আল জাজিরার প্রতিবেদন

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আবার ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’, ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের দমন করার শঙ্কা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যা মুসলিম-প্রধান দেশগুলোর ওপর আবারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ভিত্তি স্থাপন করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অধিকারকর্মীরা।

শুধু ভ্রমণ না, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে অবস্থান করছেন এমন ব্যক্তিদের, বিশেষত ইসরায়েলের গণহত্যার বিপক্ষে ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দমন করার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে এই আদেশ।

২০১৭ সালের 'মুসলিম নিষেধাজ্ঞার' চেয়েও ভয়াবহ

'যুক্তরাষ্ট্রকে জাতীয় ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বিদেশি সন্ত্রাসী ও অন্যদের হাত থেকে সুরক্ষা'-শীর্ষক শিরোনামে এই নির্বাহী আদেশ সোমবার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সই করেন ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী সহায়তা প্রকল্পের (আইআরএপি) আইনজীবী দীপা আলাগেসান আল জাজিরাকে বলেন, নতুন এই আদেশ ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে দেওয়া 'মুসলিম নিষেধাজ্ঞা'র চেয়েও ভয়ঙ্কর ও বড় পরিসরের।

'সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না এই আদেশ, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে লোকজনকে বের করার রাস্তাও প্রশস্ত করবে,' যোগ করেন তিনি।

নতুন আদেশ অনুযায়ী, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিছু দেশের তালিকা করতে, যেখানকার 'নাগরিকদের তথ্য যাচাই ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এতটাই ঘাটতি আছে যে, তাদের (যুক্তরাষ্ট্রে) প্রবেশ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্থগিত করা উচিত।'

জো বাইডেনের আমলে, অর্থাৎ ২০২১ থেকে এসব দেশের কতজন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন তা বের করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নাগরিকদের 'কর্মকাণ্ড' পর্যালোচনা করে তাদের বহিষ্কারে 'তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ' নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে 'যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব' পোষণ করে এমন শিক্ষার্থীদের ভিসা না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক ও শিক্ষার্থীরা যেন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, সংস্কৃতি বা সরকারের প্রতি 'শত্রুতামূলক মনোভাব' পোষণ না করে ও 'বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন না করে', তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গত বছর ইসরায়েলের গণহত্যাবিরোধী আন্দোলনের আখড়া হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সেখানকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের 'হামাস সমর্থক' ও 'যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী' আখ্যা দিয়েছেন অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদ। এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইসরায়েলবিরোধী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে আশঙ্কা করছেন অধিকারকর্মীরা।

আদেশের ভাষা অস্পষ্ট হওয়ায় তা মার্কিন প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দীপা।

ইসরায়েলবিরোধী শিক্ষার্থীদের দেশছাড়া করার চেষ্টা

নতুন নির্বাহী আদেশে 'সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রচার করে, সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের সংস্কৃতি বদলানোর বা প্রতিস্থাপনের আহ্বান জানায়, অথবা বিদেশি সন্ত্রাসীদের সহায়তা, সমর্থন বা সাফাই গায়' এমন বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে মার্কিন নাগরিকদের 'সুরক্ষা' দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞ মারিয়াম জামশিদি বলেন, 'নিঃসন্দেহে এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রচারণা চালায় এমন বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্যবস্তু করা হবে।'

ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অতীতে ফিলিস্তিনপন্থি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।

গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থীরা 'ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ' বলে মন্তব্য করেন অনেক রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বাইডেন প্রশাসনকে একটি চিঠি পাঠান, যেখানে ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অপসারণের আহ্বান জানানো হয়।

গত বছর রিপাবলিকান পার্টির ইশতেহারেও বলা হয়, 'হামাসপন্থিদের' বহিষ্কার করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোকে আবার 'নিরাপদ ও দেশপ্রেমিক' করে তুলতে হবে।

প্যালেস্টাইন লিগ্যাল নামে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের পরিচালক দিমা খালিদির মতে, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ যে ফিলিস্তিনিদের অধিকার সমর্থন করে এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে, তা 'একেবারে স্পষ্ট'।

তিনি আরও বলেন, এই আদেশে ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা না হলেও ইসরায়েলের সমালোচনাকে কেবল ইসরায়েলবিরোধী না, বরং 'যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago