সাকিবে রাঙানো দুরন্ত জয়

Shakib Al Hasan
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ম্যাচটা হতে পারত লিটন দাসের। দারুণ ব্যাট করে ঝড়ো ফিফটিতে দলকে পাইয়ে দিয়েছিলেন বড় রানের ভিত। সেই ভিতে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে তাণ্ডব তুলে কাজটা শেষ করেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই। পরে বল করতে নেমেও সাকিবের বাজিমাত। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিয়ে সব আলো নিয়ে নেন নিজের দিকেই। অধিনায়কের সেরা দিনে তাই টগবগিয়েই মাঠ ছেড়ে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ২১১ করেছিল বাংলাদেশ। সাকিবের ছোবলে ঐ রান তাড়ায় ১৭৫ রানে গিয়ে থামে উইন্ডিজ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজেও সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। 

ব্যাটে ৪২ করার পর ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সাকিব বুঝিয়েছেন কেন তাকে বলা হয় সব্যসাচী ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টি এই প্রথম কোন ক্রিকেটার একই ম্যাচে ৪০ এর বেশি রান আর পাঁচ উইকেট নিলেন। অথচ কে বলবে! ম্যাচের আগের দিন যে জ্বরের কারণে নামতে পারেননি অনুশীলনেও।

বাংলাদেশ বিশাল লক্ষ্য দিলেও এক পর্যায়ে দারুণভাবে ম্যাচে ছিল উইন্ডিজ। মোস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি আর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনদের দেদারসে রান বিলানোর দিনে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। দরকারি সময়ে ব্রেক থ্রো এনে দিয়ে খেলার মোড় ঘোরান বাংলাদেশ অধিনায়ক।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এদিন আর নড়বড়ে শুরু নয়। উইন্ডিজ পেসারদের গতি পড়ে নিয়ে টগবগিয়ে ছুটেছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতেই চার ওভারেই আসে ৪২ রান। বেশিরভাগ অবশ্যই লিটনের ব্যাটে। আরেক পাশে আড়ালে পড়ে থাকা তামিম ইকবাল ১৩ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ফ্যাবিয়ান অ্যালান সে ক্যাচ ছাড়ার খানিক পরেই অবশ্য বল করতে এসে পুষিয়ে নিয়েছেন। আর ২ রান যোগ করে অ্যালানের বলেই শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম।

লিটনের ঝড় তখন আরও তুঙ্গে। আগের ম্যাচের ভুল থেকে বেরিয়ে এসে মাথা খাটিয়ে মেরেছেন শট, বলের গতি ব্যবহার করে বের করেছেন বাউন্ডারি। ওশান টমাসকে মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মারার পরে স্কুপ করেও পরের বলেই মেরেছেন চোখ ধাঁধানো আরেক ছক্কা। এর আগে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকেও এগিয়ে এসে মারেন দুই ছক্কা। তার ব্যাটে তরতরিয়ে বাড়তে থাকেন রান। ২৪ বলে ৫ চার আর চার ছক্কা মেরে ফিফটিতে পৌঁছান লিটন। ফিফটি করার পরই অবশ্য দিয়েছিলেন সুযোগ। ৫৫ রানে কেমো পলের বলে তার ক্যাচ ফেলে দেন ড্যারেন ব্র্যাভো।

অন্যদিকে লিটনকে মারতে দেখে তেতে উঠেছিলেন সৌম্য সরকারও। তীব্র গতিতে একের পর এক সীমানা পার করে জমিয়ে দেন খেলা। দুজনের জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। ১০ ওভার ১ বলে দল ছুঁয়ে ফেলে ১০০। তারা এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরও বড় কিছুর দিকে। শেলডন কটরেলের বলে মিড অফে ব্র্যাথওয়েট সৌম্যকে ফেরালে ভাঙে দুজনের ৬৮ রানের জুটি।  ২২ বলে ৩২ করে ফেরেন সৌম্য। ওই ওভারেই বিদায় নেন লিটনও। তার ৩৪ বলে ৬০ রানের ঝড় থামে কটরেলকে বলের গতি বুঝতে না পেরে। ভেতরে ঢোকা বলে কাট করতে গিয়েছিলেন, গতিতে পরাস্ত হয়ে খোয়ান স্টাম্প।

পরের ওভারেই আরেক বিপর্যয়। পাঁচে নেমে দ্রুতই ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। টমাসের বল উড়াতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি। ক্যাচ যায় ডিম মিড উইকেটে। উড়তে থাকা বাংলাদেশ দ্রুত তিন উইকেট খুইয়ে তখন কিছুটা চাপে।

