যে কারণে ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ‘গণভোট’

রুশদের কবল থেকে মুক্ত করা ইজিয়াম শহরের কাছে সাঁজোয়া গাড়িতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ছবি: এপি
রুশদের কবল থেকে মুক্ত করা ইজিয়াম শহরের কাছে সাঁজোয়া গাড়িতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ছবি: এপি

ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযানে' ৬ মাসের বেশি সময়েও 'দৃশ্যমান সাফল্য না পেয়ে' মস্কো এখন প্রতিবেশী দেশটির পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলোয় 'গণভোটের' আয়োজন করতে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিঝঝিয়ায় আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গণভোটের ঘোষণা দিয়েছেন মস্কোপন্থি বিদ্রোহীরা।

আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ভোটের' মাধ্যমে নির্ধারিত হবে সেই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবে কি না।

গণভোটে বিদ্রোহীরা 'বিজয়ী' হলে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মতো সেসব অঞ্চলকেও রাশিয়া নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করতে পারবে।

ক্রেমলিনপন্থিদের ভাষ্য, গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে পশ্চিমের দেশগুলোকে মস্কো বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলোকে 'রাশিয়ার ভূখণ্ড' হিসেবে মেনে নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে।

তাদের মতে, পশ্চিমের দেশগুলো এই দাবি মেনে না নিলে তারা পারমাণবিক অস্ত্রধারী শত্রুর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ইতোমধ্যে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে বলেন, 'রুশ অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করা অপরাধ। আত্মরক্ষার্থে সব ধরনের শক্তির ব্যবহার বৈধ।'

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশপন্থি বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলে কিয়েভের যুদ্ধকে 'রাশিয়ার ওপর হামলা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে ক্রেমলিন ২০ লাখ রিজার্ভ সেনাদের কাজে লাগাতে পারবে।

পশ্চিমের দাবি, রাশিয়া এখনো পর্যন্ত যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লেও দেশটি রিজার্ভ সেনাদের কাজে লাগায়নি। 'গণভোটের' ফলাফল তাদেরকে সেই সুযোগ এনে দেবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সরকারি সেনাদের প্রবল প্রতিরোধের কারণে রুশ সেনারা 'পরাজিত' হওয়ায় ক্রেমলিন এখন নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে ভোটের 'কৌশল' নিচ্ছে।

মস্কো ইতোমধ্যে লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের সমন্বয়ে গঠিত দনবাস অঞ্চলকে 'স্বাধীন রাষ্ট্র' হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ইউক্রেন ও পশ্চিমের দাবি, রাশিয়া অবৈধভাবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলে রেখেছে।

বর্তমানে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ৬০ শতাংশ ও লুহানস্কের প্রায় পুরো অঞ্চল রুশ সেনা ও রুশপন্থি বিদ্রোহীদের দখলে আছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে সমবেত হয়ে বিশ্ব নেতারা ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের ৪ অঞ্চলে 'গণভোট' আয়োজনের নিন্দা জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা সাংবাদিকদের বলেন, 'রাশিয়া যা খুশি তা করতে পারে। তবে, এতে কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে না।'

এ ছাড়াও, টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, 'ইউক্রেন তার ভূখণ্ডকে স্বাধীন করার অধিকার রাখে। রাশিয়া এ প্রসঙ্গে যাই বলুক না কেন, কিয়েভের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।'

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, হঠাৎ গণভোটের আয়োজন বিশ্ব নেতাদের বিস্মিত করেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, 'এই গণভোটের পরিকল্পনা খুবই হাস্যকর।'

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেছেন, 'পুতিন তখনই তার এই "রাজকীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা" ত্যাগ করবেন, যখন নিশ্চিত হবেন যে তিনি এ যুদ্ধে জিততে পারবেন না।'

জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য দেন শোলজ। ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘের অধিবেশনে বক্তব্য দেন শোলজ। ছবি: রয়টার্স

শোলজের আশঙ্কা, এই যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্যে শোলজ বলেন, 'আমরা রাশিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী শান্তি প্রস্তাব মেনে নেব না। ইউক্রেনের উচিৎ রুশ হামলা প্রতিহত অব্যাহত রাখা।'

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, 'নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণ সদস্য রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্যতাকে হুমকিতে ফেলেছে।'

কিশিদা নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে কিশিদা আরও বলেন, 'ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন হচ্ছে এমন উদ্যোগ, যা জাতিসংঘের সনদের মূল দর্শন ও নীতিগুলোকে পদদলিত করে। এমন আচরণ সহ্য করা উচিত নয়।'

 

Comments