‘মিম’ এত জনপ্রিয় কেন?

‘মিম’ এত জনপ্রিয় কেন?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় কিছু মিম। ছবি: স্টার গ্রাফিক্স

আনন্দের খোরাক জোগাতে যুগে যুগে আমাদের মাঝে এসেছে হাস্যরসের নানা উপাদান। বর্তমান সময়ে এরকম একটি উপাদান মিম।

১৯৭৬ সালে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার 'দ্য সেলফিশ জিন' গ্রন্থে প্রথম 'মিম' শব্দের ব্যবহার করেন। মিম হাস্যরসের এমন একটি উপাদান যা অনুকরণের মাধ্যমে মস্তিষ্ক থেকে মস্তিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টারনেটের ঊর্বর যুগে মিম হয়ে উঠেছে তুমুল জনপ্রিয়। কিন্তু তার পেছনে কারণ কি শুধু হাসি, নাকি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু, আজকের লেখায় জানব সেটা।

জাগতিক বাস্তবতা থেকে মুক্তি

বাস্তবতা ও জীবন হাত ধরে চলাফেরা করে। কিন্তু তাই বলে সারাক্ষণ এমন বাস্তবাদী ভাবনায় ডুবে থাকার কোনো মানে হয় না। জীবনের ভঙ্গুর দিনগুলোকে যদি হাসির ছলে দেখা যায়, ভাবা যায়; এ আর এমন কী, ক্ষতি তো কিছু নেই। মিম যেন সে কাজটিই করে যাচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে এগিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বলেন, 'রূঢ় বাস্তবতাকে শিল্পের বিভিন্ন ধারায় কৌতুক কায়দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা সবসময় ছিল। এখন যা বিভিন্ন মাধ্যমে মিম নামে পরিচিতি লাভ করেছে।'
 
কঠিন কোনো দিনকে হাসির আদলে দেখতে পারা সাহসী ও দরকারি কাজ। কাজটি সহজ করছে মিম। 

সাংস্কৃতিক তথ্য প্রচার ও সামাজিক ঘ্রাণ

আধুনিকতার স্পন্দন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ থেকে মানুষে দূরত্ব বাড়ছে। সে কথা মহীনের ঘোড়াগুলির গানে (তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে...) কিংবা যাযাবরের দৃষ্টিপাত উপন্যাসে (বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ) খেয়াল করা যায়। কিন্তু বর্তমানে মিম সে সামাজিক ঘ্রাণ ফিরিয়ে আনার প্রয়াস করছে এবং পারছে ভালোভাবেই। দুঃখ যে কারও একার হয় না, তা বহুভাবে বহু রূপে সবার কাছে ধরা দেয়; এমন সত্যিও মিম জানান দিচ্ছে।
 
যেমন কিছুদিন আগে ব্যাপক প্রচার পাওয়া মিম; 'আসকে আমার মন ভালো নেই।' এই মিমটির মধ্যে বিভিন্ন জন তার স্ব স্ব অনুভূতি মিশিয়ে নিজের ইন্টারনেট ওয়ালে প্রকাশ করে। আর এভাবে মন ভালো নেই কথাটির মতো সিরিয়াস ব্যাপারটিও কৌতুক হয়ে সবার সঙ্গে মিশে যায়। 

অন্যদিকে, গত হওয়া দিনের কোনো সিনেমা কিংবা নাটক কিংবা শিল্পের উপাদান বর্তমানের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা মিম, সংস্কৃতির প্রচারেও ভূমিকা রাখছে। পুরনোর সঙ্গে বর্তমানের এই মেলবন্ধন কিংবা কারও একক আবেগ মিশ্রিত কথার সঙ্গে আরও অনেকের আবেগ মিলে যাওয়া, এমন কঠিন কাজটিও সহজ হচ্ছে এর মাধ্যমে।

