লুলার বিজয়ের পর ব্রাজিলে প্রশ্ন; বলসোনারো কোথায়?
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুলা দা সিলভার বিজয় ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে গেলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশটির জনমনে প্রশ্ন জেগেছে—কোথায় তিনি? অনেকে আবার আশঙ্কা করছেন, দেশটি কোনো রাজনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে না তো।
গতকাল সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারণা করা হচ্ছে চরম ডানপন্থি বলসোনারো হয়তো তার পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। তিনি নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে—লুলা পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং জায়ের পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। নিয়ম অনুসারে, আগামী ১ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করবেন লুলা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বলসোনারো হয়তো এই স্বল্প ব্যবধানকে চ্যালেঞ্জ করার পথ বেছে নেবেন। তার ঘনিষ্ঠজনরা পরাজয় মেনে নিলেও এখনো তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়া থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদকে তেরেসা বো বলেছেন, দেশটির পার্লামেন্টের (কংগ্রেস) ২ কক্ষের প্রধানরা লুলার বিজয় মেনে নিয়েছেন। ইলেক্ট্রোরাল ট্রাইব্যুনালের পরিচালক বলেছেন, তিনি বলসোনারোর সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করছেন, বলসোনারো নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেউই জানেন না, বলসোনারো কখন এ নিয়ে কথা বলবেন। একদিকে, তিনি ফল মেনে না নেওয়ার কথাও বলছেন না, অন্যদিকে লুলাকেও কিছু বলছেন না।
তেরেসা বো জানান, বলসোনারোর বেশ কয়েকজন মন্ত্রী তাকে নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল যে, বলসোনারো সোমবার কথা বলবেন। কিন্তু, এক মন্ত্রী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের আগে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবেন না।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার ও বলসোনারোর মিত্র আর্তুর লিরা গত রোববার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, 'সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছার বিরোধিতা করা উচিত না।'
বলসোনারোর বড় ছেলে সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো টুইটে তার বাবার সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, 'আমরা মাথা তুলে দাঁড়াবো। ব্রাজিলকে কারও হাতে ছেড়ে দেবো না।'
ব্রাজিলের ফেডারেল হাইওয়ে পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাক মালিক ও চালকরা দেশটির ১৬ প্রদেশে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বলসোনারোর পরাজয় মেনে নিতে পারেননি।
বিক্ষোভকারীদের অনেকে পণ্য সরবরাহে বাধা দেওয়ার হুমিক দিচ্ছেন। কেউ কেউ 'সেনা হস্তক্ষেপের' দাবিও তুলছেন। তারা লুলাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেবেন না বলেও জানাচ্ছেন।
অনেকে মনে করছেন, বলসোনারোপন্থি ব্যবসায়ীরা হয়তো এই অবরোধে সমর্থন জোগাচ্ছেন।
বলসোনারোর 'ঘাঁটি' হিসেবে পরিচিত সান্তা কাতারিনা ও মাতো গ্রোসো দো সুল প্রদেশে বিক্ষোভকারীরা বেশি সক্রিয় আছেন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়ায় লুলা দা সিলভা বর্তমান প্রেসিডেন্ট বলসোনারো সমালোচনা করেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাই অনেকের আশঙ্কা, নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে ব্রাজিল নতুন রাজনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে না তো?
Comments