‘অচলাবস্থা’য় পড়তে পারেন বাইডেন

জো বাইডেনের আশঙ্কা
জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য সমাপ্ত মধ্যবর্তী নির্বাচন দেশটিকে 'অচলাবস্থায়' ফেলতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ফলাফলে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ গিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হাতে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ গিয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির হাতে।

বাইডেন ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক সম্পর্ককে বাংলায় 'দা-কুমড়া' সম্পর্ক বলা যায়। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প নিজের পরাজয় মেনে নেননি। ভোট কারচুপির অভিযোগও তোলেন তিনি। এছাড়া সেসময় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হাতে ঐতিহ্য মেনে ক্ষমতা হস্তান্তরও করেননি ট্রাম্প।

সেসময় বিশ্ববাসী দেখেছে—উগ্র সমর্থকরা ট্রাম্পকে 'ক্ষমতায় রাখতে' ক্যাপিটলে হামলা চালতেও দ্বিধা করেনি।

এখন প্রশ্ন সেসব পুরনো দিন কী আবার ফিরে আসতে যাচ্ছে?

গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল এখনো আসেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন'র প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাথমিক ফলাফলে ১০০ আসনের সিনেটে ৫০ আসন পেয়েছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। বিরোধী রিপাবলিকানরা পেয়েছে ৪৯ আসন। এক আসনের ফল এখনো বাকি। সেই আসনে রিপাবলিকানরা জিতলে ২ দলের আসন হবে সমান সমান। এমন পরিস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোট দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের উদ্ধার করতে পারবেন।

প্রতিনিধি পরিষদের চিত্র ভিন্ন। সিএনএন জানিয়েছে, ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদের ৪২৮টির প্রাথমিক ফল প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাম্পের রিপাবলিকানরা পেয়েছেন ২১৮ আসন, বাইডেনের ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ২১০টি। বাকি ৭ আসনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা জিতলেও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২১৮ আসন ইতোমধ্যে বিরোধী রিপাবলিকানদের হাতে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে তোলা হলে বিরোধীরা তা আটকে দিতে পারেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে দাপট দেখালে তাদের পাস করা প্রস্তাব আবার আটকে যেতে পারে সিনেটে। কেননা, সিনেট এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে।

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই

সংবিধান অনুসারে, জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকছেন আরও ২ বছর তথা, ২০২৪ সালে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত। বিরোধী রিপাবলিকানরা, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প চেয়েছিলেন, এই মধ্যবর্তী নির্বাচনেই জনগণকে বাইডেনবিরোধী করে ভোটের বাক্সে বাজিমাত করবেন। তা তিনি পুরোপুরি পারেননি। আবার এটাও বলা যাবে না যে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারণায় খোদ প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন যে, কংগ্রেসের ২ কক্ষের একটি হারানোর আশঙ্কা আছে। হয়েছেও তাই। অন্যদিকে, ট্রাম্পও আছেন বেশ খোশ মেজাজে। ইতোমধ্যে তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে বিরোধী শিবিরে বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে ট্রাম্পবিরোধী বিজয়ী সদস্যদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। রিপাবলিকানদের এই বিরোধের সুযোগ নিতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা।

দলমত নির্বিশেষে এখন পর্যন্ত নির্বাচিত সব সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার এই 'শুভেচ্ছা বাণী'কে শুভ উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। কেননা, বাইডেন জানেন এখন দেশ চালাতে তাকে বিরোধীদের মন জুগিয়ে চলতে হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলেছেন, 'গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন যে রিপাবলিকানদের ব্যাপক বিজয়ের সম্ভাবনা আছে—বাস্তবে তা ঘটেনি।'

তবে তিনি দেখেছেন, কীভাবে ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থীদের জয় হয়েছে। এ ঘটনা শুধু তার জন্যই নয় তার দলের জন্যও 'অশনি সংকেত'।

আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বহু উপদলে বিভক্ত রিপাবলিকানদের এক করা যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে তারা সম্মিলিতভাবে বাইডেনকে 'বিপদে' ফেলার ক্ষমতা রাখেন। এমন সুযোগ আসলে তারা তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন।

প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে রিপাবলিকানরা যেহেতু এখন সরকারের সব কমিটিতে থাকবেন, তাই এ কথা বলা যায় যে, আগামী দিনগুলোয় দেশ চালাতে 'অচলাবস্থা'য় পড়তে পারেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বলা বাহুল্য—বাইডেনের 'অচলাবস্থায়' ভুগতে পারে অন্যান্য দেশও।

 

Comments

The Daily Star  | English
Mahdi Amin, adviser to BNP acting chairperson Tarique Rahman

‘BNP’s 31-point charter embodies public will’

Mahdi Amin, adviser to BNP acting chairperson Tarique Rahman, speaks to The Daily Star

14h ago