মাহমুদউল্লাহ নেমে কটরেলকে টানা তিন বাউন্ডারিতে এক ঝাপটায় সরান চাপ। শুরু হয়ে সাকিবেরও ঝড়। ফের ডানা মেলে উড়াল বাংলাদেশের। মাঝপথে খানিকটা হোঁচট খাওয়া দলের চাকা এক টানে দুশো পার করে নিয়ে যান দুজন। দুজনেই পেরিয়ে যান চল্লিশ। পঞ্চম উইকেটে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে বাংলাদেশ পায় বিশাল পুঁজি।

রান তাড়ায় উড়ন্ত শুরু পায় ক্যারিবিয়ানরাও। যিনি ঝড় তুলবেন বলে শঙ্কা করা হয়েছিল সেই এভিন লুইস অবশ্য এদিনও ব্যর্থ।রনির বলে এলবডব্লিও হয়ে রিভিউতে বাঁচলেও রনিকেই দিয়ে যান উইকেট। ওয়ানডে সিরিজ থেকেই বাংলাদেশের বিপক্ষে একা লড়তে থাকা শেই হোপ এদিনও তুলেছিলেন তাণ্ডব। মোস্তাফিজের এক ওভারে চার বাউন্ডারিতে ২৪ দিনে হুট করেই চিন্তায় ফেলে দেন বাংলাদেশকে।

নিকোলাস পুরানের সঙ্গে চোখের পলকেই গড়ে উঠে তার ৪১ রানের জুটি। পুরানকে সাকিব আউট করার পরের ওভারেই বল করতে এসে সবচেয়ে বড় উইকেট এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজকে উড়াতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে লিটনের হাতে জমা পড়েন হোপ। বাংলাদেশের ‘হোপও’ তখন বেশ চওড়া।

টানা দুই ক্যাচ মিসে সেই চওড়া আশা মিলিয়ে যেতে বসেছিল। ৬ ও ১৪ রানে রভম্যান পাওয়েলের দুবার ক্যাচ পড়ল। ৬ রানে প্রথমবার সাকিব ফেললেন মিড অনে। ১৪ রানে উইকেটের পেছনে ফেলে দেন মুশফিক। নতুন স্পেলে এসে সেই হতাশা গুছিয়ে এক ওভারেই শেমরন হেটমায়ার আর ড্যারেন ব্র্যাভোকে ফেরান অধিনায়ক। পরের ওভারে উইন্ডিজ কাপ্তান ব্র্যাথওয়েটকে ফিরিয়ে টুকে দেন শেষ পেরেক। খেলা যে তখনো ছিল পরের ওভারেই বোঝান রভম্যান। দুবার জীবন পাওয়া এই ব্যাটসম্যান রনির এক ওভার থেকে তুলেন ২০ রান। আবার পালে হাওয়া পায় ক্যারিবিয়ানরা। সাকিব শেষ ওভারে এসেই অ্যালানকে বোল্ড করে ফের ম্যাচে আনেন প্রভাব। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে দলকে ভেড়ান জেতার বন্দরে। মাঝে রভম্যানকে ছেঁটে থই পাইয়ে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। 

এই অবস্থা থেকে হারাটাই কঠিন ছিল বাংলাদেশের। নয়ে নামা কেমো পলের ঝড় সত্ত্বেও তাই বিপদ হয়নি। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ:  ২০ ওভারে ২১১/৪   (তামিম ১৫, লিটন ৬০ , সৌম্য ৩২, সাকিব ৪২*, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ৪৩* ; কটরেল ২/৩৮, টমাস ১/৪৩, ব্র্যাথওয়েট ০/৪৩, অ্যালেন ১/২৯, পল ০/৫৪)

উইন্ডিজ:  ১৯.২ ওভারে ১৭৫  (লুইস ১, হোপ ৩৬ , পুরান ১৪, হেটমায়ার ১৯,  রভম্যান ৫০ , ব্র্যাভো ২, ব্র্যাথওয়েট ৮, অ্যালেন ০, পল ২৯, কটরেল ৩* টমাস ০ ; রনি ১/৩৩, সাইফুদ্দিন ০/৪২, মোস্তাফিজ ২/৫০, সাকিব ৫/২০, ১/২৩)

ফল: বাংলাদেশ ৩৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান

Comments

The Daily Star  | English
The BNP has submitted 62 constitutional reform proposals to the Constitution Reform Commission.

BNP unveils vision for ‘rules-based’ society

The BNP yesterday submitted to the constitution reform commission its 62 recommendations designed to establish a rules-based structure and ensure checks and balances of power.

8h ago