলোয়ার হাতে নিয়ে মিছিল সংগঠিত করে তারা। স্বভাবতই হিন্দুত্বের জিগিরকে উস্কে দিয়ে বিজেপি ওইদিন রাজ্যে রামনবমীকে উৎসবে পরিণত করার চেষ্টা করে।

বিগত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে রামনবমী উপলক্ষে এতো উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি। এবারে ভোটের বাজারে রামনবমীকে পাথেয় করে বিজেপির বিভিন্ন প্রার্থীরা ভোট প্রচারও সেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এবারের ভোটে রাজ্যটির শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মাথা ব্যাথার কারণ বিজেপি।

কারণ, বিজেপি যেভাবে এই রাজ্যে ধর্মীয় উন্মাদনাকে কাজে লাগিয়ে উঠে আসছে তাতে বিজেপিকে আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্যটির শাসকদল। রাজ্যে গত কয়েকটি উপনির্বাচনে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের কাছে এবারের নির্বাচনে বিজেপি হলো প্রধান বিরোধী। যেকথা খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, বিজেপিকে যে কোনো মূল্যে রুখতে হবে। সেই মতো দলীয় নেতা-কর্মীদের বার্তাও দিয়েছেন তিনি। এমনকী, তিনি নিজেও বর্তমানে প্রতিটি জনসভা থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে চলেছেন। সেক্ষেত্রে রামনবমীকে কাজে লাগিয়ে যাতে বিজেপি পুরো মাত্রায় হিন্দুত্বের ফায়দা লুঠতে না পারে, তার জন্য ১৪ এপ্রিল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকেও দেখা গেলো বহু জায়গায় রামনবমীর মিছিল বের করতে।

এমনকী, রাজ্যের বহু জায়গায় রামনবমীর পুজোতেও সামিল হতে দেখা যায় শাসক ঘনিষ্ঠ নেতাদের। যদিও পার্থক্য বলতে তৃনমূলের মিছিলে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিলো না। শাসক দলের দাবি, ধর্মকে ধর্মীয় শান্তির মাধ্যমে পালন করা যাতেই পারে। যেটা এর আগে পশ্চিমবঙ্গে সেই অর্থে ঘটেনি, এবারে সেই আবহকে চোখের উপর প্রত্যক্ষ করলেন রাজ্যবাসী।

বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতিকে টেক্কা দিতে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসও কার্যত বাধ্য হলো রামনবমীর মিছিল করতে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিজেপি যেভাবে হিন্দুত্বের ও হিন্দু ধর্মের রাজনীতিকে ঝড়ের বেগে রাজনীতির আঙ্গিনায় তুলে এনেছে তাতে বিজেপিবিরোধী শক্তি এখন কার্যত বাধ্য হচ্ছেন ধর্মের পথে হাঁটতে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ইতিমধ্যে মানুষের মগজে একটি বিষয় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে, সেটা হলো, রাজনীতি হলো মাথায়, আর ধর্ম হলো হৃদয়ে। আর সেই তথ্যকে কাজে লাগিয়েই রাজ্যে বাড়বাড়ন্ত ঘটাচ্ছে বিজেপি।

অন্যদিকে, রাজ্যের শাসকদল এতোদিন ধরে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সীমানায় নিজেদের আটকে রাখলেও এবারে বিজেপিকে প্রতিহত করতে তারাও বাধ্য হয়ে ধর্মীয় উন্মাদনায় ইতিউতি যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এ যাবতকাল ধরে ধর্মের যে রাজনীতি মাথা চাড়া দিতে পারেনি এবারে সেই ধর্মই ভোট ময়দানে ধীরে ধীরে ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus, Tarique will decide what they'll discuss, says Shafiqul

The CA's press secretary says there is no specific format for the meeting but anything, including the current political situation, election timeline announced by the chief adviser, reforms, and July Charter can be discussed

3h ago