শৈলশহর দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের ভোটে অঙ্ক মেলাতে পারছে না তৃণমূল-বিজেপি কেউ

Darjiling
দার্জিলিং এর একটি দৃশ্য। ছবি: নাজ ফাহমিদা

৩৫ বছর পর এই প্রথম জটিল অঙ্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভোট হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে এবারে মূল লড়াই হবে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। তবে, এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীও ভোটের অঙ্কে অনেকটাই দৌড়াবেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের আনন্দ পাঠক জয়ী হয়েছিলেন। তারপর শুরু হয়েছিলো সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিধ্বংসী আন্দোলন। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই একটা সময় পাহাড়ের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন সুবাস ঘিসিং। তখন থেকেই পাহাড়ের মাটিতে সুবাস ঘিসিং যাকে সমর্থন করতেন তিনিই জয়ী হতেন।

তাই লোকসভা ভোট এলেই সুবাস ঘিসিংয়ের নৈতিক সমর্থন পেতে মরিয়া হয়ে উঠতেন বিভিন্ন দলের নেতারা।

কারণ, তার (সুবাস ঘিসিং) আশীর্বাদ মানেই ছিলো দিল্লির টিকিট হাতে পাওয়া। সুবাস ঘিসিংয়ের পর পাহাড়ের ভোটের ইজারা পেয়েছিলেন বিমল গুরুং। বলা চলে বিমল গুরুংয়ের কৃপাতেই এই দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে পরপর দুই বার জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু, এবারে এমন একটা পরিস্থিতিতে পাহাড়ে ভোট হতে চলেছে যখন দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে সার্বিক পাহাড় ও সমতলের সিংহভাগ ভোট কোন দিকে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। আর এই অনিশ্চয়তার আবহে দাঁড়িয়ে সব রাজনৈতিক দলগুলিই এখন পাহাড় জেতার স্বপ্ন দেখছেন। সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য রোদ-গরম উপেক্ষা করে দলীয় প্রার্থী সমন পাঠককে জেতানোর জন্য দৌড়াচ্ছেন।

অশোক ভট্টাচার্য বলেন, বহু বছর পর পাহাড়ে গণতন্ত্র ফিরতে চলেছে। পাহাড়ের চা বাগানে আমাদের সংগঠন আছে, সমতলেও শক্তি আছে। তাই দার্জিলিং কেন্দ্রে এবার আমাদের ফল ভালো হবে। কংগ্রেসও এবারে এই কেন্দ্র লড়াইতে রয়েছে। এবার এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন শংকর মালাকার। কংগ্রেস এই কেন্দ্রে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপিকে রুখতে জোরদার লড়াইয়ে নেমেছে।

উল্লেখ্য, গতবার প্রায় দুই লক্ষ ভোটে বিজেপি প্রার্থী জিতেছিলো এই দার্জিলিংয়ে। কিন্তু, এবারে পাহাড়ে একতরফা ভোটের সম্ভাবনা নেই। কারণ, বিমল গুরুংয়ের ইজারাদারির লাইসেন্সের মেয়াদ আপাতত ফুরিয়েছে। ফলে গুরুং পাহাড়ে না থাকলে বিজেপি যে চাপে পড়বে তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। অনেকে ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, বিজেপি হেরে যাওয়ার আশঙ্কাতেই নাকি গতবারের জয়ী বিজেপি সাংসদ সুরন্দর সিং আলুওয়ালা এবারে ভোটে দাঁড়াননি।

তবে, বিজেপি নেতাদের দাবি, গুরুং পাহাড়ে না থাকলেও পাহাড়ে বিজেপির ভোট কমবে না। কারণ, মানুষ নিজের চোখেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের দাদাগিরি দেখছে। তাই এবার পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলেও বিজেপি প্রার্থী রাজু সিং বিস্তারের ভোট বাড়বে।

অন্যদিকে, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল এখানে কিছুটা দুর্বল। তবে, সেই দুর্বলতা কাটাতে তৃণমূল মরিয়া প্রচার চালাচ্ছে। পাহাড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি ফিরিয়েছেন এবং উন্নয়ন ঘটিয়েছেন এই বার্তা নিয়ে জোর প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী গৌতম দেব রাতদিন এক করে প্রচারের ময়দান কাঁপাচ্ছেন। এই দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস-সিপিএমের ভোট কাটাকাটিতে তৃণমূল কিছুটা সুবিধা পেলেও জিততে গেলে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের পাহাড়ই ভরসা। এবারে সেই পাহাড়ের রাশ আক্ষরিক অর্থেই কারো  হাতেই নেই।

এক সময় উত্তপ্ত পাহাড়কে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিমল গুরুংয়ের সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বিনয় তামাং। যার ফলশ্রুতিতে বিনয় তামাং পাহাড়ের জিটিএ-র চেয়ারম্যান। এবারে তারই সঙ্গী অমর সিং রাই দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী। তাই এই আসনে লড়াইটা এবার বেশ হাড্ডাহাড্ডি। তবে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পাহাড়ের বিশেষ সুবিধা এবার অন্তত কোনও প্রার্থীই পাচ্ছেন না বলেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা। 

Comments

The Daily Star  | English

Rising gas prices threaten our investment prospects

The previous government not only turned the country into a net importer of energy, but also initiated a process to make it an import-dependent.

7h ago