আইসিসির পরোয়ানায় কি পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব

ইউক্রেন থেকে বেআইনিভাবে শিশুসহ বহু মানুষকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার আইসিসির পক্ষ থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার আইসিসির পক্ষ থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ইউক্রেন থেকে বেআইনিভাবে শিশুসহ বহু মানুষকে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার আইসিসির পক্ষ থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়েছে।

আদালতের এই পরোয়ানাকে থোরাই পরোয়া করে এই নির্দেশকে 'টয়লেট পেপার'র সঙ্গে তুলনা করে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বিশ্ববাসীকে কি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়?

অথচ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়ার সময় আদালতের প্রেসিডেন্ট পিওতর হফমানস্কি বলেছেন, আইসিসির সদস্য দেশগুলোয় ভ্রমণের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে।

এখন প্রশ্ন—পুতিনের বিদেশ ভ্রমণ কি সীমিত হয়ে গেল?

পুতিনের বিরুদ্ধে আদালতের আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।

পরোয়ানা দেওয়ার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, 'আমাদের দেশে আইসিসির এই সিদ্ধান্ত কোনো অর্থ বহন করে না। এমনকি, আইনগত দিক থেকেও না।'

একই দিনে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রির পেসকভ গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'আমরা একে আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য মনে করি। রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ আদালতের এই নির্দেশকে স্বীকৃতি দেয় না। আইনের দৃষ্টিতে এটি অন্তঃসারশূন্য।'

গতকাল সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আইসিসির 'রোম বিধান'-এ রাশিয়া সই করেছিল ২০০০ সালে। কিন্তু, দেশটি নিজেকে আইসিসির সদস্য হিসেবে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে মস্কো 'রোম বিধান' থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।

এসব ঘটনা প্রেসিডেন্ট পুতিনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমটি আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছে, 'এটি অপ্রাসঙ্গিক'।

গতকাল মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নিলে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠে। এরপর, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' শুরু করলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আরও জোরালো হয়।

আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর করিম খানের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, পুতিন যতদিন ক্ষমতায় আছেন তত দিন তাকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসার সম্ভাবনা 'খুবই ক্ষীণ'।

মামলাটি প্রমাণসহ সাজানোর প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট পুতিনকে গ্রেপ্তার করা কি সম্ভব?

গতকাল দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সাধুবাদ জানালেও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তার বিচারের সম্ভাবনা খুবই কম।

কেননা, আইসিসি কোনো ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধানকে গ্রেপ্তার বা আদালতে আনার ক্ষমতা রাখে না। তাই কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা না গেলে তার শুনানি কখনই হবে না।

এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে, এই মুহূর্তে রাশিয়ায় এমন কেউ নেই যিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের হাতে কড়া পড়ানোর ক্ষমতা রাখেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মস্কো আইসিসির নির্দেশকে উপেক্ষা করলেও সন্দেহ নেই যে, এই পরোয়ানার কারণে পশ্চিমের দেশগুলোয় পুতিনের গ্রহণযোগ্যতা আরও অনেক কমে যাবে। এমনকি, এটি তার বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করে দেবে।

আইসিসির আইন অনুসারে এর কোনো সদস্য দেশে পুতিন ভ্রমণ করতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করতে সেই দেশ বাধ্য থাকবে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১২৩ দেশ 'রোম বিধানে' সই করেছে। এই তালিকায় রাশিয়ার 'বন্ধু' চীন ও 'শত্রু' যুক্তরাষ্ট্র নেই। অর্থাৎ, ৫ বিশ্বশক্তির মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এই চুক্তিতে সই করেছে।

এমনকি, রাশিয়ার অপর বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও ইরানও এই চুক্তিতে সই করেনি।

রুয়ান্ডা গণহত্যা সংক্রান্ত আইসিসির প্রসিকিউটর ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস কার্যালয়ের প্রধান স্টিফেন র‌্যাপ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, 'এই পরোয়ানা পুতিনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। তিনি বিদেশ ভ্রমণে বের হলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকবে। রাশিয়া পুতিনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ মেনে না চললে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা থেকে দেশটি মুক্তি পাবে না।'

তিনি মনে করেন, 'হয় পুতিনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে নয়তো তিনি এই পরোয়ানা নিয়েই বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Police didn't follow int'l standards while using lethal weapons: IGP

Police failed to adhere to the standards in home, which they have maintained during their UN missions, Mainul Islam said

6h ago