‘হামাসের হামলা শূন্য থেকে ঘটেনি’ বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যায় মর্মাহত জাতিসংঘ মহাসচিব

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ছবি: রয়টার্স

নিরাপত্তা পরিষদে গতকাল 'হামাসের হামলা শূন্য থেকে ঘটেনি' উল্লেখ করে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তার 'ভুল ব্যাখ্যা' দেখে 'মর্মাহত' হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

একইসঙ্গে ব্যাখ্যাটিকে 'মিথ্যা' বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

আজ বুধবার সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্টেকআউটে আজ এক তাৎক্ষণিক উপস্থিতিতে গুতেরেস তার গতকালের বক্তব্যটিকে পুনরায় পাঠ করেন।

এসময় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে 'ইসরায়েলে হামাসের ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ এবং নজিরবিহীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের' নিন্দা করেছেন।

একইসঙ্গে গুতেরেস স্বীকার করেন যে, তিনি 'ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশার কথাও বলেছেন'। পাশাপাশি তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি 'হামাসের ভয়ঙ্কর আক্রমণকে ন্যায্যতা দিতে পারে না'।

উল্লেখ্য, গতকাল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ এক অধিবেশনে গুতেরেস বলেন, 'আমাকে খোলাসা করতে দিন: সশস্ত্র সংঘাতের কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের ঊর্ধ্বে নয়।'

এসময় গাজায় আরও বেশি ত্রাণ সহায়তা প্রবেশের অনুমতির জন্য জোরারোপ করেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, 'গাজায় জাতিসংঘের জ্বালানি সরবরাহ কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সেটা হবে আরেকটি বিপর্যয়। এই মহাকাব্যিক দুর্ভোগ লাঘবে, ত্রাণ সহায়তা সহজ ও নিরাপদ করতে এবং জিম্মিদের মুক্তির সুবিধার্থে আমি অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।'

তিনি বলেন, 'এটাকেও স্বীকৃতি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, হামাসের হামলা শূন্য থেকে ঘটেনি।'

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশে গুতেরেস বলেন, 'ফিলিস্তিনি জনগণ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে।'

'তারা দেখেছে যে, তাদের ভূমি প্রতিনিয়ত বসতি দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে ও সহিংসতায় জর্জরিত, তাদের অর্থনীতি স্তিমিত, তাদের মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং তাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত। তাদের এমন দুর্দশায় রাজনৈতিক সমাধানের আশা লোপ পেয়েছে', বলেন তিনি।

জাতিসংঘ মহাসচিব অবশ্য বলেন, ফিলিস্তিনিদের এই দুঃখগাথা কোনোভাবেই হামাসের 'ভয়াবহ হামলাকে' ন্যায্যতা দিতে পারে না, যেমন করে 'ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিত শাস্তি' ন্যায্য হতে পারে না।

'এই ক্রান্তিলগ্নে বেসামরিকদের সম্মান ও সুরক্ষার মৌলিক নীতিগুলোর বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া অত্যাবশ্যক', যোগ করেন তিনি।

গাজায় এ পর্যন্ত যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়ে গুতেরেস বলেন, 'এটি প্রয়োজনের সাগরে সাহায্যের একটি ফোঁটা মাত্র।'

এরপরই নিরাপত্তা পরিষদে এই বক্তব্যের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের নিন্দা করেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন।

নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ অধিবেশন চলাকালেই গুতেরেসের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'মহাসচিব, আপনি কোন পৃথিবীতে বাস করেন?'

এ ছাড়াও, এলি কোহেন জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে তার পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন।

এতেই ক্ষান্ত হননি ইসরায়েলের কর্তাব্যক্তিরা। গুতেরেসের বক্তব্যকে 'আপত্তিকর' উল্লেখ করে তার পদত্যাগও দাবি করে বসেন তারা।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিওর হাইয়াত বলেন, 'আপত্তিকর' মন্তব্যের জন্য গুতেরেসকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। 

তিনি বলেন, 'গুতেরেস তার বক্তব্যে সন্ত্রাসবাদকে ন্যায্যতা দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের (ইসরায়েলি) পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বরং তাদেরই দোষারোপ করেছেন। ইসরায়েলিরা এমন নৃশংসতার শিকার হয়েছেন, যা তারা হলোকাস্টের পর আর দেখেননি।'

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলার্ড এরডানও গুতেরেসের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

গিলার্ড এরডান তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, 'ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়ংকর কর্মকাণ্ডের পেছনে যারা যুক্তি দেখাতে চান, তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো যৌক্তিকতা নেই।'

পরবর্তীতে জাতিসংঘকে 'শিক্ষা' দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রাখবে ইসরায়েল।

গিলার্ড এরডান আর্মি রেডিওকে বলেন, 'জাতিসংঘ মহাসচিবের এসব মন্তব্যের কারণে আমরা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের ভিসা দেবো না।'

Comments

The Daily Star  | English

Israeli military official: estimated to have struck two thirds of Iran's missile launchers

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

17h ago