গাজায় ৬ সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব, আজ কায়রোতে হামাস নেতার সঙ্গে বৈঠক

গাজার উদ্দেশে গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলের হাওউইটজার কামান। ছবি: এএফপি
গাজার উদ্দেশে গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলের হাওউইটজার কামান। ছবি: এএফপি

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন। আজ মিশরের কায়রোতে এই বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। 

এএফপি এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হামাস এ মুহুর্তে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ছয় সপ্তাহের বিরতির নতুন প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছে। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বশেষ উদ্যোগ হিসেবে হামাসকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল চ্যানেলে টুয়েলভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া এই চুক্তির সারসংক্ষেপ ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে সোমবার উপস্থাপন করেছেন। সেখানে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ জন অসুস্থ, আহত ও বয়স্ক জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৩৫ দিন যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে।

নেতানিয়াহু এবং মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া। ছবি: ইসরায়েলের সরকারী প্রেস কার্যালয়/কোবি গিডিওন
নেতানিয়াহু এবং মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া। ছবি: ইসরায়েলের সরকারী প্রেস কার্যালয়/কোবি গিডিওন

পরবর্তীতে আরও এক সপ্তাহ (মোট ছয় সপ্তাহ) যুদ্ধবিরতি চালু থাকবে। সে সময় মধ্যস্থতাকারীরা দ্বিতীয় পর্যায়ের জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবেন। সে সময় তরুণ যুবক ও সেনারা মুক্তি পেতে পারেন।

ইতোমধ্যে নেতানিয়াহু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব নাকচ করেছেন।

তিনি 'হাজারো' ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু জানান, যেকোনো মূল্যে জিম্মিদের মুক্ত করতে চান না তিনি। ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, বা এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য অর্জনে বাধার সৃষ্টি হবে, এমন কোনো চুক্তিতে যাবেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করা নয়।

'যুদ্ধের একটি লক্ষ্য অর্জন করতে যেয়ে বাকি লক্ষ্যগুলো বিসর্জন দেওয়া সম্ভব নয়', বলেন নেতানিয়াহু।

চ্যানেল ১২ জানায়, জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিধিরা নেতানিয়াহুর এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন।

এএফপি জানিয়েছে, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নসের অংশগ্রহণে গত সপ্তাহান্তে প্যারিসে চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে। তবে বৈঠকে মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে কে বা কারা উপস্থিত থাকবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

হামাসের এক সূত্র এএফপিকে তিন পর্যায়ের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি চালু থাকবে। এসময় গাজায় আরও বেশি পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ। ফাইল ছবি: এএফপি
হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ। ফাইল ছবি: এএফপি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানান, প্রথম পর্যায়ে শুধু নারী, শিশু ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী অসুস্থ পুরুষদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, 'ইসরায়েলি বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা' ও আরও কয়েক পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে।

গাজা পুনর্নিমাণের বিষয়টিও আলোচনায় ও চুক্তিতে উল্লেখ করা হবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। এ মুহুর্তে ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার মূল শহর খান ইউনিসকে লক্ষ্য করে স্থল ও বিমানহামল চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির দাবি, খান ইউনিসে হামাসের শীর্ষ নেতারা লুকিয়ে আছেন।

ইসরায়েলের দাবি, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস গাজার হাসপাতালগুলোর নিচে অবস্থিত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হামলা পরিচালনা করে এবং চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। তবে সংগঠনটি এই দাবি প্রত্যাখান করেছে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ১৪০ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক ব্যক্তি। হামাসের যোদ্ধারা প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করেন ,যাদের ১৩২ জন এখনো গাজায় আছেন। তবে ধারণা করা হয়, তাদের মধ্যে ২৯ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

রাফাহ অঞ্চলে যুদ্ধ নিরসনের জন্য বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: এএফপি
রাফাহ অঞ্চলে যুদ্ধ নিরসনের জন্য বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: এএফপি

এই হামলার প্রতিশোধ নিতে হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার করে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরায়েলি সরকার। সেদিন থেকে শুরু হয় গাজার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা। শুরুতে বোমাহামলা থেকে পরবর্তীতে স্থল ও নৌবাহিনীও এতে যোগ দেয়।

এই নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২৬ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার পুনর্নিমাণে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। ইসরায়েলের হামলায় অঞ্চলটি 'বসবাসের অযোগ্য' হয়ে পড়েছে, কারণ সেখানে অর্ধেকের বেশি অবকাঠামোকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago