আবারও জিতলেন পুতিন

পশ্চিমে উদ্বেগ, স্বস্তিতে চীন-ভারত-ইরান-উত্তর কোরিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বক্তব্য রাখছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স
রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বক্তব্য রাখছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছেন রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। যার ফলে তার আরও অন্তত ছয় বছর ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত হয়েছে। এই খবর পশ্চিমের অনেক দেশের জন্য উদ্বেগজনক হলেও চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের জন্য সুসংবাদ।

আজ সোমবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। 

পুতিনের জয় পশ্চিমের নেতাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে রাশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নেতার নিরবচ্ছিন্ন প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি।

রয়টার্স জানিয়েছে, পুতিন ৮৭ দশমিক আট শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এটাই সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী রাশিয়ায় কোনো নেতার সবচেয়ে বড় ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ের রেকর্ড। 

কমিউনিস্ট প্রার্থী নিকোলাই খারিতনভ চার শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। নবাগত ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ তৃতীয় ও কট্টর-জাতীয়তাবাদী নেতা লিওনিদ স্লাতস্কি চতুর্থ স্থান পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অপর কয়েকটি দেশ বলছে এই নির্বাচন অবাধ ও মুক্ত ছিল না, কারণ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাবন্দি করা হয়েছে এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়েছে।

২০২৪ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বক্তব্য রাখছেন পুতিন। ছবি: রয়টার্স
২০২৪ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বক্তব্য রাখছেন পুতিন। ছবি: রয়টার্স

চীনসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থা মেনে নিতে চায় না। মূলত এই দেশগুলোই পুতিনের বিজয়ে উপকৃত হয়েছে বলে ভাবছেন বিশ্লেষকরা।

চীনের নেতা শি জিনপিং দুই বছর আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ক্রেমলিনের আগ্রাসনের শুরু থেকেই পুতিনের পাশে ছিলেন। তিনি দুই দেশের পূর্বঘোষিত 'সীমাহীন' বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে সরে আসেননি।

শি'র এই অবস্থানের কারণে চীনকে বেশ ভালো ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও, তিনি পুতিনকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখেন। এই দুই নেতা মনে করেন, বর্তমান বিশ্বে ওয়াশিংটনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম-নীতি ও মূল্যবোধ আধিপত্য বিস্তার করছে, যা অন্যায়। মস্কোর সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক চীনকে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরের মতো বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ দেয়, যা গুরুত্বপূর্ণ।

পুতিনের বিজয় অন্যান্যদের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জন উনের জন্যেও স্বস্তির। সম্প্রতি তিনি ক্রেমলিনে এসে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন।

মার্কিন বিধিনিষেধে জর্জরিত ইরানও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তার ঘটাচ্ছে। রাশিয়ার কাছে ড্রোন ও গোলাবারুদ বিক্রি করে ইরান। যার ফলে পুতিনের শাসনামল ইরানের জন্যেও ভালো খবর।

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং ইউক্রেনে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন কমায়নি দেশটি, বিশেষত, ছাড় দেওয়া মূল্যে তেল কেনার ক্ষেত্রে।

পশ্চিমে পুতিনকে একজন স্বৈরাচারী শাসক ও হত্যাকারী হিসেবে চিত্রায়ন করা হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার বলেন, পুতিন চিরজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান এবং এই ভোট অবৈধ।

পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে পশ্চিমের বিরুদ্ধে শতবর্ষ পুরনো যুদ্ধের অংশ হিসেবে দেখেন। পুতিন দাবি করেন, স্নায়ুযুদ্ধের পর মস্কোর প্রভাব কমিয়ে রাশিয়াকে অপমান করা হয়েছে।

সাবেক কেজিবি এজেন্ট পুতিন ভোটগ্রহণ শেষে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: রয়টার্স
সাবেক কেজিবি এজেন্ট পুতিন ভোটগ্রহণ শেষে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: রয়টার্স

পশ্চিমের গোয়েন্দা প্রধানরা বলেছেন, এমন এক সময় রাশিয়ার নির্বাচন হয়েছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ ও সার্বিকভাবে এই যুদ্ধের পশ্চিমের অবস্থান এক ক্রান্তিলগ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেনকে সামরিক সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়টি মার্কিন রাজনীতিতে বেশ বড় অনুঘটক হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেকে ভাবছেন এ বিষয়টি নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব রাখতে পারে।

২০২২ থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়াই সফল বলা যায়। ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে রয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

5h ago