বিতর্কের জেরে নিজের রেস্তোরাঁয় ভেগান নিষিদ্ধ করলেন যে শেফ

সেলিব্রিটি শেফ জন মাউন্টেন। ছবি: জন মাউন্টেনের আনুষ্ঠানিক ইনস্টাগ্রাম পেজ
সেলিব্রিটি শেফ জন মাউন্টেন। ছবি: জন মাউন্টেনের আনুষ্ঠানিক ইনস্টাগ্রাম পেজ

ভেগানরা নিরামিষভোজী, কোনো ধরনের মাংস খায় না এবং সকল ধরনের প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। বাকিরা নন-ভেগান নামে পরিচিত। এই ভেগান ও নন-ভেগানদের অনলাইনে বাকবিতণ্ডার জের ধরে একজন শেফ তার রেস্তোরাঁ থেকে ভেগানদের চিরতরে নিষিদ্ধ করেছেন।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যের জন্ম নেওয়া তারকা শেফ জন মাউন্টেন এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, 'দুঃখজনকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কারণে ভেগানদের এখন থেকে ফায়ার থেকে নিষিদ্ধ করা হল।'

অস্ট্রেলিয়ার পার্থ অঙ্গরাজ্যের উত্তরে কনোলি শহরতলিতে মাউন্টেনের 'ফায়ার' নামে একটি রেস্তোরাঁ আছে।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিও ব্যাখ্যা করেছেন, যারা মাংস খান না, তাদের কেন তিনি সেখানে যেতে নিষেধ করছেন। এ বিষয়ে তিনি তার রেস্তোরাঁয় খেতে আসা এক গ্রাহকের উদাহরণ দেন।

তিনি বলেন, 'একজন অল্পবয়সী মেয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায় সে রেস্তোরাঁয় আসছে এবং জিজ্ঞাসা করে যে সেখানে ভেগান অপশন আছে কিনা।'

উত্তরে মাউন্টেন তাকে জানান, তাদের কিছু সবজির ডিশ আছে এবং ইতালীয় ডাম্পলিং নচ্চি আছে। কিন্তু তিনি এই গ্রাহকের অনুরোধের বিষয়টি তার অন্যান্য কর্মীদের জানাতে ভুলে যান, কারণ তিনি সেদিন একটি অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

প্রত্যাশা অনুযায়ী ভেগান খাবার না পেয়ে তরুণী ফেসবুক মেসেঞ্জারের 'ডাইরেক্ট মেসেজ' সেবার মাধ্যমে রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন।

পার্থ নাওয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তরুণী ফেসবুক মেসেজে বলেন, 'আমার জন্য একমাত্র (ভেগান খাবারের) বিকল্প ছিল সবজির ডিশ। এটা খেতে মোটামুটি ভাল ছিল, কিন্তু পেট ভরার মতো যথেষ্ট খাবার ছিল না। এ খাবারের দাম ৩২ ডলার জানতে পেরে আমি হতবাক হয়ে যাই।'

তিনি আরও বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সব রেস্তোরাঁর উচিৎ সব ধরনের গ্রাহকের জন্য খাবারের ব্যবস্থা রাখা। আপনি যদি উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার মেনুতে রাখতে না পারেন, তবে তা শেফ হিসেবে আপনার সীমাবদ্ধতাকে প্রমাণ করে।'

'আমি আশা করছি আপনাদের মেনুতে কিছু পরিবর্তন আসবে। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে কনোলিতে বসবাস করেছি এবং একই ভবনে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ খুলতে ও বন্ধ হয়ে যেতে দেখেছি। কোনোটিই বেশিদিন টেকেনি', যোগ করেন সেই গ্রাহক। 

এই মেসেজের উত্তরে রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিরামিষভোজী বা ভেগানরা খুবই ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ঐ এলাকায় (উত্তরের শহরতলী) তাদের সংখ্যা আরও কম। এরপর বিদ্রূপের সুরে রেস্তোরাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনাকারী ব্যক্তি (কথার সুরে মনে হয়েছে তিনি মাউন্টেন নিজেই) বলেন, 'আপনার নেতিবাচক রিভিউর জন্য ধন্যবাদ। নির্দ্বিধায় আপনার খারাপ অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে বলতে থাকুন এবং আমি আপনাকে আমার রেস্তোরাঁয় আর কখনো দেখতে চাই না।'

উত্তরে সেই ভেগান মহিলা বলেন, 'এটা খুবই শিশুসুলভ আচরণ হচ্ছে।'

জবাবে মাউন্টেন জানান, 'আপনি এবং আপনার ভেগান বন্ধুরা অন্য কোনো রেস্তোরাঁয় ভেগান খাবার উপভোগ করতে পারেন। আপনাদেরকে নিষিদ্ধ করা হল।'

এই ধরনের আচরণ শিশুসুলভ বলে রেস্তোরা থেকে আরও বলা হয় যে, 'আপনি এবং আপনার সমস্ত ভেগান সঙ্গীরা সবাই অন্য জায়গায় গিয়ে আপনার খাবারগুলো উপভোগ করতে পারেন। আপনারা এখন থেকে নিষিদ্ধ।'

গুগল রিভিউস এ অপর এক অসন্তুষ্ট ভোক্তার পোস্টের উত্তরে তিনি এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আবারো জানান।

'আপনারা, ভেগানরা একত্রিত হয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। আমি আপনাদের শুভ কামনা জানাই। দেখা যাক আমার প্রকৃতি ভোক্তারা কি ভাবেন', যোগ করেন তিনি।

'এবং এখন থেকে আমার রেস্তোরাঁয় ভেগানদের নিষিদ্ধ করা হল। আপনার বাজে রিভিউর জন্য ধন্যবাদ এবং দয়া করে কুরামবাইন শহরতলীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকুন।'

এই নোটিশ ঝুলিয়ে ভেগানদের নিষিদ্ধ করেন জন মাউন্টেন। ছবি: সংগৃহীত
এই নোটিশ ঝুলিয়ে ভেগানদের নিষিদ্ধ করেন জন মাউন্টেন। ছবি: সংগৃহীত

এই কথোপকথনের জের ধরে মাউন্টেনের পক্ষে ও বিপক্ষে গুগল রিভিউসে ৫ স্টার ও ১ স্টার রিভিউ দেয়ার হিড়িক পড়ে।

মাউন্টেন পার্থ নাউকে জানান, নেতিবাচক রিভিউ ব্যবসার ক্ষতি করে। তিনি ভেগানদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

তবে তার অবস্থানের পক্ষেও অনেক সমর্থক রয়েছেন, যারা রেস্তোরাঁটিকে ৫ তারকা রেটিং দেয়।

শেফ জন মাউন্টেন গত ৭ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেছেন। যুক্তরাজ্যে তিনি একজন সেলেব্রিটি শেফ ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া আসার আগে তিনি 'গ্রেট ব্রিটিশ মেনু' এবং 'শেফ রেস ইউকে ভার্সেস ইউএস' নামক রান্নার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারে বিখ্যাত ফ্যাট ডাক রেস্তোরাঁয় রন্ধনশিল্পী হেস্টন ব্লুমেনথালের পাশাপাশি লন্ডনের মেফেয়ারে ব্র্যাশ মিশেলিন থ্রি-স্টার রেস্তোরাঁ মার্কো পিয়ের হোয়াইট-এও কাজ করেছেন।

তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল

গ্রন্থনায়: আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Election in first half of ’26 is not unreasonable, but Dec ’25 is doable

Whatever the differing stances of various political parties may be, people in general would prefer to exercise their franchise.

14h ago