শেয়ার উপযোগিতা ও বিভিন্ন দিক হতে দেখা

নানাবিধ চাপে দীর্ঘক্ষণ স্থিরচিত্তে কিছু দেখার সক্ষমতা কমছে। একটু বড় লেখা, বুদ্ধি খাটিয়ে মূল কথা জানার চেষ্টা ইত্যাদির প্রতি আগ্রহ কমছে। সে জায়গায় মিম অল্পতে অনেক কিছু দেওয়ার ফলে শেয়ার হচ্ছে দ্রুত। অন্যদিকে যেকোনো বিষয়কে বিভিন্ন দিক হতে দেখার গুরুত্বপূর্ণ কাজটিও মিম করছে। মিম যেন সংক্ষেপে বার্তা দিচ্ছে; আটকে থেকো না, বেরিয়ে যাও। 

মতামত ও প্রতিবাদে

সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক অসংগতিতে সবাই মতামত কিংবা প্রতিবাদ জানাতে চায়। কিন্তু সমালোচনা কিংবা আলোচনা করার মতো অবস্থা সব সময় থাকে না। এ ক্ষেত্রে সবার মতামত প্রচার করা বা কারও মতামতে অন্যের সমর্থনের ব্যাপারটি মিম সহজ করে দিচ্ছে। 

যেমন, কিছুদিন আগে একটি মিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ প্রচার পায়; 'শাহীন ... পোলারে ধরে ফেল' নামে। হাসির ছলে অনেকেই তখন অর্থলোভী, ভণ্ড নেতা বা বিভিন্ন জনকে ইঙ্গিত করে মিমটি প্রকাশের মাধ্যমে তার নিজস্ব ভাবনা প্রকাশ করে।

সহজে তৈরি

সৃজনশীল কিছু তৈরি করতে সবার ভালো লাগে। কিন্তু ঠিক কীভাবে কী করা যায় এমনটা ভেবে আর করা হয়ে ওঠে না। মিম সবাইকে নতুন কিছু তৈরিতে সহজভাবে সাহায্য করছে। এখন যে কেউ একটি ছবির সঙ্গে তার শব্দ ও ভাবনার সংযোগ ঘটিয়ে তৈরি করতে পারে মিম। তবে এ বিষয়ে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লিমন শিফম্যানের ভাষ্য, 'হাসির খোরাক যোগানো কোনো ছবি ছড়িয়ে পড়লেই তাকে মিম বলা যায় না। বরং, যেকোনো একটি ব্যাপারকে কেন্দ্র করে যখন সবাই তার নিজ নিজ ভার্সন তৈরি করে তখন তা মিম হয়ে ওঠে।'

অন্যদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, মানুষের মন ভালো রাখতে ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ জরুরি। আর এই হরমোন নিঃসৃত হয় হাসি বা আনন্দ থেকে। আবার প্রাকৃতিক ব্যথানাশক ও ভাব পরিবর্তনে সহায়ক অ্যান্ড্রোফিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটে হাস্যোজ্জ্বল বা সুখকর মুহূর্ত হতে। যেহেতু মিম এমন মুহূর্তই উপহার দেয়, তাই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একের পর এক মিম খুঁজতে থাকে। 

আবার মিমের জনপ্রিয়তার পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বয়স। যেখানে প্রায় সব শিল্পের ক্ষেত্রেই বয়সের কিছু ব্যাপার থাকে, কিন্তু একটি মিম যেকোনো বয়সের মানুষের কাছে সমানভাবে সমাদৃত বা প্রাসঙ্গিকতা অর্জন করতে পারে। 

জনপ্রিয়তা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবসময় ভালো কিছু জনপ্রিয়তা পায়, তা বলা যায় না। মিমের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, মিডিয়াম ডট কম, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস 

 

Comments

The Daily Star  | English

SC orders EC to restore Jamaat's registration

The Appellate Division of the SC scrapped a High Court verdict that had declared Jamaat's registration with the EC as a political party "illegal"

59m ago